Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকারের তৎপরতা চোখে পড়ে না

ঘরের কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ তেমন একটা দেখা যায় না। ছবি: একশনএইড বাংলাদেশের সৌজন্যে

নারীর মজুরিবিহীন গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি দিতে বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে গবেষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রচার চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে বাজেট বক্তৃতাসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সরকারের মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকেরা মুখে বিষয়টি নিয়ে নানান আশ্বাস দিলেও বাস্তবে সরকার বিষয়টি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি।

সরকারের সংশ্লিষ্ট তিনটি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানালেন, গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতির বিষয়ে তাঁরা কোনো নির্দেশনা পাননি। বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তাই কোনো কাজও শুরু হয়নি। বলতে গেলে সরকার বিষয়টিতে খুবই নিষ্ক্রিয়।

বাংলাদেশে নারীরা গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের জন্য কোনো মজুরি পান না। স্বীকৃতি বা মূল্যায়ন কোনোটিই নেই। জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তিসহ এ কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার নির্ভরযোগ্য কোনো পদ্ধতিও বের করা হয়নি। সরকার বিভিন্ন সময় নারীর ক্ষমতায়নে এ ধরনের কাজের মূল্যায়নের কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা নেই।

২০১১ সালের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নে ২০১৩ সালে সরকার জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এ নীতিতে প্রবৃদ্ধিতে কৃষি, গার্হস্থ্য শ্রমসহ নারীর সব শ্রমের সঠিক প্রতিফলন ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে বা বাস্তবায়নের উপায় বলা নেই। এ ছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন সভা-সেমিনারে। তাঁর আমলের বাজেট বক্তৃতাতেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, শিশুরা মাতৃভাষায় কথা শেখে, মায়ের কাছে শেখে লেখা। শিশুকে স্নেহ, লালন-পালনসহ প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ায় মায়ের এ শ্রম একান্তই মজুরিবিহীন। জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে নারীর এ ত্যাগ বহুল প্রচারের মাধ্যমে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা সৃষ্টিতে সচেষ্ট থাকবে এ মন্ত্রণালয়।

গৃহস্থালির কাজের স্বীকৃতি দিতে সরকারের কাছে একশনএইড বাংলাদেশ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন সময় দাবি জানাচ্ছে। গত বছর অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান ‘গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি, পুনর্বণ্টন ও হ্রাস: বাংলাদেশে নীতিকাঠামোগত দিক’ শীর্ষক একটি পলিসি ব্রিফ প্রণয়ন করেন। এতে বলা হয়েছে, সেবামূলক ও জীবন ধারণের জন্য জন্য আবশ্যক যে কাজগুলো নারীরা নিয়মিত করেন, তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর ক্ষমতায়ন এবং লৈঙ্গিক বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজকে অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এতে। এই পলিসি ব্রিফে বলা হয়, বাংলাদেশের কোনো আইন বা নীতিতে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজকে গণ্য করা হয়নি।

অধ্যাপক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) গৃহস্থালির সেবামূলক কাজকে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বিষয়কে সামনে নিয়ে আসছে, আলোচনা করছে। এখন এর স্বীকৃতিতে সব মহলের উপলব্ধি ঘটতে হবে এবং আলোচনা ও গবেষণা করতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও তৈরি করতে হবে।

২০১২ সাল থেকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন গৃহস্থালির কাজসহ মজুরিবিহীন কাজের মাধ্যমে নারীর অবদান তুলে ধরার জন্য ‘মর্যাদায় গড়ি সমতা’ শীর্ষক একটি প্রচারাভিযান শুরু করে। ২০১৪ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ যৌথভাবে ‘জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অবদান নিরূপণ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ গবেষণা করে। এ ছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ কাজের ছায়া মূল্য ব্যবহার করে প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে দেখিয়েছে, জিডিপি অন্তর্ভুক্ত হয় না এমন কাজ, যা নারীরা করছেন, তার আনুমানিক বার্ষিক মূল্য (২০১৩-১৪ অর্থবছর) জিডিপির প্রায় ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশের সমপরিমাণ।

তবে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) শামসুল আলম বললেন, গৃহস্থালির মজুরিবিহীন সেবামূলক কাজ পরিমাপ করার কোনো পদ্ধতি বের করা হয়নি। কোনো বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বীকৃত কোনো পদ্ধতির প্রস্তাব আনা হলে তা বিবেচনা করা হবে। তবে তা নির্ভরযোগ্য বা বাস্তবায়নযোগ্য পদ্ধতি হতে হবে। নারীর উৎপাদন ও সেবামূলক—দুটি কাজের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাঁদের কাছে গৃহস্থালির সেবামূলক নজিরবিহীন কাজবিষয়ক কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে তাঁরা কাজ শুরু করবেন।

বিষয়টি নিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়েও এ পর্যন্ত দৃশ্যমান কিছু হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার বললেন, তাঁর কাছে এ বিষয়ে কোনো পর্যায় থেকে এখনো কোনো প্রস্তাব আসেনি বা আলোচনা হয়নি।

এসডিজির লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও আইন) সাইদা নাইম জাহান বললেন, চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, দেশে নারীরা পুরুষের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি মজুরিবিহীন কাজ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্পে নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।

‘গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি, পুনর্বণ্টন ও হ্রাস: বাংলাদেশে নীতিকাঠামোগত দিক’ শীর্ষক পলিসি ব্রিফের সুপারিশে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজকে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তিকরণ, জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্তি, নারীর কর্মঘণ্টা কমাতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি প্রণয়নের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।