Thank you for trying Sticky AMP!!

৪০ ঘণ্টা কাজে বড্ড ধকল

সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিসের কাজে ডুবে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। ছবিটি প্রতীকী।

কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের বাইরে কাজ করতে হয়। কখনো তা করতে হয় অফিসের প্রয়োজনে, কখনোবা নিজের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে। দেখা যায়, এভাবে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা বা এর বেশি সময় সামলাতে হচ্ছে কর্মস্থলের ধকল। 

উন্নত দেশগুলোতে কর্মঘণ্টা নিয়ে নানা বিধি-নিষেধ থাকলেও উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোয় এসবের বালাই নেই। সেখানে বেশি কাজ মানেই দীর্ঘ সময় ধরে অফিস নিয়ে মাথা ঘামানো।

কিন্তু দীর্ঘ কর্মঘণ্টা স্বাস্থ্যের জন্য কি ভালো? আবার যে কারণে বেশি সময় অফিসে থাকছেন, সেই কাজইবা কতটুকু হচ্ছে? আমেরিকান জার্নাল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেডিসিনে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা বা এর বেশি সময় অফিসের কাজে ডুবে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। এতে একদিকে যেমন শারীরিক ক্ষতি হয়, তেমনি অতিরিক্ত চাপে হতে পারে মানসিক সমস্যাও।

কিছু দিন আগে জাপানে এক সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন উঠেছিল। ৩১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি এক মাসে ১৫৯ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ (ওভারটাইম) করেছিলেন এবং সেই কারণে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। বলা হয়েছিল, ওই নির্দিষ্ট মাসে মাত্র দুদিন ছুটি কাটাতে পেরেছিলেন তিনি।

গবেষকেরাও বলছেন, লম্বা সময় ধরে কাজ করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় হৃদ্‌যন্ত্রের। আমেরিকান জার্নাল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৬১ থেকে ৭০ ঘণ্টা কাজ করলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় ৪২ শতাংশ। আর সপ্তাহে ৭১ থেকে ৮০ ঘণ্টা কাজ করলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ শতাংশে।

এ গবেষণার ফলাফল খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশ্বজুড়ে হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর হার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই দেশে প্রতিবছর পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় হৃদ্‌রোগে। এই হিসাব থেকে ধারণা পাওয়া যায় সারা পৃথিবীতে অঙ্কটি কত বড় হবে।

অন্যদিকে, গবেষণাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত ভিন্ন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যক্তি লম্বা সময় ধরে পেশাগত কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্যদের (যাঁরা সীমিত কর্মঘণ্টা কাজ করেন) তুলনায় স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

কেউ কেউ মনে করেন, অতিরিক্ত কাজ করলেই দক্ষতা বাড়ে। এই দলে অফিসের বড় কর্তারা যেমন আছেন, তেমনি আছেন কিছু কাজপাগল কর্মীও। তবে আদতে শুধু অতিরিক্ত কাজ করলেই কর্মদক্ষতা বাড়ে না, উল্টো কমে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি। অথচ সেখানে একজন কর্মীকে প্রতি সপ্তাহে কর্মক্ষেত্রে মাত্র ৩৫ দশমিক ৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় করলেই হয়!

কর্মক্ষেত্রে কম সময় কাজ করার মতো বিষয় শুরুর দিকে উদ্ভট মনে হতেই পারে। তবে একে বাস্তবে রূপ দিতে এবং ফলপ্রসূ করতে হলে কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে কর্মীকেও। নিয়োগকর্তা আপনার কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলেও কাজের চাপ তো থাকছেই। কম সময়ের মধ্যে সেই কাজ সুচারুভাবে শেষ করাই তখন কর্মীর কাছে মূল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:

প্রথমত, রাতে ভালো করে ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীর ও মনকে চনমনে রাখবে। এতে অফিসের কাজে পুরোপুরি মন দিতে পারবেন। এতে অল্প সময়েই সারতে পারবেন বেশি কাজ।

দ্বিতীয়ত, প্রতিদিনের কাজের একটি সুষ্ঠু তালিকা নিজেকে তৈরি করতে হবে। একেকটি কাজ শেষ করে ওই তালিকায় একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া ভালো। এতে উৎসাহ বাড়বে।

তৃতীয়ত, অফিসের কাজ বাড়িতে আনবেন না। সব সময় অফিসের কাজ নিয়ে চিন্তা করলে তা আপনার শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর চেয়ে সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার অভ্যাস গড়ুন। এতে অফিসও যেমন উপকৃত হবে, তেমনি মানসিক শান্তিতে থাকবেন আপনিও।

ওয়েবএমডি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন অবলম্বনে অর্ণব সান্যাল