Thank you for trying Sticky AMP!!

'আমাজন প্রাইম'-এ ফাহমিদার লা-মোড

ফাহমিদা ইসলাম

দেশে বসে স্টাইলিস্ট জুতা পাওয়া এক বিশাল হ্যাপা। একে তো পাওয়াই যায় না, যদি পাওয়া যায় মাপ পাওয়া দায়! সেও যদি জোটে, জুতার দাম হয় আকাশছোঁয়া অথবা দু পা চললেই ছিঁড়ে যায়।

এসব সমস্যা ছিল ফাহমিদা ইসলামেরও। পথে চলতে গেলেই জুতা নিয়ে নানান সমস্যায় মন খারাপ হতো। 

তবে মাত্র ২৮ বছর বয়সেই সেই ফাহমিদা লা-মোড নামের একটি জুতার ব্র্যান্ডের মালিক। আছে চারটি শোরুম। একটি ওয়েবসাইট এবং বিশ্বখ্যাত কেনাকাটার ওয়েবসাইট আমাজনের ‘প্রাইম প্রোডাক্ট’ হয়ে উঠেছে তাঁর জুতা। আর ফাহমিদার বানানো জুতার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মান ও আধুনিক ফ্যাশনে দেশে তৈরি জুতা। একাধিক ক্রেতা জানালেন, জুতার দামও আহামরি বেশি নয়। আরাম ও টেকসই। 

কক্সবাজারের মেয়ে ফাহমিদা মাত্র ২২ বছর বয়সে শুরু করেন লা-মোড। ফাহমিদার স্কুল-কলেজর পড়াশোনা কক্সবাজারেই। তারপর থেকে ঢাকায় বসবাস। 

ফাহমিদা রাজধানীর বনানীর পথে হাঁটতেন আর ভাবতেন, দেশের এই ফ্যাশন স্ট্রিটে যদি তাঁরও একটা শোরুম থাকত। তত দিনে ফেসবুকে ব্যবসা জমিয়ে বসেছে লা-মোড। নিজেই বসে যান জুতার নকশা করতে। স্বামীও ব্যবসায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।

ফাহমিদা বললেন, ‘ভেবেছিলাম জামার মতো বানিয়ে ফেলব জুতোও, এই আশা নিয়ে যাই এক কারখানায়। মালিককে বুঝিয়ে বলি ঠিক কেমন
নকশা চাই। এরপর শুরু হয় আসল ঝামেলা। আমার নকশা আর জুতার কারিগরদের জ্ঞানের মধ্যে অনেক ফারাক। এই সুযোগে কারখানার মালিক আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মূলধন। আবার মন খারাপের পালা।’

টাকা খোয়া যাওয়ার পরও মোটেই বিচলিত হননি ফাহমিদা। তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক হয়ে চাকরি না করে ব্যবসায় নামায় এমনি বাড়ি থেকে চাপে ছিলেন ফাহমিদা। ফেরার পথও নেই। 

অনলাইন কোর্স, ইউটিউব থেকে শেখা শুরু করলেন ফাহমিদা। এরপর সাহস করে ২০১২-র শেষে একটা কারখানাই দিয়ে দিলেন।

হোম ডেলিভারিতে জুতা পাওয়ার সুযোগটি লুফে নিলেন ক্রেতারা। ফেসবুক পেজে ক্রেতাদের মতামত, পছন্দ, চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়েই পথ চলা শুরু করেন ফাহমিদা। 

 বিশ্বখ্যাত কোম্পানির জুতার ডিজাইনাররা ফাহমিদাকে হাতে ধরে জুতা তৈরির নিয়মকানুন শেখাতে থাকেন। ফাহমিদার সুযোগ হয় বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন কারখানা দেখার। কম বয়সে জুতা বানানোয় পারদর্শী হওয়ার পাশাপাশি শোরুম চালু করলেন বনানীতে। তারপর আস্তে আস্তে উত্তরা, পান্থপথ আর বেইলি রোডেও শো রুম চালু করলেন।

ফাহমিদা বললেন, ‘এটা কি থাইল্যান্ড থেকে আনা? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হরহামেশাই হই। এমনও হয়েছে, বাংলাদেশে তৈরি শুনে চলে যান ক্রেতা। তারপরও আমি বলি, আমাদের জুতা বাংলাদেশে তৈরি। এতে কে কী ভাবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। আমরা জুতা তৈরি করি স্বাধীন-শক্তিশালী বাংলাদেশি নারীদের জন্য। এই স্বকীয়তা বহন করতে চাই সব সময়।’

দেশের ফ্যাশন দুনিয়ায় জুতার এই সংযোজনের জন্য ফাহমিদাকে সম্প্রতি কালার ম্যাগাজিন প্লাটিনাম বিজনেস ওমেন পুরস্কার দিয়েছে।

ফাহমিদা জানালেন, তাঁর জুতার নকশার আকর্ষণীয় দিক হচ্ছ, জুতায় জুড়ে দেওয়া হয় নানান অলংকার, ফলে একই জুতো পায় নানান রূপ।

ইদানীং জুতার পাশাপাশি ব্যাগ তৈরি করছেন ফাহমিদা। তবে সবচেয়ে যেটা আকর্ষণীয় তা হচ্ছে নতুন বিয়ের কনের পছন্দ অনুযায়ী শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে কাস্টোমাইজড জুতা বানিয়ে দেওয়া। এতে সাড়াও মিলেছে প্রচুর।