Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্যাম্পাসের গণ্ডি পেরিয়ে মেহেদীর ‘ক্যাম্পাস ফ্যাশন’

সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছ থেকে অর্ডার আসে মেহেদী হাসানের কাছে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে পড়েন মেহেদী হাসান। বিভাগের এক অনুষ্ঠানে সাত-পাঁচ না ভেবেই ব্যাচের সব শিক্ষার্থীর জন্য টি-শার্ট বানানোর দায়িত্বটা কাঁধে নিয়েছিলেন। তখনো জানতেন না, এ উদ্যমই তাঁকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ দেখাবে।

সেবার সহপাঠীদের জন্য টি–শার্টের বন্দোবস্ত করে বেশ বাহবা পেয়েছিলেন মেহেদী। এ উৎসাহকে পুঁজি করেই ‘ক্যাম্পাস ফ্যাশন’ নামে একটা ফেসবুক পেজ খুলে ফেলেন তিনি। ক্যাম্পাসের কোনো ব্যাচ বা বিভাগ টি–শার্ট বানালেই মেহেদীর ডাক পড়ত। ভালোই চলছিল। ২০২০ সালে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হলো, মেহেদীর ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ল। কারণ, এ সময়েই অনলাইনে কেনাকাটা বাড়তে শুরু করে। মেহেদীও সুযোগটা কাজে লাগান।

ক্যাম্পাসের সীমা ছাড়িয়ে

নিজ ব্যাচের সহপাঠীদের টি-শার্ট তৈরির কাজের মধ্য দিয়ে যে স্বপ্নের শুরু হয়েছিল, তা আজ দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছ থেকে অর্ডার আসে। শুরুতে অন্য কারখানা থেকে টি–শার্টসহ অন্যান্য পণ্য এনে বিক্রি করতেন মেহেদী। এখন ঢাকায় নিজের কারখানাতেই পণ্য তৈরি করছেন। ১৭ জন মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এর বাইরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস ফ্যাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি আছে। ফেসবুক পেজটির অনুসারীর সংখ্যাও এক লাখের বেশি। টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ক্যাপ, হুডি, জার্সি, মাস্কসহ নানা পণ্য তৈরি করে ‘ক্যাম্পাস ফ্যাশন’। মেহেদী জানান, মাসিক বিক্রির পরিমাণ এখন গড়ে ১৫ লাখ টাকার বেশি।

পড়াশোনা করে ব্যবসা চালান কী করে? মেহেদী বলেন, ‘ব্যবসার জন্য কখনোই আমার পড়াশোনার ক্ষতি করিনি। ব্যবসার কারণে এমনকি একটা ক্লাসও মিস দিতে হয়নি। শুরুতে যেহেতু অনলাইনভিত্তিক ছিল, তখন খুব একটা অসুবিধা হতো না। এখন ঢাকাতে আমার নিজস্ব কারখানা আছে, সেখানেও খুব বেশি সময় দিতে হয় না। ছুটির সময়ে অফিসে যাই। বাকি কাজগুলো করার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল আছে।’

সহপাঠী থেকে সহযোদ্ধা

জান্নাতুল ফিরদাউস মেহেদীর কলেজজীবনের সহপাঠী। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এসে দুজন বিয়ে করেছেন। জান্নাতুল এখন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়ছেন। ব্যবসায় সাফল্যের পেছনে স্ত্রীকেও বড় কৃতিত্ব দিলেন মেহেদী, ‘আমাদের দুজনের ভূমিকাই এ উদ্যোগে বলতে গেলে সমান সমান। একসঙ্গে কাজ করা থেকে শুরু করে খারাপ সময়ে পাশে থাকা—সবকিছুতেই তার ভূমিকা ছিল। আর একটি বিষয় না বললেই নয়, দুজনে মিলে ব্যবসাটাকে এ পর্যায়ে আনতে পেরেছি বলেই আমরা ছাত্র অবস্থাতেই বিয়ে করতে পেরেছি। দুজনের পরিবারও সহজেই মেনে নিয়েছে।’

জান্নাতুল বলেন, ‘কোনো কাজের প্রতি হৃদয়ের (মেহেদীর ডাকনাম) উদ্যম আমার খুব ভালো লাগে। আমি আমার জায়গা থেকে সব সময় তার পাশে থাকতে চেষ্টা করেছি।’

শুরুর দিকে সহযোগিতা না পেলেও এখন পরিবারও যথেষ্ট সাহায্য করছে। তাই মেহেদীর স্বপ্ন আরও বড় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আছে, সামনে বড় পরিসরে নিজের ফ্যাক্টরি দেব।’