Thank you for trying Sticky AMP!!

সুদিনকে লেখা চিঠি

প্রিয় সুদিন,

খাদিজা স্বর্ণা

কখনো ভাবিনি তোমার শূন্যতা এত তীব্রভাবে অনুভব করব। আজ চারদিকে যখন এত আতঙ্ক, বিষণ্নতা, হাহাকার দেখি; উপলব্ধি করি, তুমি যখন ছিলে, তখন তোমাকে ঠিক মূল্য দেওয়া হয়নি।

কেউ কি কখনো ভেবেছিল, গলির মোড়ের আড্ডা কিংবা ক্যাম্পাসের সেই মামার টঙের চায়ের জন্য এত দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হবে! এরই মধ্যে পয়লা বৈশাখ চলে গেল, ঈদুল ফিতর গেল। ঘরে বসে সবাই যতই সুন্দর ছবি দিক না কেন, জানি আশপাশের এত মৃত্যু সংবাদ কাউকে ভালো থাকতে দেয়নি।

শুরুর দিকটায় আমরা সত্যি ভেবেছিলাম, এমন ছুটি আর পাওয়া যাবে না। নিজেকে এখন সময় দেওয়া যাবে। ভালো কিছু সিনেমা দেখা যাবে, গান শোনা হবে। বুকশেলফে যেসব বই কিনে তুলে রাখা ছিল, পড়ব পড়ব করেও পড়া হচ্ছিল না, সেসব পড়া হবে...হয়েছেও তাই। ভালো কিছু বই পড়া হলো, সিনেমা দেখা হলো। পুরোনো নাটকগুলো আবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হলো। অনলাইনে অনেক ফ্রি কোর্স পাওয়া যাচ্ছে, জানো? সনদের লোভে হলেও আমরা বেশ কয়েকটা কোর্স করে নিলাম। কাজকর্ম ছাড়া এমন অফুরন্ত সময়ই তো ছিল। সবই ভালো ছিল, যদি না থাকত হাজারো দুশ্চিন্তা আর প্রতিদিনের দুঃসংবাদ। শুরুতে সবাই হিসাব রাখত, ঘরবন্দী সময়ের কততম দিন চলছে। এখন আর এসব চোখে পড়ে না।

কিন্তু আর পারছি না, জানো?

আমরা আমাদের সেই ব্যস্ত স্বাভাবিক জীবনটাই ফেরত চাই, যেখানে সারা দিনের ব্যস্ততা শেষেও একটা প্রাণভরা গোধূলি দেখা যাবে। গলির মোড়ে বন্ধুদের আড্ডায় তামিম, মুশফিক থাকবে। স্কুলে যাওয়া মেয়েগুলোর মাথায় দুই বেণী থাকবে। রাস্তার মোড়ে ফুচকার দোকানগুলোতে ভিড় থাকবে। হলের ডাল–ভাত থাকবে। দিন শেষে মায়ের ফোন আসবে। ক্লাসের বোরিং লেকচার থাকবে। থাকবে টিউশনের টাকা দিয়ে কেনা গোলাপ হাতে প্রেমিকের অপেক্ষা। রাত করে ঘরে ফেরায় বকুনির ভয়। 

তুমি ফিরে এসো সুদিন। তুমি এবার এলে তোমায় নিয়ে খুব ভোরে সূর্যোদয় দেখতে যাব। তুমি চাইলে তোমায় বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটায় জোছনা স্নানে নিয়ে যেতে পারি। শুধু তুমি ফিরে এসো একবার। এবার আর তোমায় অবহেলা করব না। কথা দিচ্ছি।

প্রথম বর্ষ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়