Thank you for trying Sticky AMP!!

হবু মায়ের যত্ন

মা হতে চলেছেন ব্যারিস্টার মিতি সানজানা। তাঁর জন্য রইল শুভ কামনা। ছবি: খালেদ সরকার

সন্তান ধারণ থেকে শুরু করে সন্তানের পৃথিবীর আলোর মুখ দেখা পর্যন্ত একজন মাকে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ সময় মায়ের বিশেষ যত্নের বিকল্প নেই। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শুধু শারীরিক যত্নই নয়, এ সময় চাই মানসিক সুস্থতাও। গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। সঠিক মাপের এবং নরম জুতো পরতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই হিল জুতা পরিহার করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়েদের হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা যায়। ফলে দেখা দেয় রক্তস্বল্পতা। কারণ, এ সময় গর্ভস্থ শিশুর শরীরে লৌহের চাহিদা মেটানোর পর মায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে দেখা যায়। এই সময়ে গর্ভবতী মায়েদের লৌহসমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারও বেশি দিতে হবে, কারণ ক্যালরির প্রয়োজন বেশি থাকে। এই ক্যালরি বাড়ানো উচিত প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার থেকে। কারণ, প্রোটিনযুক্ত খাবার দিয়েই ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটে থাকে।

দরকার পরিকল্পিত গর্ভধারণ

পরিকল্পিতভাবে সন্তান নেওয়া গেলে তা মা ও শিশু দুজনের জন্যই নিরাপদ। যেমন সন্তান ধারণের আগে মায়ের শরীরের কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা, যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হৃদ্​রোগ, উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করে নিতে হবে। বংশগত কোনো রোগ থাকলে এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন সন্তান ধারণের তিন মাস আগে থেকে নিয়মিত ফলিক অ্যাসিডসহ অন্যান্য ওষুধ খেতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শে। বিশেষ করে একটু বেশি বয়সী মায়ের জন্য তো এটি খুবই প্রয়োজন।

কখন ও কতবার চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

সম্ভব হলে প্রতি মাসেই একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। আর কারও যদি জটিলতা থাকে, তাঁকে যখন সমস্যা দেখা দেবে তখনই পরামর্শ নিতে হবে। এমনিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে অবশ্যই কমপক্ষে চারবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এই চারবার হচ্ছে যথাক্রমে ১৬, ২৮, ৩২ ও ৩৬ সপ্তাহে। প্রসূতিকে অবশ্যই একজন চিকিৎসক বা নিদেনপক্ষে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ দাই দিয়ে প্রসব করানো উচিত।

প্রথম তিন মাসে কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?

প্রথম গর্ভধারণের লজ্জা, বমি বমি ভাব, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। অথচ এই সময়ই বাচ্চার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো পূর্ণ রূপ লাভ করে। এ সময় সহমর্মিতার পাশাপাশি বমি বেশি হলে বমিনাশক, অম্লনাশক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। এ সময় ছোট কয়েকটি পরীক্ষা, যেমন রক্তের হিমোগ্লোবিন, সুগার ও গ্রুপ করে রাখা উচিত। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার দরকার নেই।

পরবর্তী তিন মাস কোন বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে?

যাঁদের মাসিক অনিয়মিত, তাঁদের তারিখ নিশ্চিত করার জন্য ১২-১৪ সপ্তাহে এবং যাঁদের কোনো বংশগত বা জন্মগত সমস্যা আছে কিংবা হয়েছে কি না, তা দেখার জন্য ২০-২২ সপ্তাহে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। যেহেতু গর্ভস্থ শিশুর শরীর গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান মায়ের কাছ থেকেই আসে, তাই মায়ের প্রতিদিনের খাদ্য হতে হবে সুষম; যার মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি, ফলমূল ও প্রচুর পানি থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দুপুরে অন্তত দুই ঘণ্টা ও রাতে অন্তত সাত ঘণ্টা বিশ্রাম দিতে হবে। আগে টিকা দেওয়া না থাকলে গর্ভাবস্থায় পাঁচ ও ছয় মাস শেষ হলে দুটি টিটি টিকা দিতে হবে। গর্ভস্থ শিশুর বাড়ন্ত গঠনের জন্য আয়রন, ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে দিলে ভালো হয়।

শেষ তিন মাস কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এ সময় গর্ভের শিশু খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। এ সময় অনেক গর্ভবতী মায়ের পায়ে পানি আসতে পারে। পেট বড় হওয়ার জন্য মৃদু শ্বাসকষ্ট, অ্যাসিডিটির কষ্ট, স্তন থেকে কিছু তরল পদার্থ নিঃসৃত হতে পারে। এগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁকে এসব বুঝিয়ে বলতে হবে।

এই সময়ে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমন কিছু ঘটলে, যেমন অস্বাভাবিক পেট বড় বা ছোট হওয়া, হঠাৎ রক্ত ভাঙা, খুব বেশি জ্বর আসা, রক্তচাপ অতিরিক্ত বেশি হওয়া—এমন পরিস্থিতিতে তাড়াতাড়ি চিকিৎসককে দেখাতে হবে।

এই সময়ে দীর্ঘ ভ্রমণ?

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। উঁচু-নিচু পথ কিংবা ঝাঁকির আশঙ্কা আছে, এমন যানবাহনে ভ্রমণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সকালে ও বিকেলে কিছু সময়ের জন্য স্বাস্থ্যকর ও মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো, এতে শরীর সুস্থ ও মন প্রফুল্ল থাকে।

প্রসবকালীন সতর্কতা

মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ প্রথম দেখা দিলে বা বের হয়ে আসতে চাইলে, প্রসবের সময় ১২ ঘণ্টার বেশি হলে, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হলে তাড়াতাড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিতে হবে।

প্রসবের পরের প্রথম দুই ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ পরীক্ষা এবং ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মাকে বিশ্রাম দিতে হবে। জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে মায়ের কাছে আনতে হবে এবং মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।

প্রসবের সময় সতর্ক থাকতে হবে বিপদের চিহ্ন সম্পর্কে, যেমন যোনিপথে রক্তপাত, প্রচণ্ড জ্বর, শরীরে খুব বেশি পানি আসা, চোখে ঝাপসা দেখা, অবিরাম বমি, গর্ভকালে বা প্রসবের সময় খিঁচুনি হওয়া। এর একটি চিহ্ন দেখা গেলে এক মুহূর্তও দেরি না করে হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী রক্তদাতার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।

লেখক: গাইনি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল