Thank you for trying Sticky AMP!!

সাদা-কালো প্রিয় ওয়াকিলের

দিনের একটা সময় ফেসবুকে কাটান ওয়াকিলুর রহমান। ছবি: কবির হোসেন

চিত্রশিল্পী ওয়াকিলুর রহমান। দীর্ঘদিন জার্মানিতে ছিলেন। এখন ঢাকায় থাকছেন। সাইকেলে চলাচল করেন। ভালোবাসেন রান্না করতে। আজ থাকছে তাঁর স্টাইল।

বাড়ির বাইরে থেকে ভেতরটা আঁচ করার কোনো উপায় নেই। মনে হতে পারে, এ কথা আবার বলার কী আছে। বলাটা এ জন্য যে চিত্রশিল্পী ওয়াকিলুর রহমানের বাড়ির ভেতরটা অন্য রকম। আর দশটা সাধারণ বাড়ির মতো নয়। আসবাবের কোনো বাহুল্য নেই; একজন মানুষের জীবনযাপনের জন্য যতটুকু জিনিস লাগে, ততটুকুই আছে। ঢাকার লালমাটিয়ার এই বাড়িতে রোদ-হাওয়া যেন একসঙ্গে খেলা করে। ১১ সেপ্টেম্বর এই শিল্পীর জীবনযাপনের সঙ্গে পরিচিত হতে তাঁর বাড়িতে যাই।

যাতায়াতের সঙ্গী সাইকেল

কাঠের একটা বেঞ্চে বসেই শুরু করলেন নিজের কথা। ওয়াকিলুর রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ে রাগা ও ছেলে রাহুল তাঁদের মায়ের সঙ্গে জার্মানিতে থাকে। নিজের দেশে এই একাকিত্ব উপভোগ করি আমি। খুব একটা সুশৃঙ্খল জীবনযাপন না করলেও একটা নিয়মের মধ্যে চলি।’ জানালেন, দুই দশকের বেশি সময় তিনি ছিলেন জার্মানিতে। ২০১০ সালে দেশে ফিরে আসেন।

রান্না করতে ভালোবাসেন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে ভর্তি হন ১৯৭৬ সালে। এরপর ১৯৮৩ সালে পড়তে যান চীনের সেন্ট্রাল একাডেমি অব ফাইন আর্টে। সেখান থেকে আবার দেশে ফেরা। ১৯৮৮ সালে আবার পাড়ি জমান জার্মানিতে। সেখানে ‘ফ্রিলান্স আর্টিস্ট’ হিসেবে ছবি আঁকতেন।
ওয়াকিলুর রহমান বেশ সকালেই ঘুম থেকে ওঠেন। সপ্তাহে তিন দিন ভারতীয় দূতাবাসের ইন্দিরা গান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্রে যোগব্যায়াম করেন।
নানা রকমের চা পান করেন তিনি। ওয়াকিলুর রহমান বলেন, ‘খাওয়া নিয়ে অত ঝামেলা নেই আমার। বন্ধুরা বেড়াতে এলে মাছ-মাংস রান্না করি। ওদের বাড়িতেও প্রায়ই খাওয়া হয়। নিজের জন্য সবজি দিয়ে কোনো একটা পদ তৈরি করে নিই। ভাত, ডাল, ভর্তা, ইলিশ মাছ যেমন পছন্দ, আবার থাই-চীনা খাবারও ভালো লাগে। তবে রান্না করতে আমি পছন্দ করি।’
সাধারণত সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বাড়িতে থাকার চেষ্টা করেন। এই পুরো সময় একান্ত নিজের বলে জানান এই শিল্পী। এ সময় ছবি আঁকেন। নিজের কোনো কাজ থাকলে সেগুলোও করেন। দুপুরের খাবার খেয়ে আধা ঘণ্টার জন্য ঘুমিয়েও নেন। ‘এই আধা ঘণ্টার ঘুম আমার জীবনের বিলাসিতা।’ বলেন তিনি।
বিকেল চারটার দিকে নিজের বাহন সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। সাইকেল চালিয়ে বেশির ভাগ সময় চলাচল করেন। তখন কাঁধে থাকে কাপড়ের ঝোলা ব্যাগ। ঢাকা আর্ট সেন্টারের সঙ্গে ওয়াকিলুর রহমান যুক্ত আছেন। কোনো চিত্র প্রদর্শনী বা অন্য কোনো কাজ না থাকলে সন্ধ্যাটা কাটান ঢাকা আর্ট সেন্টারে। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের বাড়িতেও চলে যান আড্ডা দিতে। এই আড্ডা চলে রাত পর্যন্ত।
একরঙা পোশাক পছন্দ ওয়াকিলুর রহমানের। স্যুট ও টাই কখনো পরেননি তিনি। সাদা-কালো তাঁর প্রিয় রং। আজকাল তাই কলার ছাড়া সাদা বা কালো রঙের শার্ট পরছেন। নিজের পোশাকের নকশা নিজেই করেন। ইয়োগা করার সময় টি-শার্টও পরেন।

গাছের পরিচর্যা করেন

শীতের সময় চাদর পরতে পছন্দ করেন। তবে বিশেষ অনুষ্ঠানে পোশাক নির্ধািরত থাকলে ডিজাইনার চন্দ্রশেখর সাহার নকশা করা কোটি পরেন।
বিভিন্ন ধরনের মিউজিক শুনতে ভালোবাসেন। কথানির্ভর গান খুব একটা না শুনলেও জাতিস্মর সিনেমার গান তাঁর মন ছুয়ে গেছে। কখনো গজলও শোনা হয় তাঁর।
দিনের একটা সময়ে তিনি গাছের পরিচর্যা করেন। কখনো আগাছা পরিষ্কার করেন না। তিনি মনে করেন, তাতে বনের মতো হবে। গোছানোর চেয়ে অগোছালো গাছে বরং প্রাকৃতিক একটা আবহ পাওয়া যায়। ওয়াকিলুর রহমান রোমাঞ্চপ্রিয়। ট্রেকিং করতেও ভালোবাসেন। সুন্দরবন তাঁর ভালো লাগে।
রাতে বাড়িতে ফিরে অনেকটা সময় ফেসবুকে কাটান। এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি প্রতিদিন নিজের আঁকা বা তোলা ছবি দেন। টেলিভিশন দেখেন না। সব খবর রাখেন ইন্টারনেটে বসে বসেই।