Thank you for trying Sticky AMP!!

'একুশে ফেব্রুয়ারী' সংকলন ছাপতে জমি বিক্রি করেন হাসান হাফিজুর রহমান

১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল। মস্কোয় মারা গেছেন হাসান হাফিজুর রহমান। তাঁর লাশ আসছে। বাংলা একাডেমিতে জানাজা হবে। অনেকের সঙ্গে বিষণ্ন মনে বটমূলে দঁাড়িয়ে আছেন মোহাম্মদ সুলতান আর গাজীউল হক। মোহাম্মদ সুলতান স্বগতোক্তির মতো বললেন, ‘হাসানও চলে গেল। 
দুজনায় মিলে ত্রিশ বছর আগে একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলনটি বের করেছিলাম অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যে। হাসান জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল একুশে ফেব্রুয়ারী ছাপাতে। অনেক ঝড়ঝাপটার মধ্যে একসঙ্গে ছিলাম। সেই হাসানও চলে গেল। আর এক একুশ কি দেখব না?’। একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলনের সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান যে বছর মারা গেলেন, সে বছরেরই ৩১ ডিসেম্বর চলে গেলেন সংকলনটির প্রকাশক মোহাম্মদ সুলতান। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য যে গোপন বৈঠক হয়েছিল, সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে যারা বেরিয়ে যাচ্ছিল, তাদের নাম লিখে নেওয়ার দায়িত্বও ছিল তাঁর।
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পর্কে গাজীউল হক লিখছেন, বায়ান্নর একুশে হাসানকে পাঠানো হয়েছিল উত্তেজিত ছাত্রদের ইটপাটকেল ছোঁড়া থেকে নিবৃত্ত করতে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখা গেল তিনিই অন্যদের সঙ্গে ইটপাটকেল ছুড়ছেন। কারণ জিজ্ঞেস করায় হাসানের সহজ উত্তর: ‘আরে বুঝলি না, এর নাম হলো শান্তির জন্য শক্তির প্রয়োগ। এটাও আন্দোলনের অঙ্গ। এ রকমই ছিলেন হাসান।’একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছিল পঁুথিপত্র প্রকাশনী থেকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই দেখে দোকানটির নামকরণ করা হয়। মোহাম্মদ সুলতান, এম আর আখতার মুকুল মিলে শুরু করেন দোকানটি, যা ছিল বকশীবাজারে। ছোট্ট একটি দোকান। কিছুদিনের মধ্যেই পরামর্শদাতা হিসেবে যোগ দেন হাসান হাফিজুর রহমান। এম আর আখতার মুকুল বেশিদিন যুক্ত ছিলেন না প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে।
সে এক অদ্ভুত সময়। সে সময় সাহস করে কোনো সংকলন প্রকাশ করা ছিল দুরূহ কাজ। কিন্তু দমলেন না তাঁরা।
একুশে ফেব্রুয়ারী প্রকাশের মধ্য দিয়েই পঁুথিপত্র আসলে প্রকাশনী হয়ে ওঠে।
লেখাগুলো হাসান হাফিজুর রহমান জোগাড় করেছিলেন প্রায় একক প্রচষ্টোয়। দেরি করায় আলাউদ্দিন আল আজাদ তাঁর কবিতাটি তুলে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ সুলতানের হাতে।
প্রচ্ছদপট এঁকেছেন আমিনুল ইসলাম। পাইওনিয়ার প্রেসের পক্ষে এম এ মুকিত ছেপেছেন। ব্লক তৈরি করেছেন এইচম্যান কোম্পানী, বাদামতলী, ঢাকা।
প্রথম প্রকাশ মার্চ, ১৯৫৩। দাম দুই টাকা আট আনা।
বইটির উত্সর্গপত্রে রয়েছে, ‘যে অমর দেশবাসীর মধ্যে থেকে জন্ম নিয়েছেন একুশের শহীদেরা, যে অমর দেশবাসীর মধ্যে অটুট হয়ে রয়েছে একুশের প্রতিজ্ঞা∏ তাদের উদ্দেশ্যে।’ এটি ছিল আনিসুজ্জামানের হাতের লেখায়। পুঁথিপত্র লোগোটি তৈরি করেছিলেন মূর্তজা বশীর। বইটি ছিল ক্রাউন সাইজে। পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ১৮৩।
একুশে ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তা নিিষদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক লিখছেন, ...ভাষা আন্দোলন, বিশেষ করে একুশের চেতনাধৃত কবিতা, নাটক, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি নিয়ে মূর্তজা বশীরের স্কেচশোভিত এ সংকলন নানা দিক বিচারে ঐতিহাসিক মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। এরপর ১৯৫৬ সালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ একুশের সংকলন প্রকাশিত হয়। এটি সম্পাদনা করেছিলেন ডি. এ. রশীদ ও মহিউদ্দিন আহমেদ।