Thank you for trying Sticky AMP!!

'এইখানে পুরুষ কেউ নেই?'

শিউলি আক্তার। ছবি: প্রথম আলো

‘ফটোসাংবাদিক হতে চেয়েছিলাম, পারিনি। ফটোসাংবাদিকদের কাজ খুব চ্যালেঞ্জিং মনে হতো। তবে এখন ফটোগ্রাফারদের কাজই খুব কাছ থেকে দেখি। তাই ফটোসাংবাদিক হতে না পারার দুঃখটা আর নেই।’ কথাগুলো বলছিলেন শিউলি আক্তার। বর্তমানে ক্যানন ব্র্যান্ডের ক্যামেরা সার্ভিসের ডেপুটি সার্ভিস ম্যানেজার পদে কাজ করছেন তিনি।

শিউলি বাংলাদেশে প্রথম কোনো নারী, যিনি ক্যামেরা সার্ভিসিং কাজের সঙ্গে যুক্ত। ক্যামেরা সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করেন ২০০৮ সালে। এ কাজে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না তাঁর। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করা শিউলির ক্যাননে এসেই সবকিছু শেখা। পরে ক্যাননের সহযোগিতায় সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নেন। মূলত ছবি তোলার ঝোঁক থেকেই ক্যামেরার সঙ্গে লেগে থাকা। শিউলি জানালেন, এসএসসি পরীক্ষার সময়ই স্বপ্ন দেখতেন আলোকচিত্রী হওয়ার।

ঢাকার মিরপুরে শিউলি আক্তারের জন্ম। মিরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন । এরপর মহিলা পলিটেকনিক থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেন। চার ভাইবোনের সবাই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। শিউলি আক্তারের স্বামীও ইঞ্জিনিয়ার।

শিউলির সঙ্গে আলাপে জানা গেল ক্যামেরার খুঁটিনাটি বিষয়। সমুদ্রের পানি বা পানিতে পড়ে যাওয়া, হাত থেকে পড়ে যাওয়া, ব্যবহার না করে ফেলে
রাখা, আবার অনেক বেশি ছবি তোলা এমন নানান কারণে সমস্যায় ক্যামেরা নিয়ে আসেন ফটোসাংবাদিকসহ বেশির ভাগ মানুষ। সাধারণত সব ধরনের লেন্স, ক্যামেরা সার্ভিসিং করা হয় ক্যাননের বাংলাদেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জেএএন অ্যাসোসিয়েটসে ।

শিউলি বললেন, ‘প্রথম দিকে অনেকে আমার কাছে ক্যামেরা সার্ভিসিং করাতে চাইতেন না। তাঁরা ভাবতেই পারেন না ক্যামেরা সার্ভিসিং করবেন একজন নারী! এসেই বলতেন, “এইখানে পুরুষ কেউ নেই?” তারপর কাজ দেখে আস্তে আস্তে সন্তুষ্টির মাত্রা বাড়তে থাকে।’

শিউলিকে নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই এ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বললেন, ‘আমার সহকর্মীরা যদি আমাকে সাহায্য না করতেন, তবে আমি ক্যামেরা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতাম না। এখানে জটিল কোনো বিষয়ে তিনজন ইঞ্জিনিয়ার মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ক্যামেরা সার্ভিসিংয়ের স্ক্রু ড্রাইভার থেকে শুরু করে সবকিছু সিঙ্গাপুর থেকে আসে। যেসব ক্যামেরা সার্ভিসের মাধ্যমে ভালো করা একদমই সম্ভব হয় না, সেগুলো আমরা সিঙ্গাপুরে মূল ক্যানন অফিসে পাঠিয়ে দিই।’

শিউলি বললেন, ‘এখনো আমাদের দেশে অনেকে বিশ্বাস করতে চান না, মেয়ে বা নারীরাও সব কাজ পারে। পাইলট, ফটোসাংবাদিক, ড্রাইভার এমন অনেক পেশাতেই নারীরা কাজ করছেন এবং ভালো করছেন।’

ক্যামেরা সম্পর্কে টিপস দেওয়ার জন্য আত্মীয়স্বজনের কাছেও শিউলি আক্তার জনপ্রিয়। অনেকেই জানতে চান পেশা সম্পর্কে। আত্মীয়দের মধ্যেও অনেকে শিউলিকে দেখে এ পেশায় আসতে উৎসাহী হচ্ছেন। তবে ছবি তোলার ভালো লাগা এখনো শিউলির পিছু ছাড়েনি। অবসরে সুযোগ পেলেই ছবি তুলতে বের হন।