Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বর্ণপদকের চিন্তা মাথায় নিয়ে পড়াশোনা করিনি

আরেফিন রহমান

উচ্চমাধ্যমিকের পর কখনো ভাবিনি, একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে স্বর্ণপদক পাব। আত্মীয়স্বজন নিরুৎসাহিত করলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টাই বেছে নিয়েছিলাম। কখনোই গতানুগতিক ‘টপার’দের মতো ছিলাম না। ক্লাসে ফার্স্ট হলেও উপস্থিতির হার থাকত ৬০ ভাগের কম। এভাবে কেটেছে প্রথম দুই বছর। মনে পড়ে, এমন কোনো রাত নেই ১১টার আগে বাসায় ফিরেছি। আমার বেশির ভাগ বন্ধুই সলিমুল্লাহ হলে ছিল। ওদের সঙ্গে কেটেছে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের অধিকাংশ সময়। তবে হ্যাঁ, প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন গুছিয়ে রাখতাম। আমার মনে হয় ভালো ফলাফল করার জন্য একটু নিয়মিত পড়াশোনাই যথেষ্ট। দৈনিক তিন ঘণ্টা পড়লেও সেটা যেন নিয়মিতভাবে করা হয়।

পঞ্চম সেমিস্টারে এসে ফলাফলের দিক দিয়ে একটু পিছিয়ে পড়লাম। সেই সময় থেকে সত্যিকার অর্থে পড়ালেখায় মন দিতে শুরু করি। মাস্টার্সের এক বছর আমার এক দিনও ক্লাস মিস হয়নি। সত্যি বলতে, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জীবনটা খুব আনন্দ করে কাটিয়েছি। আমার মূল প্রেরণা ছিল প্রথম বর্ষের ফলাফল। বারবার মনে হতো, একবার যেহেতু পেরেছি, বারবার পারব। দুইবার বিচারপতি মোস্তফা চৌধুরী স্বর্ণপদক, একবার জননেতা আব্দুর রাজ্জাক স্বর্ণপদক ও ড. জালাল আলমগীর মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক পেয়েছি। সব মিলিয়ে চারটি পদক। আমার আগেও আমার বিভাগের সিনিয়র দুই ভাই চারটি স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।

সমাজবিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে অনেকেই হেলাফেলার চোখে দেখে। তাই হয়তো শিক্ষার্থীরা এখানে এসে হতাশ হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নিয়ে এত ভোগান্তির কোনো কারণ নেই। পরে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সব ছাত্রছাত্রীর একই পরীক্ষা দিতে হয়। তাই স্বর্ণপদকের চিন্তা মাথায় নিয়ে কখনো পড়াশোনা করিনি। ভালো করতে হবে, এই চিন্তা করেই আমার যত সংগ্রাম। তা ছাড়া আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই বাস্তবভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টি বোঝার সুযোগ দেয়।

এ তো গেল স্বর্ণপদকের গল্প। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে গিয়ে প্রথমেই মনে হয়েছিল, নিজের বিভাগে কাজ করতে চাই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়াটা অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। আমি আপাতত দেশে থাকতে চাই, দেশের উন্নয়নে যদি কিছু করার সুযোগ পাই, সুযোগটা কাজে লাগাতে চাই। সম্ভব হলে পড়ালেখার মধ্যে থেকেই কাজ করব। নয়তো সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করব।

ছোটবেলা থেকে আমি ক্যাডেট কলেজে পড়েছি। অনেক শিক্ষার্থীর জন্য সেখানে ছিল একটামাত্র পেপার স্ট্যান্ড। আমরা যখন সবচেয়ে জুনিয়র, তখন পেপার পড়ার সুযোগ পেতাম পরের দিন। আগে সিনিয়ররা পড়তেন। সেই সময় প্রথম আলো, ‘রস‍+আলো’, ‘স্বপ্ন নিয়ে’, এগুলোই ছিল বাইরের বিশ্ব দেখার একমাত্র সুযোগ। সেই ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পড়তে পড়তে বড় হয়েছি, আর আজ আমার স্বপ্নপূরণের গল্প এখানেই প্রকাশিত হচ্ছে। এটাই আমার কাছে বড় আনন্দের বিষয়।