Thank you for trying Sticky AMP!!

ছবি: প্রথম আলো

কনট্যুরিংয়ে বদলে যাবে চেহারা

‘গালটা কেটে দিয়েই’, ‘নাক কাটলেন না তো!’ বিউটি পারলারে গেলে এ কথাগুলো কানে উড়ে আসবে প্রায়ই। কাটার কথা শুনে ভড়কে যাবেন না। এই কাটে মানে স্থল ‘কনট্যুরিং’।

ষোলো শতকে যুক্তরাজ্যের মঞ্চ অভিনেতারা তাঁদের মুখের অভিব্যক্তি দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য কনট্যুরিং করতেন বলে জানা যায়। পরবর্তী সময়ে উনিশ ও বিশ শতকে বিভিন্ন মেকআপশিল্পীর হাত ধরে কনট্যুরিং ভিন্নমাত্রা পায়।

এ সময় কনট্যুরিং সৌন্দর্যচর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে

বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে অড্রে হেপবার্ন, মেরিলিন মনরো ও এলিজাবেথ টেইলরও কনট্যুরিং ব্যবহার করেছিলেন। ম্যাডোনা, সিনডি ক্রফোর্ড, জ্যানেট জ্যাকসনসহ বিভিন্ন তারকার মেকআপশিল্পী কেভিন অউকন ২০০০ সালের অক্টোবর মাসে ‘ফেস ফরোয়ার্ড’ নামে একটি বই লেখেন। এরপরই কনট্যুরিং বিষয়টি প্রথম সর্বসাধারণের নজরে আসে এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

নাক, গালের হাড় ইত্যাদি অংশ আরও স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য মেকআপের এ বিশেষ কৌশলটি ব্যবহার করা হয়।

হলিউড তারকা কিম কার্ডাশিয়ানকে পছন্দ বা অপছন্দ যা-ই করুন, তাঁর মেকআপ যে প্রায় নিখুঁত, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাঁর মেকআপের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ কনট্যুরিং। তাঁর মেকআপ আর্টিস্ট মারিও ডেডিভানোভিক তো রীতিমতো কর্মশালার আয়োজন করে দেখান কীভাবে কিমের মুখে কনট্যুরিং করেন তিনি। ইন্টারনেটে পাবেন এ রকম নানা ভিডিও টিউটোরিয়াল।

কনট্যুরিংয়ের কিছু কৌশল আছে, যার দক্ষ ব্যবহারে চেহারায় আনা যেতে পারে আমূল পরিবর্তন

কনট্যুরিংয়ের কিছু কৌশল আছে, যার দক্ষ ব্যবহারে চেহারায় আনা যেতে পারে আমূল পরিবর্তন। এমনটা জানালেন ডিভাইন বিউটি লাউঞ্জের মেকআপশিল্পী বাপন রহমান। রোজকার সাজে হয়তো কনট্যুরিং করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে ভারী বা জমকালো মেকআপে এটি লাগেই। বিশেষ করে কনেসাজে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছবিতে ভালো দেখানোর জন্য কনট্যুরিং প্রয়োজনীয়।

কীভাবে করবেন

ধাপে ধাপে কনট্যুরিং করার পদ্ধতি দেখিয়েছেন বাপন রহমান।

  • ফাউন্ডেশন দিয়ে সবার প্রথমে বেস মেকআপ করে নিতে হবে।

  • মুখের কোন কোন লাইনে কনট্যুর করা হবে, তা ত্বকের চেয়ে এক শেড গাঢ় প্যানস্টিক, কনসিলার, পেনসিল বা লিকুইড ফাউন্ডেশন দিয়ে চিহ্নিত করে নিতে হবে।

  • যেখানে প্রয়োজন সেসব জায়গায় কনট্যুরিং কিট ব্যবহার করবেন এবং তা ভালোমতো মিশিয়ে নেবেন।

  • এই ধাপে কমপ্যাক্ট পাউডার, লুজ পাউডার দিয়ে কনট্যুর করা লাইন একটু মিশিয়ে নিতে পারেন। স্পঞ্জের সাহায্যে এটি করা যেতে পারে।

  • চারটা ধাপ হয়ে গেলে কনট্যুর সম্পূর্ণ হবে। এবার ব্লাশন, শিমার ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে। চোখ ও ঠোঁটের সাজ করে নিলে সাজ শেষ হয়ে যাবে।

ফাউন্ডেশন দিয়ে সবার প্রথমে বেস মেকআপ করে নিতে হবে

যা যা প্রয়োজন

  • ত্বকের রঙের চেয়ে গাঢ় শেডের কনসিলার, ফাউন্ডেশন অথবা প্যানস্টিক।

  • কমপ্যাক্ট পাউডার বা ম্যাট পাউডার।

  • ভালো মানের মেকআপ ব্রাশ এবং তুলি। সরু থেকে মোটা কয়েক মাপের ভালো মানের স্পঞ্জ।

  • বাজারে কনট্যুরিং কিট সেট হিসেবেও কিনতে পাওয়া যায়।

কপালের চওড়া ভাব কমাতে

অনেকের কপাল বেশ চওড়া থাকে। সে ক্ষেত্রে কপালের ওপরের অংশে এবং এর দুই পাশে ত্বকের রঙের চেয়ে গাঢ় রঙের কনসিলার বা ফাউন্ডেশন দিয়ে চওড়া ভাব অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।

যেখানে প্রয়োজন সেসব জায়গায় কনট্যুরিং কিট ব্যবহার করবেন এবং তা ভালোমতো মিশিয়ে নেবেন

ভারী চোয়াল চাপা দেখাতে

যদি কারও চোয়াল ভারী থাকে, তাঁরা গাঢ় রঙের ফাউন্ডেশন বা কনসিলার দিয়ে গলার নিচের অংশ থেকে চোয়ালের নিচের অংশ পর্যন্ত কনট্যুরিং করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভালো কোনো ব্রাশের সাহায্যে বাদামি কোনো ফেস হাইলাইটার চোয়ালের নিচের অংশে বুলিয়ে নিতে পারেন।

মুখের সরু ভাব কমাতে

মুখের নিচের অংশ সরু হলে ত্বকের রঙের চেয়ে এক শেড গাঢ় ফাউন্ডেশন নিয়ে কানের পাশ থেকে ঠোঁটের কাছাকাছি পর্যন্ত মিশিয়ে নেবেন

যাঁদের মুখের নিচের অংশ এমনিতেই খুব সরু, তাঁরা ত্বকের রঙের চেয়ে এক শেড গাঢ় ফাউন্ডেশন নিয়ে কানের পাশ থেকে ঠোঁটের কাছাকাছি পর্যন্ত মিশিয়ে নেবেন। তাহলে মুখের নিচের অংশ আর অতটা সরু দেখাবে না।

চওড়া নাক সরু দেখাতে

ভ্রু–যুগলের মাঝখানের দুই অংশ থেকে নাক বরাবর একটা লাইন নাকের নিচ পর্যন্ত টানতে হবে, মাঝের অংশ বাদ দিয়ে। তারপর তা নাকের দুপাশে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর নাকের মাঝের অংশটিতে সাদা বা পার্ল টোনের ম্যাট পাউডার আলতোভাবে লাগাতে হবে।

গাল ভারী হলে

যাঁদের গালের দুপাশ খুব ভারী, তাঁরা কানের কোনা বরাবর অংশ ঠোঁটের কিছুটা আগ পর্যন্ত কনসিলার বা গাঢ় ফাউন্ডেশন দিয়ে একটা লাইন টানুন। এবার এটি মুখের ওপরের অংশের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে হবে। এরপর হালকা বাদামি ম্যাট ব্লাশন ব্যবহার করা যেতে পারে।

মুখের ওপরের অংশ সরু হলে

চাপানো গালের জন্য চোখের একটু নিচের অংশ থেকে চিক লাইন পর্যন্ত বাদামি ব্লাশন লাগিয়ে ত্বকের রঙের সঙ্গে মানাসই যেকোনো রঙের ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন

যাঁদের গাল একটু চাপানো, তাঁরা শুধু চোখের একটু নিচের অংশ থেকে চিক লাইন পর্যন্ত বাদামি ব্লাশন লাগিয়ে এরপর ত্বকের রঙের সঙ্গে মানায় এমন যেকোনো রঙের ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন।


কনট্যুরিং কিট বা কনসিলার না থাকলে ফেস পাউডার বা আইশ্যাডো দিয়েও এ কাজ সারতে পারেন। ত্বক উজ্জ্বল হলে হালকা বাদামি এবং শ্যামলা বরন হলে গাঢ় বাদামি শেড দিয়ে এ কনট্যুরিং করা যেতে পারে। সব সময় মেকআপের ক্ষেত্রে ভালোমতো মেকআপ মেশানোটা জরুরি বলে জানান বাপন রহমান।

ছবি: প্রথম আলো
ছবি: প্রথম আলো
ছবি: প্রথম আলো