Thank you for trying Sticky AMP!!

সাতক্ষীরার সিক্স স্যার

মো. আবদুস সালাম

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৩০ নম্বর আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক মো. আবদুস সালাম। এলাকার মানুষের কাছে তিনি সাদামাটা আর বিনয়ের প্রতীক। সারাটা জীবন কাটিয়েছেন শিশুদের নিয়ে। ৬১ বছর বয়সেও তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই বিদ্যালয় নিয়ে কাটিয়ে দেবেন বাকিটা জীবন।

মো. আবদুস সালামের জন্ম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা পাতাখালি গ্রামে। শৈশব কাটে তাঁর অজপাড়াগাঁয়ে। বাবা ওমর আলী মোল্লার আর্থিক অবস্থা ছিল নাজুক। আবদুস সালাম শৈশব থেকেই শুরু করেন বেঁচে থাকার পাশাপাশি লেখাপড়ার জন্য সংগ্রাম। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ নেন। পাশাপাশি লেখাপড়াও চলত। এমন করে করেই শ্যামনগরের পাতাখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৭৩ সালে।

এসএসসি পাস করার পর বড় ভাই জব্বারের হাত ধরে চলে আসেন সাতক্ষীরা শহরে ইটেগাছা এলাকায়। সে বছরই সাতক্ষীরা শহরের মুন্সিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি নেন। ইটেগাছা থেকে প্রতিদিন আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তাঁর বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। তাঁকে বদলি করা হয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৩০ নম্বর আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে আগে পাঁচজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি ষষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ষষ্ঠ শিক্ষক থেকেই ‘সিক্স স্যার’–এর প্রচলন। ২০১৮ সালে অবসর নিয়েছেন আবদুস সালাম। তবে এলাকায় তিনি সিক্স স্যার হিসেবেই পরিচিত।

ছেলেবেলায় স্বপ্ন দেখেছিলেন, শিক্ষক হতে পারলে দুস্থ ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াবেন। তাদের জীবনে আলো জ্বালানোর ব্রতী হবেন। সেই স্বপ্ন নিয়েই ১৯৭৫ সালে আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। প্রথম দিন থেকেই তিনি শুরু করেন গরিব ও অসহায় ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ। তাদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য তালিকা করে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বোঝাতে সক্ষম হন অধিকাংশ অভিভাবককে। বিশেষ করে মেয়েশিশুদের লেখাপড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন জোর দিয়ে। তিনি ঘোষণা দেন, ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে এলে বিদ্যালয়ের বাইরেও বিনা পারিশ্রমিকে পড়াবেন। যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের বই, খাতা, কলমও কিনে দেবেন। মাত্র দুই মাসের মধ্যে আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৯০ থেকে বেড়ে ২৭০–এ দাঁড়ায়।

শিক্ষার্থীদের ফল ভালো করার জন্য ৪১ বছর ধরেই চেষ্টা করে গেছেন আবদুস সালাম। বৃত্তি পরীক্ষার এক মাস আগে শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাখতেন নিজের বাড়িতে। শিক্ষার্থীদের খাওয়াদাওয়া, পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, আবার পরীক্ষা শেষে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া—সবই তিনি করতেন নিজ খরচে।

মানসিকভাবে ধনী আবদুস সালাম থাকেন টিনের ঘরে। চার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। সম্বল ৭ শতক জমি। তাতে তাঁর কোনো আক্ষেপ নেই। নিজেকে গর্বিত মনে করেন। তাঁর ছাত্ররা কেউ কেউ আজ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, সরকারি কলেজের শিক্ষক, চিকিত্সক।

আবদুস সালাম বলছিলেন, ‘আমি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সেই ৪১ বছর আগের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র জোগাড় করে সমাজকে আলোকিত করতে চাই।’