Thank you for trying Sticky AMP!!

'আপুনি'র পুনিজ কিচেন

ফেসবুকে আলোচনায় আসে পুনিজের কেক। এর আগে দেশে এত বড় কেক বানানো হয়নি বলেও জানান অনেকে। ছবি: সংগৃহীত

অফিসের দরজা খুলে দিতেই কেকের সুবাস নাকে ঠেকল। ভেতরে ছিল কেক তৈরি ও ছবি তোলার নানান সরঞ্জাম। এভাবেই সাজানো হয়েছে পুনিজ কিচেনের অফিস। শিক্ষকতা ও চিকিৎসা পেশা ছেড়ে পুনিজের উদ্যোক্তারা এখন পুরোদস্তুর কেকশিল্পী।

বাসায় উম্মে আকলিমার বানানো কেক খেয়ে সবাই ব্যবসা করার জন্য উৎসাহ দিত। বোনের জন্মদিনের কেক বানানোর পর ব্যবসার চিন্তাটা মাথায় ঢুকে যায়। কাছের মানুষদের উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিলেন বন্ধু আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এখন অবশ্য তিনি আকলিমার জীবনসঙ্গী।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় পুনিজ কিচেনের যাত্রা। নামকরণ নিয়ে উম্মে আকলিমা বলেন, ‘বড় বলে সবাই আমাকে “আপুনি” ডাকে। আদরে “আপুনি” থেকে “পুনি” হয়েছে। আর সেখান থেকেই পুনিজ কিচেন।’

পুনিজ কিচেনের পরিচিতিটা বাড়ে মূলত একটা মেলা থেকে। আকলিমা বলেন, ‘আমি মেয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। রাংতা মেলা করি আমরা। সে সময় মেলার প্রথম দিন দুপুরেই যেসব বেকড আইটেম বানিয়েছিলাম, তা শেষ হয়ে যায়।’ তাঁর কথার সঙ্গে যোগ করে আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ওই মেলায় আমাদের দুটো কেক ভাইরাল হয়। মেকআপ আর বাজারের ফর্দ থিমে দুটি কেক সবাই খুব পছন্দ করেছিলেন। নিজেদের লোকদের বাইরে অন্যরাও আমাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন।’

উম্মে আকলিমা ও আবু হেনা মোস্তফা কামালের কেক বানানোর প্রশিক্ষণ ছিল না। ইন্টারনেট ঘেঁটে শিখতেন। কিছু নিজেরাই ভেবে তৈরি করতেন। শুরুর দিকে তখন দেশে কাস্টমাইজড কেক নিয়ে তেমন কোনো ধারণা বা কাজও ছিল না। সাপ্লাই চেইন বলে কিছু ছিল না। যেসব দোকানে বেকারির জিনিস পাওয়া যায়, সেখানে গিয়ে নানা জিনিস আনাতে হয়েছে। তবে এখন মার্কেট তৈরি হওয়ায় কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া কাস্টমাইজড কেকও অনেকে তৈরি করছেন।

আকলিমা পড়েছেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে, এরপর এমবিএ করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষকতাও করেছেন। পুনিজকে সময় দিতে ২০১৪ সালেই শিক্ষকতা ছাড়েন। অন্যদিকে, আবু হেনা ডেন্টালে পড়াশোনা শেষে আর প্র্যাকটিস করেননি। এখন দুজনেই কেকশিল্পী। আবু হেনা বলেন, ‘আমাদের দুজনের এ কাজ পছন্দ। এটা করতেই ভালোবাসি।’

তবে উম্মে আকলিমা বলেন, ‘বাসায় কাজ করতাম দেখে আশপাশের লোকদের থেকে নানা রকম কথা শুনতে হতো। প্রতিবেশীদের নানান কৌতূহল। শেফ হওয়াকে ভালো চাকরি হিসেবে দেখা হয় না। শুনতে হতো, কোনো কাজ পারে না তাই রান্না করছে। কিন্তু আমরা চাই মানুষের এই ধারণা ভাঙুক।’

কেক বানাচ্ছেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও উম্মে আকলিমা। ছবি: দীপু মালাকার

ব্যবসার পরিসর বাড়ায় এই দম্পতি পক্ষে আর ঘরে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পরে আলাদা অফিস নেন। সম্প্রতি পুনিজ নিজেদের ফেসবুক পেজে একটি বিয়ের কেকের ছবি পোস্ট করেছিল। আকলিমা জানান, এ কেক তৈরি করার জন্য গ্রাহক পাঁচ মাস আগে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর কেকটা নিয়ে তাঁরা প্ল্যান করেন। কেকটার উচ্চতা ছিল সাড়ে সাত ফুট। তিন সপ্তাহ লেগেছে পুরোটা করতে। তিনি বলেন, ‘ক্রাফটিংয়ের কাজ আমরা আগে করি এবং কেকটা বানাই শেষে। বাসি কেক তো খাওয়া যায় না।’

উম্মে আকলিমা জানালেন, এখন জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী বা যে কোনো বিশেষ দিনে মানুষ মনের মতো একটি কেক কিনতে খরচের কথা তেমন একটা চিন্তা করেন না। অনেকে কেকের পেছনেই লাখ টাকার বেশি খরচ করেন।

কেকগুলোর পেছনে অনেক গল্প থাকে বলে জানান আকলিমা ও আবু হেনা। আকলিমা বলেন, ‘কখনো ক্লায়েন্ট নিজেই ডিজাইন দেন। আবার কখনো যে মানুষটার জন্য নিতে চান, তাঁর সম্পর্কে বলেন। সেখান থেকে আমরা ধারণা নিয়ে কেক তৈরি করি।’

সেলাই মেশিন থিমের একটি কেক খুব জনপ্রিয় ছিল জানিয়ে আকলিমা বললেন, ‘ওটা এক আপু তাঁর দাদির জন্য নিয়েছিলেন, যিনি ছোটবেলায় ওই আপুদের পোশাক তৈরি করে দিতেন। কেক অর্ডারের পেছনের গল্পটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

আবু হেনা বললেন, পুনিজের কেকে তাঁরা দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। এ পর্যন্ত দেশীয় অনেক ফুলকে তাঁরা কেকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

পুনিজ কিচেনে এখন সাতজন কাজ করছেন। এখানে কেকের অর্ডার করতে হলে অন্তত এক সপ্তাহ আগে দিতে হয়। এক কেজির কেকের দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়। তবে তাঁরা জানান, দাম মূলত নির্ভর করে কেকের ডিজাইনের ওপর।

পুনিজ আরও বড় পরিসরে আসতে চায়। আগামী বছর ট্রেনিং সেন্টারসহ একটি স্টোর দিতে চান আকলিমা ও আবু হেনা। দুজনেই জানান, বেকিং শেখার প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা গড়ে তুলতে চান তাঁরা। কেক বানানো শিল্প হিসেবে যেন প্রতিষ্ঠা পায়, সেটাই তাঁদের চাওয়া।