Thank you for trying Sticky AMP!!

'কার শহর?' ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ষষ্ঠ

অ্যাকশনএইড পরিচালিত ‘কার শহর?’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন হাতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিসহ অন্যান্য অতিথি। বৃহস্পতিবার, সিরডাপে তোলা। ছবি: সংগৃহীত

নগরে নারী ও মেয়েশিশুর প্রতি সহিংসতাবিষয়ক ‘কার শহর?’ শীর্ষক গবেষণায় ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। ‘এ’ থেকে ‘ডি’ গ্রেডের মধ্যে বাংলাদেশ আছে ‘ডি’ গ্রেডে। বাংলাদেশে মোট স্কোর ৩৯ দশমিক ৩২। নগর-পরিকল্পনায় জেন্ডার সংবেদশীলতার বিষয়ে বাংলাদেশের স্কোর ০। নারীর প্রতি সহিংসতা ও মোকাবিলার দিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, কঙ্গো, জর্ডান, নাইজেরিয়া ও জিম্বাবুয়ের চেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশনএইড পরিচালিত গবেষণার ফলাফলে বাংলাদেশের এ চিত্র পাওয়া গেছে। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার হার উচ্চ। নগরে নারীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো নয়। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা, আইনের বাস্তবায়ন না হওয়া, জেন্ডারবান্ধব নগর-পরিকল্পনার অভাব, নারী ও মেয়েশিশুর জন্য সীমিত এবং অনিরাপদ গণপরিবহন–ব্যবস্থার কারণেই বাংলাদেশ অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাকশনএইডের এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, অ্যাকশনএইড যে ৪৫টি দেশে কাজ করছে, সেই দেশগুলোতেও আজ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণায় বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কঙ্গো, জর্ডান, লাইবেরিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়েতে নগরে নারীর নিরাপত্তার বিভিন্ন সূচকের তথ্য নিয়ে এ গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণায় নেপালের অবস্থান সবচেয়ে ভালো। দেশটি ‘বি’ গ্রেডে আছে। ৭২ দশমিক ৬৫ স্কোর নিয়ে দশটি দেশটির অবস্থান প্রথম। গবেষণায় ৮১ থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনো দেশ নেই, অর্থাৎ ‘এ’ গ্রেডে কেউ নেই।

গবেষণায় নারীর প্রতি সহিংসতার সামগ্রিক পরিস্থিতি, সহিংসতা প্রতিরোধে আইন কাঠামোর উপস্থিতি, সহিংসতা নিরসনে বাজেট বরাদ্দের পরিকল্পনা, জেন্ডার সংবেদনশীল নগর-পরিকল্পনা এবং জেন্ডারবান্ধব গণপরিবহন পরিকল্পনা এবং নকশা—এই পাঁচটি বিষয়ে কোন দেশ কেমন করছে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক (উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি) কাশফিয়া ফিরোজ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, গবেষণায় সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে। বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। দেশটিতে উন্নয়ন যে হারে হচ্ছে, সে হারে মানুষ সভ্য হচ্ছে না। অপরিকল্পিত শহর গড়ে উঠেছে। শিশু বয়স থেকেই তারা যাতে সভ্য হয়ে বড় উঠতে পারে, সে শিক্ষা দিতে হবে। তবে এর আগে নারীর বিরুদ্ধে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, সেগুলোর প্রতিকার করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভারতের মতো আমাদের দেশেও বাসের ভেতরে নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। আমাদের হেল্প লাইন ১০৯ আছে। জয় অ্যাপস আছে। কিন্তু যে মুহূর্তে ঘটনা ঘটবে, তখন সেই নারী মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন কি না, তা–ও একটি প্রশ্ন। বিষয়গুলো নিয়ে আমরাও চিন্তিত।’

প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি নারীদের জন্য নগরীতে কিছু নারী পরিচালিত বাস চালু করার সুপারিশ করেন। নগরীর বাস যাতে নির্দিষ্ট স্টপেজে থামে সে বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন করতে চাই। কিন্তু মানুষ তো সভ্য হয়নি। হয়তো অফিসে প্রমোশন পাচ্ছে না, কাউকে ফাঁসিয়ে দিতে আইনটির অপব্যবহার করা হবে। যৌন হয়রানির প্রমাণ পাওয়াও কঠিন।’

অনুষ্ঠানে সভাপতি ও সঞ্চালকের বক্তব্যে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ফারাহ কবির বলেন, ২০১৪ সাল থেকেই অ্যাকশনএইড নিরাপদ নগরীর বিষয়ে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে ‘নিরাপদ নগরী-নির্ভয় নারী’ শীর্ষক ক্যাম্পেইনের আওতায় বিভিন্ন গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য দেশেও গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন, কাঠামোগত অবস্থানের পাশাপাশি মানসিকতার কারণেও নগরীতে নারী ও মেয়েশিশুরা প্রতিনিয়ত হেনস্তা হচ্ছে।

গবেষণায় বাংলাদেশের বিভিন্ন চিত্র : বাংলাদেশের শহরের ৫৪ শতাংশের বেশি নারী সহিংসতার শিকার। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ শতাংশ নারীর মতে, অভিযুক্তকে নয়, পুলিশ অভিযোগকারীকে দোষারোপ করে। ৫৭ শতাংশ নারী ধরেই নেন যে তাঁদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে না। বাংলাদেশে সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিত আইন থাকলেও শুধু যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন নেই। যে আইনগুলো আছে, তাতে যৌন হয়রানি বন্ধে সরাসরি কোনো বিধান রাখা হয়নি। যৌন হয়রানি শব্দটিকে কোনো আইনে পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। সহিংসতা প্রতিরোধে বাজেট বরাদ্দের নির্দেশনা পাওয়া গেলেও বাস্তবায়ন এবং জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন আছে। ৪৯ শতাংশ নারী গণপরিবহনে এবং ৪৮ শতাংশ নারী গণসেবা গ্রহণে নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন। গণপরিবহনে নারী হয়রানির শিকার হলেও প্রতিবাদের সংস্কৃতি এখনো অনুপস্থিত।

অন্যান্য দেশের কিছু চিত্র : নেপালে প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজন নারী গণপরিসরে যৌন হয়রানির শিকার হয়। ব্রাজিলে প্রতি ১১ মিনিটে একজন নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সেনেগালে নীতিমালা এবং আইনি কাঠামো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব স্পষ্ট।