Thank you for trying Sticky AMP!!

সাঁতারের সাগর

আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাঁতারে একাই ১২টি স্বর্ণপদক পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহফিজুর

বন্ধুদের কেউ তাঁকে ডাকেন ‘জলমানব’ আবার কেউ বা তুলনা করেন মাইকেল ফেল্প্সের সঙ্গে। কিন্তু তিনি বিনয়ে মাথা নিচু করে বলেন, ‘না, আমি অতবড় কেউ নই।’ তবে ২৫ ও ২৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে তাঁর সর্বশেষ সাফল্যের পর ‘জলমানব’ তকমাটি যেন মেনে নিতেই হচ্ছে তাঁকে। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১২টি ইভেন্টের সবগুলোতেই তিনি পেয়েছেন স্বর্ণপদক!
এই জলমানবের নাম মাহফিজুর রহমান। পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। তবে তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে বন্ধুমহল ও পরিবারে সবাই সাগর নামে ডাকে। তাঁর এই বিস্ময়কর কাণ্ড কিন্তু এবারই প্রথম নয়, ২০০৩ সালে বয়সভিক্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় যখন তিনি দুটি সোনাসহ রুপা আর ব্রোঞ্জ মিলে জেতেন ছয়টি পদক, তখন তিনি পড়েন ষষ্ঠ শ্রেণিতে! আর ২০০৫ সালে তো ২১তম জতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় দেশের ‘সর্বকনিষ্ঠ সাতারু’ হিসেবে জেতেন স্বর্ণপদক। ‘আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, অনেকে বারণ করেছে এত অল্প বয়সে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ না নিতে। কিন্তু আমি অংশ নিয়ে সফল হয়েছি।’ বলছিলেন সাগর। তাঁর সোনালি জীবনের এই শুরু। যার ধারাবাহিকতায় ২০০৬, ০৭, ০৮, ১০, ১১ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক কিংবা জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অব্যাহত থাকে তাঁর সাফল্য। তবে ২০১১ সালের কথা আলাদা করেই বলতে হয়, সেবার আটটি ইভেন্টের আটটিতেই সোনা জিতে হয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়। আবার ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসে সাতটি সোনা আর একটি রুপা জিতে তিনি হন সেরা অ্যাথলেট। বলে রাখা ভালো সেবার বংলাদেশ গেমসে অংশ নিয়েছিলেন ছয় হাজার ৫০০ জন অ্যাথলেট!
পাবনা শহরের এই ছেলে সাফল্য ধরে রাখেন ইন্দো-বাংলা বাংলাদেশ গেমস, ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস, ইয়ুথ এশিয়ান গেমস ২০০৯, ইয়ুথ এশিয়ান অলিম্পিক ২০১০, ১৯তম কমনওয়েলথ গেমসের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও। তবে সাগর জানাচ্ছিলেন তাঁর অনন্য এক পাওয়ার কথা, ‘আমি লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি। সেখানে বিশ্বখ্যাত সাঁতারু মাইকেল ফেল্প্সের সঙ্গে কথা বলতে পারাটাও অনেক বড় পাওয়া। তাঁকে দেখে একটি বিষয় শিখেছি ‘সময়ের যথার্থ ব্যবহার।’
মাহফিজুর রহমান উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বাবা আজিজুর রহমান ছিলেন কাবাডি খেলোয়াড়। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েও অসুস্থতার জন্য খেলতে পারেননি। সেই অপ্রাপ্তি থেকে তাঁদের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন ক্রীড়াবিদ হিসেবে। হতাশ করেননি তাঁর সন্তানেরা। এক পরম পাওয়ার কথা জানাচ্ছিলেন তিনি, ‘কারও সঙ্গে পরিচয়ের সময় বাবা গর্বের সঙ্গে বলেন—আমি ‘সাগরের বাবা!’ এটিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।’