Thank you for trying Sticky AMP!!

হঠাৎ দেখা লোকটি

অলংকরণ: তুলি

কারওয়ান বাজার তখন সরগরম হয়ে উঠছিল। সবজিবাহী ট্রাক ঢুকছে, মানুষের কোলাহল বাড়ছে। রাতের কারওয়ান বাজার যাঁরা দেখেননি, তাঁদের কাছে এটা অচেনা। আমাদের রোজকার বিষয় বলেই সেসবে মনোযোগ ছিল না। আমরা চারজন ফুটপাতেই জবুথবু দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। নানা বিষয়ে কথা এগোচ্ছিল।

আচমকা এক ভদ্রলোককে দেখে চোখ আটকে যায়। আমাদের পাশেই কয়েকজন ছিন্নমূল মানুষ কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে ছিলেন। কোনোমতে ছেঁড়া কাঁথায় কনকনে শীত আটকানোর চেষ্টা তাঁদের। কিন্তু ফাঁক গলে ঢুকে পড়ছে হিমশীতল বাতাস। প্রতিরাতেই এভাবেই তাঁরা থাকেন। অভ্যস্ত চোখে নতুন কিছু মনে হয়নি। শুয়ে থাকা মানুষগুলোর পাশে এসে বসলেন তিনি। আমি অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে থাকি তাঁর দিকে।

পাশে বসা লোকটার হাতে কয়েলের প্যাকেট। তিনি প্যাকেটটা নিচে রেখে কয়েল বের করলেন। সতর্কতার সঙ্গে ছাড়িয়ে আলাদা করলেন জোড়া লাগানো কয়েল। তারপর আগুন ধরিয়ে কয়েলটা ঘুমিয়ে থাকা একজনের পাশে রাখলেন। পরেরটায় আগুন ধরাতে যাবেন, বাতাসের তোড়ে ধরাতে পারলেন না। একটু সরে গেলেন। তারপর কৌশলে আগুন ধরালেন। এভাবে একে একে বেশ কয়েকজনের পাশে কয়েল ধরিয়ে দিলেন। আমি বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখলাম ব্যাপারটা। কী অভূতপূর্ব একটা দৃশ্য! ততক্ষণে বাকি মানুষের চোখেও বিস্ময় ভর করেছে।

কয়েল ধরিয়েই চলে যাচ্ছিলেন লোকটা। আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যাই কথা বলতে। কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না, শুধু হাসলেন। জোরাজুরি করলে শুধু বললেন, ‘আজ নয়, আরেক দিন কথা হবে।’

আমরা আর কথা বাড়ালাম না। তীব্র শীতের রাতে যেখানে মানুষ কম্বলের ভেতর থেকেই বের হতে চায় না, সেখানে কেউ একজন বেশ কয়েকটা কয়েলের প্যাকেট নিয়ে ফুটপাতে ঘুরছে, ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোর পাশে একটা করে কয়েল ধরিয়ে দিচ্ছে! ভাবা যায়? এমন মানুষও আছে? বাসায় ফিরতে ফিরতে এই প্রশ্নগুলোই মাথায় খেলে গেল। আসলে এমন মানুষদের জন্যই এখনো পৃথিবীটা এত সুন্দর! এত অসাধারণ!

আবু সাঈদ

মিরপুর, ঢাকা