Thank you for trying Sticky AMP!!

হাওর

তুলতুলির বিয়ের কথা পাকা। ছেলেপক্ষ মুরব্বিসহ এসে আংটি পরিয়ে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করে গেছে। আগামী মাসের প্রথম শুক্রবারে বিয়ে। বিয়ের বাকি দুই সপ্তাহ। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় তুলতুলিদের বাড়ি। ছেলের বাড়ি একই জেলার তাহিরপুর উপজেলায়। তুলতুলির এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় মধ্যস্থতা করছেন বিয়ের।

বিয়েকে কেন্দ্র করে তুলতুলিদের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন একে একে আসতে শুরু করেছে। খালা আর ফুফুর পরিবার ইতিমধ্যে এসেছে। মামাদের পরিবারও দু-একদিনের মধ্যে চলে আসবে। তুলতুলি বাবার একমাত্র মেয়ে। ছোট দুটো ভাই রয়েছে ওর। কিন্তু তুলতুলিকে সব আত্মীয়স্বজন একটু আলাদা চোখেই দেখে। ওর প্রতি স্নেহ-মায়াটা সবার একটু বেশি। তুলতুলিও নিজের আচরণ দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছে। ওর বিয়েটা নিয়ে সবারই আলাদা একটা আয়োজন রয়েছে। বাড়িময় বিয়ের সাজসাজ রবে তুলতুলির মায়ের মনটাও আনন্দে থইথই। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। মেয়ের বিয়েতে যতখানি করা যায়, তাঁরা প্রস্তুত।

এত আনন্দের মধ্যে তুলতুলির বাবার মনের ভেতর কোথাও একটা চিন্তার রেখা উঁকি দেয়। ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলা ও নেত্রকোনার বেশ কিছু জমি তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর জমি রয়েছে পাকনার হাওরে। এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মেয়ের বিয়ের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছেন। ফসল উঠলে পরে বেঁচে ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু যেভাবে একের পর এক বানে হাওর ও ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্নতা বাড়ছে। যদি এমন কিছু একটা হয়ে যায়, তিনি পথে বসে যাবেন। শেষ সম্বল বলতে ওই জমিটুকু আর তার ফসল।

তুলতুলি স্বপ্নে বিভোর। যে ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হতে যাচ্ছে, এক পলক দেখেছিল ভরা আয়োজনের মধ্যে। স্বামী হিসেবে কল্পনা করে বিয়ের পরে কেমন করে ভালোবাসবে, মনে মনে সেই ছবি আঁকে অগোচরে। বাইরে চেঁচামেচির শব্দে ঘোর কাটে তুলতুলির। ছোট চাচা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে তুলতুলির বাবার সঙ্গে বলছিলেন—তাহিরপুরের শনির হাওরে ছেলে পক্ষের যে জমি ছিল, বাঁধ ভেঙে সব তলিয়ে গেছে। ছেলে আর ছেলের বাবার সব পুঁজি শেষ। খবর পাঠিয়েছে এ মুহূর্তে তাদের পক্ষে বিয়ের আয়োজন করা সম্ভব নয়। একটু পরে বদরুল এল হাঁপাতে হাঁপাতে। বদরুল তুলতুলিদের জমিতে কাজ করে। বাবাকে উদ্দেশ করে বলল, চাচা পাকনার হাওরের বাঁধের অবস্থা ভালো না। পানির চাপে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে সব। বাবা আর ছোট চাচা দৌড় দেন হাওরের দিকে। কিছুক্ষণ পর খবর এল সব শেষ। বাঁধ ভেঙে বানের জলে তলিয়ে গেছে পাকনার হাওর। মা হাঁটু ভেঙে মেঝেতে বসে পড়েন। যে বাড়ি গতকালও ছিল হইহুলোড়ে ভরা, সেখানে নেমে আসে মৃতের মতো নীরবতা। তুলতুলির স্বপ্নগুলোও হাওরে ডুবে যাওয়া ফসলের মতো ডুবে যেতে থাকে।