Thank you for trying Sticky AMP!!

হার মানেন না জবা

জবা খাতুন। ছবি: প্রথম আলো

একটি দুর্ঘটনায় জবা খাতুনের শরীর থেকে বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাঁর হাতে ক্রাচ। পিঠে ব্যাগ। ইজিবাইক থেকে নেমে ক্রাচে ভর দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের তিনতালায় ক্লাসে ঢুকে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন। এ চিত্র নিত্যদিনের।

সকাল ঠিক ১০টায় কলেজে পৌঁছানোর আগে জবার দিনের সংগ্রাম শুরু হয় সকাল ছয়টায়। একাধিক শিক্ষকের কাছে  প্রাইভেট পড়া, কোচিং আর কলেজের পড়াশোনা সামাল দিতে অটোরিকশার পাশাপাশি দৈনিক অন্তত পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতে হয় তাঁকে। এই পাঁচ কিলোমিটার পথের চেয়ে বেশি কষ্টের নিয়মিত সিঁড়ি ভেঙে এক পায়ে তিনতলায় উঠে ক্লাস করা ও ক্লাস শেষে নামা। কিন্তু সবকিছুই জবার কাছে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জবা চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে তৃতীয় বর্ষে (সম্মান) পড়ছেন। বিভিন্ন খেলাধুলাসহ অন্যান্য কার্যক্রমেও জবা পিছিয়ে নেই।

জবার মুখের হাসিতেই ফুটে ওঠে তাঁর মানসিক দৃঢ়তা। জানালেন, পড়ালেখা শেষ করে একটি ভালো চাকরি করতে চান। এরও আগে চান একটি উন্নত মানের কৃত্রিম পা। গত ১৫ বছর এক পায়েই চলছে জবার জীবন।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বড়গাংনী ইউনিয়নের মোচাইনগর গ্রামের মেয়ে জবা। বাবা ইকরামুল হক কৃষিকাজ করেন। মা ফুরকুনি বেগম গৃহিণী। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে জবা ছোট। ২০০৪ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় বাঁ পা হারান জবা। মায়ের সামনেই ওই দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙে শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুরু হয় জীবনসংগ্রাম। বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের আসমানখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মায়ের কোলে চেপে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া–আসা করতেন জবা। আসমানখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলে শুরু হয় ক্রাচের সঙ্গে সম্পর্ক।

জবা জানালেন, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু ওই পা লাগিয়ে হাঁটা যেত না। নানা সমস্যায়  এক মাসও ব্যবহার করা হয়নি সেই কৃত্রিম পা। এখনো কাটা পায়ে নানান সমস্যা লেগেই আছে।

জবা বললেন, ‘ক্রাচে ভর দিয়ে বাসে উঠলে অনেকেই সিট ছেড়ে উঠে বসতে দেন। আবার কেউ কেউ না দেখার ভানও করেন। শারীরিক সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যে আক্ষেপও হয়। কিন্তু কখনো হতাশ হই না। হাল ছাড়ি না।’

জবা জানালেন, জীবনের এ পর্যন্ত আসতে পরিবারের সহযোগিতা যেমন পেয়েছেন, তেমনি পেয়েছেন শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতা। তবে, বর্তমানে যে হোস্টেল বা মেসে থেকে পড়াশোনা করছেন, সেই মেসের মালিক নাছরিন আক্তারের কথা না বললেই না। তিনি অভিভাবকের মতোই জবাকে আগলে রেখেছেন বলে জানালেন জবা।

কলেজের শিক্ষকেরা জবাকে জানিয়েছিলেন নিয়মিত কলেজে যাওয়ার দরকার নেই। তবে জবা নিয়মিতই ক্লাস করেন। কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রশীদ বললেন, ‘পড়ালেখার প্রতি জবার অদম্য ইচ্ছা। ও বেশ মনোযোগী। প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে কলেজে আসা-যাওয়া এবং কলেজের তিনতলায় ওঠা–নামা করে।’

কলেজের অধ্যক্ষ মো. আজিজুর রহমান বললেন, ‘জবা সবার কাছে অনুকরণীয়। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। নানা প্রতিকূলতার পরও ভালো ফল করে জবা প্রমাণ করেছে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে জীবনে সফল হওয়া সম্ভব।’