Thank you for trying Sticky AMP!!

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য মো. আবুল কাশেম মিয়া

ইউআইইউর উপাচার্য: আমরা কি আমাদের ছেলেমেয়েদের যথেষ্ট সুযোগ দিতে পারছি

৫ ডিসেম্বর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য মো. আবুল কাশেম মিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাইফুল্লাহ

প্রশ্ন

উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় দেড় মাস হলো। একাডেমিক, প্রশাসনিক—সব দিক দেখভাল করার একটা চাপ নিশ্চয়ই আছে। কেমন লাগছে?

চাপ বলব না। আমি কাজটা উপভোগই করছি। আমার মা সব সময় একটা কথা বলতেন, ‘তোকে দেখলে বোঝা যায় না, কখন যে পরীক্ষা আছে, আর কখন নাই।’ কারণ, ছাত্রাবস্থায় আমি সব সময়ই মনে মনে একধরনের রুটিন অনুসরণ করেছি। সন্ধ্যায় পড়তে বসব, রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পড়ব, সেটা পরীক্ষা থাকুক বা না থাকুক। এই শৃঙ্খলা ধরে রাখলে কিন্তু পুরো জীবনই সহজ হয়ে যায়। যখন আপনি কাজ জমিয়ে ফেলবেন, দায়িত্ব ফেলে রাখবেন, তখনই মাথায় বোঝা ভর করবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কিংবা উপাচার্য; যে দায়িত্বের কথাই বলেন, সবার ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম। সময়ের কাজ সময়ে করে ফেললেই আর কোনো চাপ থাকে না।

প্রশ্ন

এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন, তাঁদের শিক্ষাজীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে দীর্ঘদিন পড়াশোনা থেকে দূরে ছিলেন, অনেকে পুরো কলেজজীবন কাটিয়েছেন অনলাইনে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য কি একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হচ্ছে?

এটা ঠিক, অনেকের ভিত বেশ দুর্বল। আরেকটা বিষয় হলো, এই শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে পড়ালেখার গুরুত্বটা বুঝতে চায় না। বলে, স্যার অনলাইনে ক্লাস নিয়ে নেন, পরীক্ষা নিয়ে নেন। কিন্তু ব্লেন্ডেড লার্নিং, হাইব্রিড লার্নিং—এগুলো কিন্তু সব পর্যায়ের জন্য নয়। চোখে চোখ (আই কন্টাক্ট) রেখে পড়ানোটা খুব দরকার। আমাদের শিক্ষকেরা নিশ্চয়ই ক্লাসে বাড়তি যত্ন নিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু জাতিগতভাবে আমাদের একটা সমস্যা আছে। আমরা ক্লাসে প্রশ্ন করতে চাই না, ক্লাসের বাইরে পড়া বোঝার জন্য শিক্ষকের কাছে যেতে চাই না। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই মেন্টর হিসেবে আমরা কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দিচ্ছি, যাদের সিজিপিএ ভালো। এতে করে ভালো ছাত্ররা কিছুটা আয় করতে পারছে, আবার দুর্বলেরাও সিনিয়রের সাহায্য নিয়ে পড়া বুঝতে পারছে।

প্রশ্ন

মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আপনার কী মনে হয়? নতুন, পরিবর্তিত শিক্ষাক্রম থেকে কি আমরা ভালো ফল পেতে পারি?

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য মো. আবুল কাশেম মিয়া

সরাসরি কোনো মন্তব্য করব না। এটুকু বলতে পারি, আমি সব সময় আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগোতে চাই। উন্নত দেশের একটা শিক্ষাপদ্ধতি কি আমি সরাসরি এখানে বাস্তবায়ন করতে পারব? আমি বলব, স্কুল ও কলেজে আমাদের সবার আগে ভালো মানের শিক্ষক দরকার। আপনার কাঁচামাল যতই ভালো হোক, যদি ছাঁচটা ভালো না হয়, তাহলে তো প্রোডাক্ট ভালো হবে না। ১২ বছর একটা লম্বা সময়। আমাদের কাছে শিক্ষার্থীরা যখন আসে, তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। আমি সব সময় বলি, আমাদের ছেলেমেয়েরা কিন্তু যথেষ্ট মেধাবী। প্রশ্ন হলো, আমরা তাদের যথেষ্ট সুযোগ দিতে পারছি কি না।

প্রশ্ন

শিক্ষার্থীদের গবেষণা, উদ্ভাবনে উৎসাহ দিতে কি আপনাদের বিশেষ কোনো উদ্যোগ আছে?

নিশ্চয়ই। ইউআইইউতে আমাদের একটা ইনস্টিটিউট আছে—ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড রিসার্চ (আইএআর), যেটার নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ান স্যার (ইউআইইউর সাবেক উপাচার্য এম রিজওয়ান খান)। স্যার একসময় আমাদের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও গ্রুপ চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, ‘আমরা কিছু গবেষণা করতে চাই। কিন্তু আমাদের ফান্ড নেই।’ তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছেন। এটা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে নয়, ইউনাইটেড গ্রুপ থেকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকেও আরও ৫ কোটি টাকা যোগ করা হয়েছে। ৫ বছরের জন্য আমরা এই ১৫ কোটি টাকা শুধু গবেষণায় ব্যয় করব। এখন দেশে-বিদেশে এক শর বেশি গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে আমরা যুক্ত আছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সংস্থার সঙ্গে এক হয়ে আমরা গবেষণা করছি। আর শিক্ষকদের সঙ্গে গবেষণা সহকারী হিসেবে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই কিন্তু স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। গবেষণার খরচ, প্রকাশনার খরচ, সবই আমরা বহন করি। গবেষণার জন্য শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের প্রণোদনাও দেওয়া হয়। এই যে শিক্ষার্থীরা ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড, মার্স রোভারের মতো প্রতিযোগিতাগুলোয় অংশ নিচ্ছে, গবেষণা করছে; এর সব খরচই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে, শিক্ষকেরা সহায়তা করেন। এ কারণেই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোয় আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে। সে জন্যই বলছি, আমাদের ছেলেমেয়েরা ভীষণ মেধাবী। তাদের যথেষ্ট সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব।