Thank you for trying Sticky AMP!!

স্পাইডারম্যানও ব্যর্থ হয়েছিল

>

১২ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন মার্কিন কমিক বই লেখক ও মার্ভেল কমিকসের সাবেক প্রেসিডেন্ট স্ট্যান লি। গত বছর ৩০ জুন স্ট্যান লিকে ‘আইকন অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।

আমাকে বলা হয়েছে, আমি যেন তোমাদের একটা গল্প শোনাই। গল্প বলা তো সহজ। কিন্তু কী গল্প বলব? বিশেষ করে সেই মানুষগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে, গল্প শোনার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ যাদের আছে! ঠিক করেছি, আমি তোমাদের বলব, কীভাবে স্পাইডারম্যানের জন্ম হলো।

এটা একটা সত্যি ঘটনা। আমরা তত দিনে ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ নিয়ে কাজ করেছি, মনে হয় ‘এক্সম্যান’ও বাজারে এসেছিল। যত দূর মনে পড়ে আমার প্রকাশক এসে বলেছিল, ‘স্ট্যান, আমি চাই তুমি একজন নতুন সুপারহিরো তৈরি করো।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে।’ প্রকাশককে তো আর না করতে পারি না। চাকরিটা তো বাঁচাতে হবে!

বাড়িতে ফিরে ভাবতে শুরু করলাম, কী করা যায়। একজন সুপারহিরোর মূল বৈশিষ্ট্যই হলো তার ‘সুপার পাওয়ার’। ‘সুপার পাওয়ার’টা কী হবে, সেটা ঠিক করে ফেলতে পারলে বাকিটা এমনিই ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ দেখলাম, দেয়ালে একটা মাছি হাঁটছে। মনে হলো, আরে! আমি যদি এমন একজন সুপারহিরো তৈরি করতে পারি যে দেয়াল বেয়ে উঠতে পারে, তাহলে দারুণ হয়! বেশ। এখন এই নতুন সুপারহিরোর জন্য একটা নাম দরকার। ফ্লাইম্যান, মস্কিউটোম্যান, এমন নানা কিছু ভাবতে ভাবতে অবশেষে ঠিক করলাম—স্পাইডারম্যান! ব্যস, আমি আমার সুপারহিরো পেয়ে গেলাম। তার বিশেষ ক্ষমতা পেয়েছি, নাম পেয়েছি। এবার তার জীবনে কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা ঢেলে দেওয়া দরকার। তোমরা যেমন একটা চমৎকার জীবন পেয়েছ, বেশির ভাগ মানুষের এই সৌভাগ্য হয় না। সবার জীবনই নানা সমস্যায় জর্জরিত। ঠিক করলাম, স্পাইডারম্যান হবে একজন টিনএজ সুপারহিরো। কারণ সে সময় যত দূর মনে পড়ে, কোনো টিনএজ সুপারহিরো ছিল না। অতএব এই অসাধারণ আইডিয়া নিয়ে আমি ছুটে গেলাম আমার প্রকাশকের কাছে।

প্রকাশক বলল, ‘আমি জীবনে যত আইডিয়া শুনেছি, তার মধ্যে এটা সবচেয়ে বাজে!’ সে আমাকে যুক্তি দিতে শুরু করল, ‘মানুষ মাকড়সা ঘৃণা করে। অতএব তুমি একজন হিরোকে মাকড়সা-মানব নাম দিতে পারো না। তুমি চাও সে টিনএজার হোক? টিনএজাররা বড়জোর পার্শ্বচরিত্র হতে পারে। আর তুমি তার জীবনে ব্যক্তিগত সমস্যা দিতে চাও! ওহ স্ট্যান, তুমি জানো না সুপারহিরোদের কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা থাকে না?’ অতএব বেশ খানিকটা জ্ঞান এবং হতাশা নিয়ে আমি তাঁর অফিস ত্যাগ করলাম।

কিন্তু আমার মাথা থেকে স্পাইডারম্যান দূর হচ্ছিল না। তখন আমরা একটা ম্যাগাজিনের শেষ সংখ্যার কাজ করছিলাম। যত দূর মনে পড়ে, ম্যাগাজিনটির নাম ছিল অ্যামাজিং ফ্যান্টাসি। ম্যাগাজিনটা ভালো চলছিল না। আমরা ওটা বন্ধ করে দেব ঠিক করেছিলাম। তখন ম্যাগাজিনটার শেষ সংখ্যা প্রেসে যাচ্ছে, অতএব কী ছাপা হচ্ছে তাতে কারও কিছু যায় আসে না। এই সুযোগটাই কাজে লাগালাম। আমি স্পাইডারম্যানকে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তুলে আনলাম।

এক মাস পর প্রকাশক পড়িমরি করে আমার কাছে ছুটে এল। বলল, ‘স্ট্যান! স্ট্যান! তোমার মনে আছে সেই চরিত্রটার কথা, যেটা তুমি আর আমি দুজনই ভীষণ পছন্দ করেছিলাম! সেই যে স্পাইডারম্যান! চলো, আমরা স্পাইডারম্যানের একটা সিরিজ চালু করি।’

এই গল্প তোমাদের কেন বলছি? তোমাদের সময় নষ্ট করা ছাড়া এই গল্প বলার আর কী উদ্দেশ্য? আমি বলতে চাইছি—তোমার মাথায় যদি একটা আইডিয়া থাকে এবং তুমি যদি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করো যে এটা একটা দারুণ আইডিয়া, তাহলে কোন গর্ধভ কী বলল, তাতে কিছু যায় আসে না। তার মানে এই নয় যে তোমার মাথায় যত উদ্ভট আইডিয়াই আসুক, সেটা ভালো কিছুই হবে। যদি আইডিয়াটার মধ্যে তুমি একটা কিছু খুঁজে পাও, যদি এটা তোমাকে আন্দোলিত করে, চেষ্টা করো। কারণ তুমি যা চাও, তা করতে পারলেই তুমি তোমার সেরাটা দিতে পারবে। ভেবো না তোমার সব ভাবনাই ভালো হবে, সব ভাবনার জন্য তুমি পুরস্কার জিতবে। আমি এমন অনেক কিছু ভেবেছি, যেটা থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো কিছু দাঁড়ায়নি। সেই ভাবনাগুলো নাহয় তোমরা এরপর আমাকে যেই পুরস্কারটা দেবে, সেটার জন্য তোলা থাক!

এই সম্মানের জন্য আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। এই কলেজ আমার খুব প্রিয়। বহুবার এখানে কথা বলেছি। এটা সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটা। আমি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সেরা সৌভাগ্য কামনা করি। যা-ই করো না কেন, নিজের সেরাটা দাও।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ:

মো. সাইফুল্লাহ, সূত্র: ইউসিএলএর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল