Thank you for trying Sticky AMP!!

'আমি এখন সাইকেলে আসি'

সাইকেল নিয়ে সমবেত ছাত্রীরা l ছবি: প্রথম আলো

এদের একজন শারমিন আক্তার কমলগঞ্জ উপজেলার হাজি মো. উস্তোওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ি বিদ্যালয় থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে চক কবিরাজী গ্রামে। প্রতিদিন বাসে করে স্কুলে আসতে হতো তাকে। বাস না পেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। এতে ভাড়া লাগত ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

শারমিন আক্তার বলে, ‘আগে সাইকেল চালাতে পারতাম না। সাইকেল পাওয়ার পর শিখেছি। এখন আর প্রতিদিন ভাড়া লাগে না। আমি এখন সাইকেলে স্কুলে আসি।’ একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির আরেক ছাত্রী তামান্না জান্নাতও আসে সাইকেলে।

কালীপ্রসাদ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মৌমি রানি বৈদ্য থাকে দেওরাছড়া চা-বাগানে। বিদ্যালয় থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এখন সে-ও বাইসাইকেলে আসা-যাওয়া করে। এ রকম সাইকেলের গতিতে ছোটা ছাত্রীর সংখ্যা কমলগঞ্জে ৮০।

মিরতিঙ্গা চা-বাগানের মতি বারাইকের মেয়ে সাধনা বারাইক পড়ে কালীপ্রসাদ উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে। এখন মেয়ের সাইকেল হয়েছে। এতে খুব খুশি মতি বারাইক। বলেন, ‘মেয়ে আগে হেঁটে যাইত।’ এ রকম মেয়ে সাইকেল পাওয়ায় খুশি দেওরাছড়া চা-বাগানের আরেক অভিভাবক লক্ষ্মী নারায়ণ কুর্মী। এই অভিভাবকেরা মেয়েদের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে এসেছিলেন। এই মেয়েরা মিলনায়তনে আসার আগে সাইকেল শোভাযাত্রা করেছে। এটাও এলাকার মানুষের চোখে একটা নতুন ঘটনা। মাস দু-এক আগে এই সাইকেলগুলো হাতে পেয়েছে তারা।

এই সাইকেলের একটা ইতিহাস আছে। তখন নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হয়ে কমলগঞ্জে যোগ দিয়েছেন মো. মাহমুদুল হক। একদিন উপজেলার একদম দক্ষিণ সীমান্তের চাম্পারায় চা-বাগান এলাকায় গিয়েছেন। দেখেন অনেক মেয়ে দল বেঁধে হেঁটে যাচ্ছে। তিনি গাড়ি থামিয়ে ছাত্রীদের কাছে জানতে চাইলেন, তারা কোথায় পড়ে। বাড়ি কোথায়। জানতে পারলেন, তারা পদ্মা মেমোরিয়াল পাবলিক হাইস্কুলে পড়ে। পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে তারা স্কুলে আসা-যাওয়া করে। তখনই বাইসাইকেলের বিষয়টি তাঁর মাথায় আসে। তিনি কথা বলেন উপজেলা পরিষদের সব সদস্যের সঙ্গে। সবাই সম্মতি দেন। ৮০টি বাইসাইকেল কেনা হয়। খুঁজে খুঁজে স্কুলের দূরবর্তী ও দরিদ্র পরিবারের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের বাছাই করা হলো। মাস দু-এক আগে এই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সাইকেল। এরা যত দিন স্কুলে আসা-যাওয়া করবে, এই সাইকেল তাদের। পড়া ছেড়ে দিলে, এসএসসি পাস করলে সাইকেল নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে দেবে—এটাই শর্ত।

ইউএনও মো. মাহমুদুল হক বলেন, এই বাইসাইকেলের মাধ্যমে অনেকগুলো সূচক একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া যায়। প্রতিদিন বাইসাইকেলে চড়ে আসা-যাওয়া করলে মেয়েরা শারীরিকভাবে সক্ষমতা অর্জন করবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও এর প্রভাব পড়বে। অনেক ছাত্রীই এই বাইসাইকেল চালানো উপভোগ করছে। অনেক অভিভাবক তাঁদের মেয়েদের বাইসাইকেল কিনে দিচ্ছেন। শিক্ষার অগ্রগতিতে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে।

সেদিন (৭ আগস্ট) এরা সবাই এসেছিল এমন একটি অনুষ্ঠানে, যেখানে কেন বাল্যবিবাহ হচ্ছে, কেন বাল্যবিবাহ ঠেকানো যাচ্ছে না, বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণার পর কতটা বাল্যবিবাহ কমেছে—এমন কথাবার্তা হচ্ছিল। ইউএনও বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণার বছরপূর্তিতে আয়োজন করেছিলেন এই পর্যালোচনা সভার। এতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পদ্মা মেমোরিয়াল পাবলিক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামা কান্ত সিংহ বলেন, ‘আমার স্কুলে ১২টা সাইকেল পেয়েছি। যারা পেয়েছে তাদের বাড়ি কলাবন, সোনারায় এলাকায়। স্কুল থেকে পাঁচ-সাত কিলোমিটার দূরে। ওরা খুব আনন্দ করে আসে। তাদের উপস্থিতি ভালো। এই উদ্যোগটা চমৎকার। তাদের সাইকেল নিয়ে অন্য মেয়েরা প্র্যাকটিস করে। অন্য অভিভাবকেরাও উৎসাহিত হয়েছেন তাঁদের মেয়েদের সাইকেল কিনে দিতে।’