Thank you for trying Sticky AMP!!

নার্সিং পেশায় স্বাগত

ভালো ফলের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট নার্সিং বিভাগ থেকে পেয়েছেন স্বর্ণপদক। এখন সেই প্রতিষ্ঠানেই টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে শিক্ষকতা করছেন। নিজ অভিজ্ঞতার আলোয় নার্সিং পেশার সম্ভাবনার কথা শোনালেন সাবরিনা মমতা

টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন সাবরিনা মমতা

যেভাবে আমার শুরু

হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক করার পর পড়াশোনার জন্য এমন কোনো বিষয় খুঁজছিলাম, আমার জন্য যা নতুন কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যার বেশ চাহিদা আছে। সে সময় মার্কিন জনমত জরিপ সংস্থা গ্যালাপের একটা জরিপে চোখে পড়ল। সেখানে নার্সিং পেশাকে সবচেয়ে সৎ, আস্থাভাজন ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, টানা ১৫ বছর ধরে এটি সেরা পেশার অবস্থান ধরে রেখেছে। বিষয়টি আমাকে বেশ কৌতূহলী করল। ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়ে দেখলাম হার্ভার্ড, প্রিন্সটন, ইয়েলসহ যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে (যা আইভি লিগ নামে পরিচিত) নার্সিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে।

এর মধ্যে চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নার্সিংয়ের ওপর চার বছর মেয়াদি স্নাতকের বিজ্ঞপ্তি। সবকিছু যেন ব্যাটে–বলে মিলে গেল। সরাসরি এসে বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করার পর আমার মনে আর কোনো দ্বিধা রইল না। ভর্তি পরীক্ষা দিলাম, টিকে গেলাম। রাজধানীর পরীবাগে অবস্থিত বিএসএমএমইউর গ্র্যাজুয়েট নার্সিং বিভাগে শুরু হলো আমার পথচলা।

কষ্টের স্বীকৃতি

প্রথম বর্ষ থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমাকে প্রথম হতে হবে। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা লেখাপড়ার পেছনে সময় দিয়েছি। পরীক্ষার সময় তো আরও বেশি। শিক্ষক ও বন্ধুরা খুব সহযোগিতা করেছেন। ক্লাসে পড়াশোনার ভীষণ ব্যস্ততা ছিল, সেই সঙ্গে ছিল হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ (ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস)। এসবের ফাঁকে সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতেও যুক্ত থেকেছি।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে গিয়ে হাতে-কলমে কাজ শিখতে হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলোর কাজ বোঝা, বিভিন্ন রোগ ও রোগীর সঙ্গে পরিচিত হওয়া…এসবের মধ্য দিয়ে একধরনের দক্ষতা গড়ে ওঠে। বিএসএমএমইউ চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই হালনাগাদ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ শিখতে কোনো সমস্যা হয়নি।

রাজধানীর পরীবাগে অবস্থিত বিএসএমএমইউর গ্র্যাজুয়েট নার্সিং বিভাগ

গত ১৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যখন গলায় স্বর্ণপদক পরিয়ে দিলেন, সে মুহূর্তটা আমি কোনো দিনও ভুলব না। স্বপ্নপূরণ তো একেই বলে। আমার সহপাঠী, পরিবার, বন্ধু, শিক্ষক—সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরাই আমাকে সামনে এগোনোর সাহস দিয়েছেন। বিশেষ ধন্যবাদ আমার স্বামী মাহমুদ আল হাসানকে। আমাকে সে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছে। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে হার্ভার্ড বা জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে আসব। শিক্ষার্থীদের স্মার্ট প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করব।

ভর্তিসংক্রান্ত

বিএসএমএমইউতে নার্সিংয়ে ২৫টি আসন আছে। গত বছর আমাদের নার্সিং অনুষদে স্নাতকোত্তরও চালু হয়েছে, সেখানে আসনসংখ্যা ২১। যেহেতু আসন কম, তাই ভর্তি পরীক্ষা খুবই প্রতিযোগিতামূলক। ২০২২ সালে স্নাতক ভর্তিতে আবেদন জমা পড়েছিল ১১ হাজার ৩২টি। অর্থাৎ প্রতিটি আসনের বিপরীতে লড়েছেন ৪৪১ জন।

তবু বলব, চেষ্টা থাকলে ভর্তি হওয়াটা অসম্ভব নয়। বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে দখল থাকলে ভর্তি পরীক্ষা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

কী পড়ানো হয়

নার্সিংয়ে আমাদের পাঠ্যক্রম খুবই আধুনিক, হালনাগাদ। ফান্ডামেন্টাল অব নার্সিং, অ্যানাটমি, হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট, সাইক্রিয়াটিক নার্সিং, মাইক্রোবায়োলজি, পেডিয়াট্রিকস, রিসার্চ ইন নার্সিং, নার্সিং ম্যানেজমেন্ট, অর্থোপেডিকস নার্সিং, ইংরেজি, তথ্যপ্রযুক্তি, এমন নানা বিষয় আমাদের পড়ানো হয়। এখানে ২টি জেনারেল, ১টি ফাউন্ডেশন, ১২টি প্রোফেশনাল কোর্সসহ মোট ১৫টি কোর্স পড়ানো হয়। চার বছরের স্নাতকে মোট ৫ হাজার ৮৩২ নম্বরের পরীক্ষা হয়।

সাবরিনা মমতা

উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ সব উন্নত রাষ্ট্রেই নার্সিং নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। বাংলাদেশে স্নাতক করে চাইলে বৃত্তিসহ স্নাতকোত্তরের জন্য এসব দেশে পড়তে যাওয়া যায়। পিএইচডিও করতে পারেন। চাইলে গবেষণা, শিক্ষকতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা ক্লিনিক্যাল—যেকোনো দিক বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। বিশ্বব্যাপী নার্সদের চাহিদাও ব্যাপক। আইসিইউ ও সিসিইউতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বেতন সবচেয়ে বেশি। অক্সফাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানেও অনেকে কাজ করছেন।

নার্সরা যে সেবা উৎপাদন করে, বৈশ্বিকভাবে তার অর্থ মূল্য বিলিয়ন ডলারের বেশি। যেটা বিদেশে রপ্তানি করলে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হতে পারে। যেমনটা ভারতের কেরালা কিংবা ফিলিপাইন করছে।

এই খাতে কাজ করতে এসে মনে হলো, নার্সদের ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে। ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মানি, জাপানি, আরবি কিংবা রুশ ভাষায় যদি দক্ষ হতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারব। পাশাপাশি কম্পিউটার প্রযুক্তি, ডেটা বিশ্লেষণ সফটওয়্যার, বায়োইনফরমেটিকস, আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) নির্ভর আইসিইউ, সিসিইউ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্র পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, এসব বিষয়েও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। এই খাতে প্রচুর মেধাবী শিক্ষার্থী প্রয়োজন।