Thank you for trying Sticky AMP!!

৬৫০ শহরের পথে পথে

>

যুক্তরাষ্ট্রের মনট্যানা রাজ্যের গ্ল্যাসিয়ার ন্যাশনাল পার্কে তানভীর অপু। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ছেলে তানভীর অপু। পরিব্রাজক। ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সৃষ্টির রহস্য জানতে ঘুরেছেন ৬৫ দেশের ৬৫০টি শহর। অপু শুনিয়েছেন বিচিত্র ১০টি ভ্রমণগল্প। সঙ্গে রইল তাঁর পর্যটক হয়ে ওঠার গল্প।

তানভীর অপু বেশ কয়েক বছর ধরে ফিনল্যান্ডে থাকেন। নাগরিকত্বও পেয়েছেন সে দেশের। গত অক্টোবরে তাঁর সঙ্গে যখন মেসেঞ্জারে কথা হচ্ছিল, তখনো তিনি ঘুরছেন। মিসর, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল—এই তিন দেশ ঘুরে ঢাকায় এসেছিলেন কয়েক দিনের জন্য। তারপর স্ত্রী সীমা খানকে নিয়ে আবার গেলেন ভারতে ভ্রমণ করতে। তাই মেসেঞ্জারে যখনই টোকা দিই, তখনই বলেন, ‘ব্রো (ব্রাদার) শিগগিরই দেখা হচ্ছে!’

ঢাকার মাটিতে তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া গেল ২০ নভেম্বর। জানালেন, কিছুদিন দেশেই আছেন। ফিনল্যান্ডে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। প্রশ্ন করি, আপনার চাকরি সামলাবে কে? মৃদু হাসেন তানভীর অপু। বলেন, ‘আমার তো কোনো চাকরি নেই। কোনো কিছুই স্থায়ীভাবে করি না। যখন প্রয়োজন হয় কিছু একটা করি।’ এই কিছু একটার মধ্যে হয়তো কখনো পানশালায় কাজ করছেন, কখনো আবার যোগ দিচ্ছেন জাহাজের রেস্তোরাঁয়। মাঝে কিছুদিন নিজেই একটা রেস্তোরাঁ খুলে বসেছিলেন। সে ব্যবসাও গুটিয়ে একসময় বেরিয়ে পড়েছিলেন ঘুরতে।

তানভীর অপুকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা বলবেন, ‘ও তো এমনই।’ এমন না হলে কেউ মাসের পর মাস, কখনোবা পুরো একটা বছর ঘুরে বেড়াতে পারে! এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রের ৩২টি রাজ্য ঘুরে দেশে এসেছিলেন। এর মধ্যে আরও কয়েকটি দেশ ঘুরে ফেললেন। অঢেল সম্পদের মালিক ছাড়া এমন নিশ্চিন্ত ভ্রমণজীবন কেউ যাপন করতে পারেন? চট করে কথা ধরেন তানভীর অপু, ‘আমার সম্বল বলতে কিন্তু কাজ। পরিশ্রম। খণ্ডকালীন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হই। পয়সা জোগাড় হলেই বেরিয়ে পড়ি ঘুরতে। ভ্রমণের জন্য মনের ইচ্ছেটা জরুরি, অর্থ নয়। আমি সস্তা হোটেলে রাত কাটাই, সস্তা খাবার খাই, প্রচুর হাঁটি। নতুন একটা শহর হেঁটে হেঁটে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলি। জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।’

নতুন কোনো দেশ, নতুন কোনো শহরের অজানাকে জানার এ আগ্রহ তানভীর অপুকে নিয়ে গেছে ৬৫ দেশের প্রায় ৬৫০টি শহরে। কোনো শহরে যাওয়ার আগে সেখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সন্ধান করেন অপু। আগেই জেনে নেন সেখানে কোনো বিখ্যাত মানুষের বাড়ি আছে কি না, জাদুঘর আছে কি না, জাতীয় উদ্যান বা বিখ্যাত ভাস্কর্যের খোঁজও নেন। পরিকল্পনা পাকা করেই পথ ধরেন নতুন কোনো অজানা দর্শনে। এখন নিজেও একটা দর্শন দাঁড় করিয়েছেন। শোনান তিনি, ‘আমাদের ঘর থেকে বের হতেই হবে। নিজেকে জানতেই হবে। এ জন্য ভ্রমণ করা দরকার। অর্থ-বিত্ত দিয়ে কী হবে বলুন। যার তেমন কিছু নেই, সে যাক না পাশের এলাকায়, পাশের জেলায়, পাশের বিভাগে।’  

৩৮ বছর বয়সী অপুর বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। মা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক পদে চাকরি করতেন, বাবা ইব্রাহীম আলী দেওয়ান ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় অপু। রাজশাহীতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হয়েছিলেন নবম শ্রেণিতে। বিকেএসপির হকি দলের খেলোয়াড়ও ছিলেন। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়েও হকি খেলেছেন কয়েক বছর। এই ফাঁকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক পড়ার সময়টাতেই চলে যান ফিনল্যান্ডে। ২০০৫ সালের কথা সেটা।

ফিনল্যান্ডে যাওয়ার পরই পর্যটক জীবনের গোড়াপত্তন। ফিনল্যান্ডের বাইরে তাঁর দেখা প্রথম দেশ ছিল এস্তোনিয়া। এরপর গেলেন সুইডেনে। অপু বলছিলেন, ‘যত নতুন দেশে যাচ্ছি, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। নতুন মানুষের সংস্পর্শ পাচ্ছি। জানার আগ্রহ বাড়ছে। বাড়ছে ভ্রমণের স্পৃহাও।’

সে স্পৃহার জোরে ২০০৬ সালেই বন্ধুদের সঙ্গে গাড়িতে পাড়ি দিয়েছেন হাজার হাজার কিলোমিটার। ওই যাত্রায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখেছেন। ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসেছিল জার্মানিতে। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন রুস্তভ শহরে। সেই যে ভ্রমণযাত্রা শুরু হলো, তা এখনো চলছে। তাঁর ভাষায়, ‘পুরো পৃথিবীটাই আমার কাছে দেশ। বিশ্বটা ভাগ করেছে মানুষ। আমি ভাগ হতে চাই না।’

তানভীর দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানোর ছবিগুলো নিয়ে চারটি প্রদর্শনী করেছেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রকাশ করেছেন যাত্রা হলো শুরু নামে একটি বইও। এখন স্বপ্ন দেখেন নিজের অভিজ্ঞতা স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। নিজের স্বপ্নের কথা বলে যান, ‘বিভিন্ন দেশ ঘুরে আমার হয়তো অর্থ ফুরিয়েছে, কিন্তু জমে আছে অনেক গল্প। বিচিত্র সৃষ্টির ছবি-ভিডিও। এগুলোই আমার সম্পদ। এসবই আমি স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের দেখাতে চাই। ভ্রমণে আগ্রহী করতে চাই। স্বপ্ন দেখাতে চাই।’

আমরাও তো চাই তানভীর অপুর স্বপ্ন বাস্তবের আলো পাক।  

তানভীরের দেখা ১০

টেগর রোড

হাঙ্গেরি

যেখানেই যাই, যে দেশেই যাই, সেখানেই দেখি রবি বাবু হাজির! হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে বালাতুনফিয়ডে গিয়েও তাঁর দেখা মিলল। ১৯২৬ সালে কবি এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কক্ষে ছিলেন, সেটিতে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা হয়েছে। পাশের সড়কটিও তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। ‘টেগর রোড’-এ বিভিন্ন জায়গায় শোভা পাচ্ছে কবির প্রতিকৃতি। ২০১৫ সালের কোনো একসময় কবির নামে সেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ল—‘আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ...’।

পেঙ্গুইনের কুচকাওয়াজ

অস্ট্রেলিয়া

তারা আসবে বলে ঘণ্টাখানেক নিঃশব্দে বসে আছি! কিন্তু আসার নামগন্ধও নেই। একবার মনে হলো, এ যাত্রায় নাহয় পেঙ্গুইনের কুচকাওয়াজ দেখা বাদই থাক। ঠিক তখনই আগমন। চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে গেল সারি সারি পেঙ্গুইন। ওদের মুখে খাবার। সমুদ্র থেকে বাচ্চার জন্য মুখে খাবার নিয়ে ফিরছে। পেঙ্গুইন যেন বিরক্তবোধ না করে, তাই ছবি তোলা নিষেধ। চুপচাপ বসে থাকলাম।

জায়গাটার নাম ফিলিপ আইল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার এই দ্বীপে ২০১৪ সালে দেখি পেঙ্গুইন। সবচেয়ে ছোট জাতের পেঙ্গুইনও এখানে আছে।

সবচেয়ে বড় গাছের তলে

যুক্তরাষ্ট্র

ইতিহাস কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘জেনারেল শারম্যান ট্রি’। তাকিয়ে দেখব আর কী! গাছের মাথা খুঁজে পাই না। জাঁদরেল, বয়সী আর আকাশ ছোঁয়া এ বৃক্ষের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া সিকোয়া ন্যাশনাল পার্কে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গাছ এটি। উচ্চতা ২৭৫ ফুট, অর্থাৎ প্রায় ৩০তলা ভবনের সমান উঁচু। গুঁড়ির পরিধি প্রায় ১০৯ ফুট, ব্যাস প্রায় ৩৭ ফুট। বয়স আনুমানিক ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ বছর। ২০১৭ সালে গিয়ে গাছটার পাশে দাঁড়িয়েছি, পেয়েছি গাছের আদি ঘ্রাণ, বেঁচে থাকার মন্ত্র।

বারবেরিয়ানদের বাড়ি

মরক্কো

অ্যাটলাস পর্বতমালা গোটা মরক্কোকে ঘিরে রেখেছে। আর এই পর্বতের বাসিন্দা বারবেরিয়ানরা। ২০১৭ সালে গিয়েছিলাম সেই জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপন ও তাদের ঐতিহ্যের সন্ধানে। এখনো তারা আদি জীবনে অভ্যস্ত। বারবেরিয়ান গ্রামে দেখি, জাঁতায় ভাঙাছে ভুট্টা, তৈরি হচ্ছে ভুট্টার আটা। তাদের চুলার গঠন, তৈজসপত্র, মাটির তৈরি থালাবাসন ও রান্নার সামগ্রীর মধ্যে অন্য রকম গড়ন। একজন আমাদের আন্তরিক পরিবেশে গরম এক কাপ চা পান করালেন। মনে থাকবে এমন উপত্যকায় বসে উষ্ণ এক কাপ চায়ের কথা।

ড্রাকুলা ক্যাসল

রোমানিয়া

গল্প শুনে শুনেই  কল্পনা করেছিলাম, কেমন হবে রোমানিয়ার ড্রাকুলা ক্যাসল। এক সকালে রওনা দিলাম। অনেক দূর থেকেই ক্যাসলের স্তম্ভ দেখা যাচ্ছিল। কাছাকাছি যে এসেছি, তা বোঝা গেল ড্রাকুলাদের দেখে। সড়কের পাশে মাঝেমধ্যেই ভয়–জাগানিয়া অনেক কিছুই ছিল।

ড্রাকুলা ক্যাসলে এসে দেখি, বাড়িটা কেমন স্যাঁতসেঁতে। মনে হয়, বহু বছর যেন ঘরদোরগুলোয় মানুষের যাতায়াত নেই। পরগাছা জন্মেছে। পুরোনো দুর্গের মতো। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই বুঝতে পারলাম, সিঁড়িটা ধীরে ধীরে সরু হয়ে উঠছে। ড্রাকুলার ছুরি, শিরস্ত্রাণ, বাটি-খাট-টেবিলসহ নানা তৈজসপত্র দেখলাম। ড্রাকুলা কত নির্মমভাবে মানুষ মারত, তারও নিদর্শন দেখলাম। একটা চেয়ার আছে। অদ্ভুত সে চেয়ার। সেখানে বসিয়েই নাকি মানুষ মারা হতো। বাড়ির আঙিনায় একটা কুয়া আছে। সেখানে পয়সা ফেললে নাকি মনোবাসনা পূরণ হয়। ২০১৪ সালের সে যাত্রায় কোনো ইউরো ভ্রমণের সফলতা কামনা করে একটি কয়েন ফেলেছিলাম!

অশউইৎজের বিভীষিকা

পোল্যান্ড

বিশাল এলাকাজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া। কাছাকাছি যেতেই কেমন একটা চাপা ভয় চেপে বসল। কিছু তথ্য ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনেছিলাম। কিন্তু নৃশংসতা এখনো বাতাসে ভেসে থাকবে, তা কে জানত। এটি পোল্যান্ডের কুখ্যাত অশউইৎজ বন্দিশিবির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এখন। বন্দিশিবিরের ভেতরে হাঁটার সময় গা ছমছম করছিল। ঘরের ভেতরে একটা কক্ষে দেখলাম অসংখ্যা ব্রাশ। অন্য একটি কক্ষে মাথার চুল। পাশের কক্ষটাতে বিভিন্ন আকারের হাজারো জুতো। অনেক মানুষের ছবি সাঁটানো দেয়ালে। এগুলো বন্দিশিবিরে নির্যাতিত মানুষের। শুধু মাথার চুল, ব্রাশ কিংবা জুতোই নয়, ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস রাখা আছে নির্মমতার স্মারক হিসেবে। ২০১৩ সালে গিয়ে চার ঘণ্টা ছিলাম সেখানে।

মাদার তেরেসার জন্মভিটা

মেসেডোনিয়া

সড়কটা তাঁর নামেই—মাদার তেরেসা। সে সড়ক ঘেঁষা ছোট একটা বাড়ি। বাড়ির দেয়ালে ঝুলছিল মাদার তেরেসার চিরন্তন হাসি মুখের ছবিটি। ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিলল মাদার তেরেসার ব্যবহৃত আসবাব, কাগজপত্রসহ নানা কিছু। নোবেল পুরস্কারের স্মারকটাও সেখানে। আমি খুঁজচ্ছিলাম ভারতীয় উপমহাদেশের কোনো স্মৃতিচিহ্ন, পেলাম না। মেসেডোনিয়ার স্কোপেজ শহরের (তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া) এ বাড়িতেই ১৯১০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহীয়সী এ নারী।

আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর

মিসর

মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে আলেকজান্দ্রিয়া প্রায় ২০০ কিলোমিটারের পথ। এখানে না এলে আসলেই মিসর ঘোরা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ভূমধ্যসাগরের তীরে শহরটি মনোরম। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের নামানুসারে এ শহরের নামকরণ। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহরটি খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৪ সালে তৈরি বলে মনে করা হয়। এখানে রয়েছে বাতিঘর, পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একটি। ভেবেছিলাম ছোট একটা বাতিঘর। কিন্তু দেখতে গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ। দূর থেকে দেখতে অনেকটা রাজপ্রাসাদের মতো। ভেতরে গেলে বোঝা যায় রাজপ্রাসাদ নয়, সাধারণ মানুষের আস্তানা ছিল এটি। বাতিঘরের দেয়াল অনেক ‍সুন্দর। ভেতরে দেখলাম আস্তাবলও ছিল। মানুষকে শাস্তি দেওয়া হতো এমন কক্ষেরও দেখা মিলল। চলতি বছরই দেখেছি এই বাতিঘর।  

উত্তরের শেষ সীমানা

নরওয়ে

সড়কপথের ভ্রমণ ছিল সেটা। যাত্রাপথে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আমরা পৌঁছাই পৃথিবীর উত্তরের শেষ শহর নরওয়ের হ্যামারফেস্ট। আরও শেষ প্রান্তে উত্তর মহাসাগরের তীরে নর্থ ক্যাব; পৃথিবীর উত্তরের শেষ প্রান্ত। এরপর মানুষ আর পায়ে হেঁটে যেতে পারে না। গুগল করে অনেকবার দেখেছি জানার জন্য। কিন্তু ২০১৫ সালে নিজ চোখে দেখার অভিজ্ঞতাই ছিল ভিন্ন রকম। গাড়ি থেকে নেমে আনমনেই ‘ওয়াও’ বলতে হলো। পুরো যাত্রার ক্লান্তি কর্পূরের মতো উড়ে গেল। পাহাড়ের একটা অংশ সমুদ্রের ওপর চলে গেছে। পাহাড়ের শেষ সীমায় বড় একটা বিশ্বমানচিত্র রয়েছে। ইচ্ছেমতো ছবি তুলে নিলাম।

পৃথিবীর প্রাচীন শহর

১০

ফিলিস্তিন

দূর থেকে মরুভূমির মতো মনে হচ্ছিল। কাছে যেতে যেতেই স্পষ্ট হলো ‘জেরিকো’। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো শহরের তকমা রয়েছে এ শহরের সঙ্গে। গত মাসেই ঘুরে এসেছি। শহর বলতে এখন শুধু টিকে আছে অস্তিত্ব। কোথাও কোথাও খননকাজ চলছে। ঘরের মতো দেখতে। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন পুরোনো শহর—বললেন, শহরটা ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে গেছে। একবার ধ্বংস হয়েছে আবার গড়ে তোলা হয়েছে। এখন যেমন দেখা গেল, পাশের আলোঝলমলে নতুন শহরটাকে। ইতিহাস বলছে, খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০০ সালে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে এ শহরে।