Thank you for trying Sticky AMP!!

স্টল সাজানোয় অনিবার্য নবীন

এ বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরুর আগে কাজ করছেন সাইফুল্লাহ নবীন ছবি: সাইফুল ইসলাম

চোখের সামনে বিশাল সাদা কাগজ মেলে ধরলেন। কাগজের মধ্যে সারি বেঁধে বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং। ছবিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল সাজসজ্জার অংশ হিসেবে শোলায় লিখছেন একজন চিত্রশিল্পী। বেশির ভাগ ছবিই বিভিন্ন বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিনগুলোয় পত্রিকায় ছাপানো। বইমেলার প্রস্তুতি চলছে এই শিরোনামেই এসেছে ছবিগুলো। এবার কাগজ ধরে রাখা ব্যক্তি আর ছবির মানুষের দিকে বার কয়েক তাকাই। না, একজনই। কিন্তু ছবির কোথাও তাঁর নাম নেই। ব্যাগ থেকে এ রকম আরও কয়েকটি কাগজ বের করতে করতে বললেন, ‘আমি ছবির মানুষটা। সাইফুল্লাহ নবীন। অনেক ছবি ছাপা হয়েছে। কিছু সংগ্রহ করতে পেরেছি, কিছু পারি নাই। মানুষ আমার ছবি দেখে, কিন্তু নাম জানে না।’

নাম জানানোর জন্য এসেছেন? বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের বড় হোগলা গ্রাম থেকে আসা নবীন একটু হাসেন। সারা রাত লঞ্চে ভ্রমণ করে এসেছেন। ক্লান্তি চোখেমুখে নেই বললেই চলে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে ক্লান্তিহীন নবীনের সঙ্গে কথা হয়।

‘না, আসলে ওই কারণে না। কিন্তু আমি যে একজন চিত্রশিল্পী, কাজ করি। ছবিও ছাপা হয়। অনেকে দেখে ফোন করেন। তাঁরা বলেন, ‘তোমার নাম তো দেখলাম না।’ তখন খারাপ লাগে।

নবীন বলে চলেন বইমেলার সঙ্গে তাঁর জড়িয়ে পড়ার গল্প। ততক্ষণে চা চলে আসে। শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিয়ে সেই গল্পটা সাজিয়ে নেন সম্ভবত। বলেন, ‘আমার আর্টের ওপরে একাডেমিক কোনো পড়াশোনা নেই। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আঁকতে খুব পছন্দ করতাম। মেহেন্দীগঞ্জের পাতার হাট আরসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় এসেছিলাম। নানা জায়গায় কাজ করতে করতে থিতু হই ফার্মগেটের একটা মার্কেটে। এটা আশির দশকের কথা। সেখানে নবীন সাইন নামে একটা দোকান দিই। বাসা ছিল নাখালপাড়ায়। বেশ ভালোই চলছিল।’

সাইফুল্লাহ নবীন

নবীন জানান, ওই সময় পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ অনেকেই তাঁর দোকানে এসে আড্ডা মারতেন। আমরা আড্ডার দিকে এগোই না। শুনতে চাই নবীনের গল্প। বলেন, ‘কিন্তু হঠাৎ করে ওই মার্কেট ভেঙে ফেলা হয়। নতুন করে কোথাও জায়গা নিতে পারি না। গ্রামে ফিরে যাই। তখন থেকেই বইমেলা, বিশেষ করে প্রকাশকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। তাঁদের স্টল সাজসজ্জার কাজ শুরু করি।’

বইমেলার স্টল বরাদ্দ হলেই প্রকাশকেরা যোগাযোগ করেন নবীনের সঙ্গে। স্টলের আকার ও ডিজাইন বলে দেন। লোগো পাঠিয়ে দেন। সেটা শোলায় এঁকে কেটে নিয়ে লোগোর রঙের মতো রং করে দেন। সেই কর্কশিটের লেখাই ঝুলে যায় স্টলের সামনে। অনেকে উল্টো নবীনের কাছে স্টলের সাজসজ্জার পুরো নকশা চান। সেটাও তৈরি করে দেন। এসব কাজ সামলাতে মেলা শুরুর দিন দশেক আগেই ঢাকায় আসেন। তারপর বইমেলা প্রাঙ্গণেই রাত-দিন এক করে কাটে নবীনের সময়।

একসময় বাণিজ্য মেলার স্টল সজ্জারও কাজ করেছেন। কিন্তু ইদানীং ডিজিটাল প্রিন্ট আসায় নবীনের কাজের ক্ষেত্র ছোট হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কর্কশিটে আর কাজ না হওয়ায় বাণিজ্য মেলায় কাজ করার সুযোগ হয় না। সেই ডিজিটালের ছোঁয়া বইমেলাতেও এসেছে। বলতে বলতে নবীনের চোখে হতাশা উপচে পড়ে। ‘আসলে এখন অনেকেই ডিজিটাল ব্যানার ফেস্টুন করে। আমাদের কদর কমে গেছে। কর্কশিটের নকশা করে লেখার দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে মনে হয়।’

তবে বাণিজ্য মেলা বা বইমেলা ছাড়াও নবীনের ব্যবস্থা আছে। গ্রামে গড়েছেন নিজের নামে একটা আর্ট একাডেমি। মেহেন্দীগঞ্জের শিশুরা সেই আর্ট একাডেমির শিক্ষার্থী। গড়েছেন বেশ কিছু শিশু সংগঠন। এসব নিয়ে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করেন দুই ছেলে, এক মেয়ের জনক সাইফুল্লাহ নবীন। এসবের মাঝে শিশুদের জন্য বইও লেখেন। এই মেলাতেই প্রকাশ পাচ্ছে তাঁর ৯টি বই। নবীনের আঁকা আর লেখায় সেই বই পাওয়া যাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। চিত্রশিল্পী নবীন শুধু নয়, বইমেলায় দেখা মিলবে লেখক নবীনেরও।