Thank you for trying Sticky AMP!!

স্মৃতির প্রতিবিম্ব

অংলকরণ: তুলি

দেশ থেকে জাপানে এসেছি ২৩ দিন হলো। ইয়ামাগুচিতে প্রায় গ্রামের দিকে থাকছি আমরা। এরই মধ্যে এই শহরের বেশ কয়েকটা জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। অথচ কেন জানি খুব কমই মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরের এক দেশে আছি। কেবলই মনে হচ্ছে, আমার নানি, দাদিবাড়ির কাঁচা রাস্তাগুলো বোধ হয় পিচঢালা হয়েছে। বিপণিবিতানে গেলে মনে 

হচ্ছে বসুন্ধরা সিটি বা যমুনা ফিউচার পার্কে এসেছি। এখানে মার্কেটে কম মানুষ দেখে মনে হচ্ছে হয়তো এখন মার্কেট বন্ধের সময়, তাই লোকজন কম। 

স্টারবাকসের কফির স্বাদ আমার কাছে আমাদের বাংলাদেশের যেকোনো ভেন্ডিং মেশিনের কফির মতোই লেগেছে, অন্যান্য খাবার খাওয়ার সময় মনে হয়েছে ঢাকার কোনো নতুন রেস্তোরাঁয় নতুন বিদেশি খাবার খাচ্ছি, ফেরি পার হওয়ার সময় মনে হয়েছিল আমি টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি, পাহাড়ের সিঁড়ি বেয়ে নামার পথে বাংলাদেশের পাহাড়ের কথাই মনে হচ্ছিল, বাঁধানো সমুদ্রপাড় কক্সবাজার আর প্যাগোডাগুলো রামুর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। 

সেদিন তিনজন বিদেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে একজন এক বিশেষ কায়দায় হাতে বানানো কিছু খাবার এনেছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, আম্মা যেন রুমাল বা চার কোনা কাপড়ে এই খাবার বেঁধে পাঠিয়েছেন। 

 মনে হচ্ছে, এমন এক জেলায় বা উপজেলায় আমাদের বদলি হয়েছে, যেখানে বেশ নিরিবিলি, লোকজনের ভিড়ভাট্টা কম, যেখানে সাইকেল অন্যতম বাহন, কেউ কাউকে বাঁকা চোখে দেখে না, বিশেষভাবে মেয়েদের। শহর থেকে একটু দূরে হওয়াতে বেশ শান্ত এই শহর। মনে হয়, এই শহর বাংলাদেশেরই কোনো এক এলাকা, যেখানে বিদেশি কিছু মানুষ বেড়াতে এসেছে, সময় কাটাতে এসেছে। 

এখানে প্রতি পরতে পরতে কেবলই মনে হচ্ছে, আমি আমার দেশ ছেড়ে আসিনি, আমার দেশটাই আরেকটু গোছানো হয়ে গেছে, মানুষগুলো আরও হাসি হাসি মুখের হয়ে গেছে। 

কী আশ্চর্য! এই লেখাটা লিখতে গিয়ে ভীষণ মনে পড়ছে আমার নিজের জন্মস্থানের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, নগরীর বই দোকান, টং দোকানের চা, ঝালমুড়ি আর চটপটি–ফুচকার কথা খুব মনে পড়ছে। 

বাসার ছোট্ট বারান্দায় চা খেতে খেতে হঠাৎ ভার হয়ে যাওয়া গলায় ঢোক গিলতে গিলতে মনে মনে বলি, তোলা থাক সব। ওগুলো এখন আমার সুখ আগলানোর স্মৃতি। যানজটে পূর্ণ, খানাখন্দে ভরা দেশটাকে মিস করেই বসলাম শেষমেশ! দেশটার জন্য মন পোড়েও দেখছি। আসলে দূরে গেলেই বোঝা যায় ভালোবাসার মাত্রা। 

ফারহানা মোস্তারী বিনতে হক
ইয়ামাগুচি, জাপান।