Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কারিন্টের পাঙ্খার ভিড়ে এই পেশা টিকবি কি না, তা লিয়ে শঙ্কাত আচি’

বাড়ির উঠানে তালপাতা শুকাতে দিচ্ছেন ইমেনা বেগম। গত ১১ এপ্রিল বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগীরভবন গ্রাম থেকে তোলা
তালপাখা তৈরি করছেন যোগীরভবনের এক কারিগর
পরিবারের সবাই মিলেই পাখা তৈরির কাজ করেন
তৈরি হলো তালপাখা
এবার রং করার পালা
তালপাখায় নকশা আঁকছেন এক নারী

শহরে–বন্দরে কমে এলেও গ্রামগঞ্জে হাতপাখার চল এখনো আছে। শহরাঞ্চলেও অনেকে লোডশেডিংয়ের সময় হাতে তুলে নেন এই অনুষঙ্গ। এই হাতপাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগীরভবন, আড়োলা, বাগোইল, আখরাইল গ্রামের অনেক কারিগর। বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে এই কারিগরদের ঘরে ঘরে এখন পাখা তৈরির ধুম।

যোগীরভবন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে তালপাখা তৈরিতে ব্যস্ত রেজাউল করিম। উঠানজুড়ে তালপাখার ডাঁটা। উঠানের একপাশে রং লাগানো কিছু পাখা রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। ছেলেকে নিয়ে তল্লাবাঁশের চাক তৈরিতে ব্যস্ত রেজাউল করিম। পাশে প্লাস্টিকের সুতায় চাক বাঁধছেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। পাইকাররা বাড়িতে এসে দরদাম করে পাখা কিনছেন।

বংশপরম্পরায় হাতপাখা তৈরি করে আসছেন রেজাউল করিমরা। ৫৫ বছরের মানুষটা ১৪ বছর বয়সে বাবার কাছে পাখা তৈরির হাতেখড়ি নেন। এরপর এই কাজকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। স্ত্রী-সন্তানদেরও নিজের পেশায় যুক্ত করেছেন। তাঁদের তৈরি হাতপাখা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি মোকামে যায়। পাখা সরবরাহের বেশ ভালো ফরমাশ পেয়েছেন এবার। দিনে-রাতে পাখা তৈরি করেও চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ছোটবেলায় হাতপাখা তৈরির কাজ শিখেছেন মজিবুর রহমান

ঘরে ঘরে পাখা তৈরি কর্মযজ্ঞ

শুধু রেজাউল করিমের বাড়িতেই নয়, যোগীরভবন গ্রামের ঘরে ঘরে এখন তালপাখা তৈরির কর্মযজ্ঞ চলছে। সামনে বাংলা নববর্ষ, তাই কারিগরদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। গ্রামের প্রবীণ কারিগর হুজুর আলী বলেন, যোগীরভবন গ্রামে শত বছরের পুরোনো মন্দির আছে। আগে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা এ মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে আসতেন। মন্দিরে আসা ভক্তদের জন্য হিন্দু কারিগরেরা হাতপাখা তৈরি শুরু করেন। পরে অন্য ধর্মের মানুষও এটাকে পেশা হিসেবে নেন, আশপাশের গ্রামেও তালপাখা তৈরি শুরু হয়।

কাহালুর হাতপাখার বাজার এখন দেশজুড়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বৈশাখী মেলায় যায় এখানকার কারিগরদের বানানো পাখা। তবু যোগীরভবনের এই কারিগরেরা পেশা হারানোর শঙ্কায় আছেন। বৈদ্যুতিক ফ্যান ও প্লাস্টিকের হাতপাখার কারণে তালপাখার কদর আগের চেয়ে কমেছে। এর মধ্যে অনেকে পেশাও বদলেছেন। প্রবীণ কারিগর আমজাদ হোসেন তাই বলছিলেন, ‘কারিন্টের পাঙ্খার ভিড়ে হাতপাখা হারিয়ে যাচ্ছে। এতে এই পেশা টিকবি কি না, তা লিয়ে শঙ্কাত আচি।’