Thank you for trying Sticky AMP!!

৩০ মিটার পথ যেতে ঘুরতে হয় ৪ কিলোমিটার

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে যেতে হলে দুই কিলোমিটার দূরে শুকলাল হাটের এই ইউ টা​র্ন ঘুরে আসতে হয় l প্রথম আলো

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও দোয়াজীপাড়া পুনর্বাসন এলাকার অবস্থান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এপার-ওপার। দূরত্বের বিবেচনায় ৩০ মিটার। পুনর্বাসনকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড হলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে শুকলাল হাটের ইউ টার্নে দিক বদল করতে হবে। সেখান থেকে পুনর্বাসন এলাকায় আসতে পাড়ি দিতে হবে আরও দুই কিলোমিটার। সব মিলিয়ে স্টেশনের অপর পাশের ঘরবাড়ির আগুন নেভাতে পাড়ি দিতে হবে চার কিলোমিটার।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে পাশাপাশি অবস্থিত সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সও রোগী পরিবহন করতে গিয়ে একই দূরত্ব পাড়ি দেয়। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সীতাকুণ্ড সদর থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনের পাশে অবস্থিত। জনগুরুত্বপূর্ণ এ দুই প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি ইউ টার্ন রয়েছে পৌনে এক কিলোমিটার উত্তরে সীতাকুণ্ড সদর দক্ষিণ বাইপাস ও দুই কিলোমিটার দক্ষিণে শুকলালহাট এলাকায়। দুটি প্রতিষ্ঠানের সামনাসামনি কোনো ইউ টার্ন না থাকায় আহত রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে আনার ও আগুন িনয়ন্ত্রণের কাজে সময় বেশি লাগছে।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, গত ঈদুল আজহা থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ওই এলাকায় পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৩ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্থানে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহত ব্যক্তিদের সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্য কোনো গাড়ি দিয়ে। ইউ টার্ন না থাকায় দেড় থেকে চার কিলোমিটার পথ ঘুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের নিতে হয়।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. ফকরুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়া প্রয়োজন। যার কারণে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠানের সামনে ইউ টার্ন থাকা প্রয়োজন। ইউ টার্ন করার জন্য তিনি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্স ঢোকার সুবিধার জন্য ইউ টার্ন রাখা উচিত। সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তা রাখা হয়নি। অথচ সীতাকুণ্ডের এমনও স্থান আছে যেখানে ১০০ হাতের মাথায় দুটি ইউ টার্ন রয়েছে। পথ বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মুমূর্ষু রোগী ও প্রসূতি রোগীদের জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে মহাসড়কের যানজটেও পড়তে হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন বাংলার সভাপতি কামরুল হাসান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত এপ্রিল মাসে তাঁরা মানববন্ধন করেছিলেন ইউ টার্নের দাবিতে। উপজেলা প্রশাসন ও সওজ কর্মকর্তাদের স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
বেসরকারি সংগঠন ইপসার সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি শাহ সুলতান শামীম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের বিপরীতে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধী স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে প্রতিবন্ধীদের সেবা নিতে অনেক দূর ঘুরে আসতে হয়। কাছাকাছি ইউ টার্ন থাকলে তাঁদের এ কষ্টটুকু হতো না।
কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর ফাহামি বলেন, বিভিন্ন সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সামনে ইউ টার্ন দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয়দের ইউ টার্নের দাবিটি যৌক্তিক। তাই ওই স্থানে ইউ টার্ন স্থাপনের জন্য চার লেনের প্রকল্প পরিচালক বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সম্প্রসারিত চার লেনের সীতাকুণ্ড অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প ব্যবস্থাপক জুলফিকার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই স্থানে ইউ টার্নের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি তাঁকে দিয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনও স্থানীয়দের দাবির কথা তাঁদের জানিয়েছেন। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
জুলফিকার আহমেদ আরও বলেন, সম্প্রসারিত চার লেনের কাজ শেষে ইউ টার্নের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হতে পারে। তখন কোনো কোনো স্থানে নতুন করে ইউ টার্ন করা হবে।