Thank you for trying Sticky AMP!!

'আমার জন্য প্রথম জাতীয় সংগীত বেজেছে'

>
বিজয় মঞ্চে মাবিয়ার সেই মুহূর্ত l ছবি: সংগৃহীত
মাবিয়া আক্তার। ভারোত্তোলনে সোনা জয়ের পর ভারতের গুয়াহাটির বিজয় মঞ্চে জাতীয় সংগীত বাজার সময় আবেগে কাঁদলেন। এবারের দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের শুরুতে সোনার জন্য হাপিত্যেশ করতে থাকা বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্মকর্তাদের মুখে হাসি ফোটালেন দেশের প্রথম সোনা উপহার দিয়ে। গুয়াহাটিতে মাবিয়ার সাক্ষাৎ​কারটি নিয়েছেন বদিউজ্জামান


প্রশ্ন: পদক জেতার পর অনেক কাঁদছিলেন। কেন?
মাবিয়া: প্রথমত আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে সোনা জিতেছি। ভারতের রিনা প্রথম লিফট মিস করতেই ড্রেসিংরুমে গুঞ্জন, আজ তোর একটা কিছু হয়েও যেতে পারে। এরপর ও যখন টানা তিনটি লিফট ওঠাতে পারেনি, তখন কোচ স্যার বললেন, তুই সোনা জিতে গেছিস। আনন্দে চোখে পানি চলে এল।
প্রশ্ন: কিন্তু বিজয় মঞ্চে উঠে তো সারা দেশকে কাঁদিয়েছেন?
মাবিয়া: আমার তখন খুবই গর্ব হচ্ছিল। আমার জন্য গেমসে প্রথম জাতীয় সংগীত বেজেছে, ভাবতেই কান্না আসছিল। যখন জাতীয় পতাকার দিকে চাইলাম, তখন কান্নার দমক আটকে রাখতে পারছিলাম না।
প্রশ্ন: আপনার খেলা নিয়েই তো সংশয় ছিল...
মাবিয়া: হ্যাঁ। অনুশীলনে ব্যথা পেয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছিলেন, এই ব্যথা নিয়ে খেলা ঠিক হবে না। রাতে হাতের ব্যথাটা অনেক ছিল। হাত ভাঁজ করতে পারছিলাম না। কনুইয়েও ব্যথা ছিল। গরম সেঁক দিয়ে ঘুমাতে যাই। আমি হতাশ হয়ে পড়ি। মনে হচ্ছিল, হয়তো খেলতে পারব না। এত কষ্ট করে এলাম, খুব খারাপ লাগছিল। সকালে উঠে মুখ ধুতে গিয়ে দেখি আমার হাতের ব্যথা অনেক কম। এরপরই খেলার সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: গেমসে সোনা জেতার আগে আর কী পদক জিতেছেন?
মাবিয়া: মালয়েশিয়ায় ২০১৩ সালে কমনওয়েলথ ভারোত্তলন চ্যাম্পিয়নশিপে রুপা জিতি। উজবেকিস্তানে আফ্রো-এশিয়া কাপে রুপা জিতি ২০১৪ সালে। ওই বছর থাইল্যান্ডে কিংস কাপে ব্রোঞ্জ জিতেছি। আর নেপালে প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১২ সালে জিতি ব্রোঞ্জ। পুনেতে গত বছর কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রতিযোগীকে হারিয়ে সোনা জিতি।
প্রশ্ন: এবার একটু পরিবারের কথা বলুন। আপনার বাবা কী করেন?
মাবিয়া: আমার বাবার নাম হারুনুর রশীদ। খিলগাঁওয়ে বাবার একটা মুদির দোকান আছে। আমরা দুই বোন, এক ভাই। আমি সবার ছোট।
প্রশ্ন: আপনি পড়াশোনা করছেন কোথায়?
মাবিয়া: আমি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেব। আমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি, তখন টাকার অভাবে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মামা বক্সার কাজী শাহাদাৎ হোসেন খেলার জগতে নিয়ে আসেন। ভার তুলেই বাংলাদেশ আনসারে চাকরি পেয়েছি।
প্রশ্ন: পরিবার থেকে কেমন সহযোগিতা পান?
মাবিয়া: পরিবারের সবাই আমাকে উৎসাহ দেয়। প্রতিবেশীরা বাবাকে বলে, ধন্যি মেয়ের ধন্যি বাবা।
প্রশ্ন: পড়াশোনা, অনুশীলন একই সঙ্গে কীভাবে চালিয়ে যান?
মাবিয়া: এ জন্য ফেডারেশন আমাকে অনেক সাহায্য করে। আমাদের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন স্যার, কোচ শাহরিয়া সুলতানা, শহীদ স্যার, বিদ্যুৎ ভাই, এরা যদি অনুশীলন না করাত, এত দূর আসতে পারতাম না।
প্রশ্ন: এই পদক নিশ্চয় আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে?
মাবিয়া: তা তো অবশ্যই। এবার আমি অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন দেখছি। এসএ গেমসে জিতেছি, এরপর কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসেও পদক জিততে চাই।
প্রশ্ন: অবসরে কী করেন?
মাবিয়া: পড়াশোনা আর অনুশীলনের ফাঁকে অবসর বেশি পাই না। তবে যতটুকু অবসর পাই গান শুনি।
প্রশ্ন: কোনো প্রিয় শিল্পী আছে?
মাবিয়া: কুমার বিশ্বজিৎ। ওনার একটা গান আমার ভীষণ প্রিয়।
প্রশ্ন: কোন গান?
মাবিয়া: ‘যেখানেই সীমান্ত তোমার, সেখানেই বসন্ত আমার...।’ আমার ডাকনাম সীমান্ত। আমার নামের সঙ্গে এই গানের কথায় মিল আছে তো, তাই প্রিয়।