Thank you for trying Sticky AMP!!

'আমাদের দেখতে ভিড় লেগে যেত'

বাঁয়ে শিরীন সুলতানা, মাঝে মনোয়ারা বেগম, ডানে খালেদা শাহারিয়ার কবির। ছবিটি ১৯৬৪ সালে তোলা। সংগৃহীত

‘আমার নিজের কখনো মনে থাকে না যে আমি দেশের প্রথম নারী প্রকৌশলীদের একজন। কিন্তু “এই যে ফার্স্ট লেডি ইঞ্জিনিয়ার” বলে লোকজনই অন্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।’ হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেন খালেদা শাহারিয়ার কবির, তিনি ডোরা রহমান নামেই বেশি পরিচিত।

 বাংলাদেশে প্রথম যে তিনজন নারী প্রকৌশল বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, তার মধ্যে খালেদা শাহারিয়ার একজন। অপর দুজনের একজন শিরীন সুলতানা এখন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। আর মনোয়ারা বেগম ২০০২ সালে মারা গেছেন।

 খালেদা শাহারিয়ারের (৭২) সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। জানালেন, বাবা মো. কবির উদ্দিন দেশভাগের পর কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এটাই ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইপুয়েট) এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বুয়েট হয়।

সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে ওই সময় ইপুয়েটে মেয়েদের ভর্তি নেওয়া হতো না।

 খালেদা শাহারিয়া বললেন, ‘আমি আর শিরীন তখন ইডেন কলেজে পড়ি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ইঞ্জিনিয়ারই হব। আমাদের ইচ্ছার কথা হলিক্রস কলেজের মনোয়ারার কানে পৌঁছাল। তিনজন মেয়ে দেখে স্যাররা রাজি হলেন। তখন প্রথম বর্ষে একটিই সাধারণ বিভাগ ছিল। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে পুর, তড়িৎ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ ভাগ হতো।’

খালেদা শাহরিয়ার জানালেন, পুরকৌশলে মেয়েদের পড়তে দেওয়া হতো না। কারণ এই বিভাগে পড়লে সাভারে এক মাসের জন্য থাকতে হবে সার্ভের জন্য। তাই তিনজনকে শর্ত দেওয়া হলো, তাঁরা পুরকৌশলে পড়তে পারবেন না। শর্ত মেনেই ভর্তি হলেন তাঁরা। দ্বিতীয় বর্ষে উঠে শিরীন ও খালেদা নিলেন তড়িৎকৌশল বিভাগ।

খালেদা বলেন, ‘আমি আর শিরীন স্যারদের কাছে গিয়ে বললাম পুরকৌশলে পড়ব। কিন্তু স্যাররা কিছুতেই রাজি নন। পরে আমরা বললাম, সংবিধানে তো বলা নেই পুরকৌশলে মেয়েরা পড়তে পারবে না। তাই আপনারা পড়তে না দিলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব।’

খালেদা শাহারিয়ার কবির। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে খালেদা শাহারিয়ারদের তিনজনের ছবি দিয়ে কেউ লিখেছিলেন, তাঁরা মামলা করে ইপুয়েটে পড়েছিলেন। তারপর তা এখন রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে খালেদা শাহারিয়ার বললেন, ‘তথ্য বিকৃতি করে কারা যেন এ কথা ছড়িয়েছে। আমাদের মামলা করতে হয়নি।’

১৯৬৮ সালে খালেদা শাহারিয়ার কবির ও শিরীন সুলতানা বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে মনোয়ারা বেগম কেমিকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি পান।

১৯৬৯ সালে খালেদা শাহারিয়ার প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমানকে বিয়ে করেন। ১৯৭০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়ে খালেদা ২০০৪ সালে অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে অবসর নেন। স্বামী ২০১৪ সালে মারা যাওয়ার পর ধানমন্ডির বাসায় একাই থাকেন। একমাত্র সন্তান শিখা রহমান বুয়েটের প্রভাষক ছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।

খালেদা শাহারিয়ার বললেন,‘ দেশে নারীদের জন্য প্রকৌশলী হওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে আমাদের তিনজনের নাম উচ্চারিত হয়, এটা ভাবতেও ভালো লাগে। আমাদের দেখতে তখন ভিড় লেগে যেত। অন্যদিকে অনেকে ভাবত, আমরা ভর্তি হয়েছি ঠিকই, কিন্তু পাস করতে পারব না। আমরা পাস না করা পর্যন্ত কোনো মেয়ে ইপুয়েটে ভর্তি হয়নি। আমরা পাস করে বের হওয়ার পর মেয়েরা ভরসা পেয়েছেন। তাঁরা প্রকৌশল বিভাগে পড়ার সাহস ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।’