Thank you for trying Sticky AMP!!

জাহাঙ্গীরনগরের ‘ডেডপুল’ যেভাবে প্রাণ ফিরে পেল

বদলে গেছে সুইমিং পুলের চিত্র

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পরপরই এখানকার সবুজ নিসর্গ, টলটলে হ্রদ আর কংক্রিটের দালানগুলোকে আপন করে নিতে সময় লাগেনি। কিন্তু বছর দুয়েক যেতে না যেতেই দেখি, দেয়ালগুলো সব পোস্টার আর আজেবাজে লেখায় ভরে গেছে। মনটা ভীষণ খারাপ হলো।

একেক শিল্পী এঁকেছেন একেক থিমে

আগে ক্যাম্পাসে ছোট পরিসরে দুটি দেয়ালচিত্র আঁকার অভিজ্ঞতা ছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলোকে ‘মানুষ’ করার উদ্যোগ নিই। নোংরা দেয়াল পরিষ্কার করে পরের কয়েক বছর বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে দেয়ালচিত্র আঁকতে থাকি আমরা কয়েকজন। শুরুতে নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে, কোনো রকম পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই চলছিল কাজ। পরে রঙের জোগান দিতে এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন-বর্তমান অনেক শিক্ষার্থী।

এসব কার্যক্রম চলার সময় মাথায় ঘুরছিল, আমরা তো মাত্র কয়েকজন মিলে আঁকছি। কিন্তু ক্যাম্পাসে তো আরও অনেকেই আঁকেন বা আঁকতে চান। সবাইকে নিয়ে একটা দেয়ালচিত্র উৎসব করা গেলে বেশ হয়। যাঁরা আঁকতে ভালোবাসেন, হোক চারুকলা কিংবা বিজ্ঞানের ছাত্র, সবাইকে এক করে উৎসবের প্রাথমিক পরিকল্পনাটা সেরে ফেলি। শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল, কোনো স্পনসর নেব না। জাহাঙ্গীরনগরের একটা ভালো দিক হলো, ভালো কোনো উদ্যোগ নিলে পাশে দাঁড়ানোর লোকের অভাব হয় না। রং, তুলি, ব্রাশসহ যাবতীয় জিনিস কেনার জন্য একটা বড় অঙ্কের অর্থ দরকার ছিল। আমার পূর্ণ আস্থা ছিল সেটার জোগান দিতে জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা আন্তরিকতা থেকেই এগিয়ে আসবেন। যা ভেবেছিলাম, তা-ই হয়েছে।

প্যারা নাই, চিলও নাই!

আঁকার জন্য আমরা বেছে নিই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল এলাকা। দুই যুগের বেশি সময় ধরে পুলটা পরিত্যক্ত পড়ে আছে। মার্ভেলের সুপারহিরোর নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা এই পুলের নাম দিয়েছিলাম ‘ডেডপুল’। বাংলায় মজা করে বলি ‘ঘাটের মরা’।

Also Read: জাহাঙ্গীরনগরে পড়া ছেলেমেয়েদের যেভাবে চেনা যায়

প্লাস্টিক, পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলে জায়গাটাকে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছিল। ভাবলাম, এখানেই যদি দেয়ালচিত্র উৎসবটা হয়, তাহলে সবাইকে একটা বার্তাও দেওয়া হবে। ময়লা-আবর্জনার কারণে যে জায়গার ধারেকাছে ঘেঁষা যেত না, সেটাই আঁকার উপযুক্ত করতে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারভিদ মিরাজ। তিনি তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্রাদারহুড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’-এর সতীর্থদের নিয়ে কয়েক দিন রীতিমতো যুদ্ধ করে জায়গাটার চেহারাই বদলে ফেলেন। ফলে বাকি কাজটা আমাদের জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্রাদারহুড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ কয়েক দিন রীতিমতো যুদ্ধ করে জায়গাটা পরিষ্কার করেছে

শুরু হয় উৎসবের মূল কাজ—দেয়ালচিত্র আঁকা। চারুকলা ও চারুকলার বাইরের প্রায় ৬০ জন আঁকিয়ে সপ্তাহখানেকের বেশি সময় অক্লান্ত পরিশ্রম করে, রোদে পুড়ে, মশার কামড় খেয়ে এত বড় সুইমিংপুলটা স্বপ্নরঙে রাঙিয়ে ফেলেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। একেক আঁকিয়ের থিম ছিল আলাদা। ধীরে ধীরে ঝলমল করে ওঠে বহুকালের পুরোনো, পরিত্যক্ত সুইমিংপুল। কেউ বাংলার গ্রামীণ জীবন তুলে ধরেছেন, কারও তুলির আঁচড়ে উঠে এসেছে ফিলিস্তিন যুদ্ধের নৃশংসতা। গাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করার নির্মমতা কেউ তুলে ধরেছেন কার্টুনের মাধ্যমে। প্লাস্টিকের অতি ব্যবহারের ফলে কীভাবে পানি দূষিত হচ্ছে, সেটিও এঁকেছেন শিল্পীরা। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক থিমে দেয়ালচিত্র এঁকেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

প্রায় ৬০ জন আঁকিয়ে যোগ দিয়েছিলেন এই কর্মযজ্ঞে

একসময় যে পুলে মানুষ আসতেই চাইত না, দেয়ালচিত্র আঁকার পর সেটাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। দেয়ালচিত্র দেখতে দলে দলে মানুষ এখন ডেডপুলে যাচ্ছে। মার্ভেলের গল্পের মতোই—এ যেন ডেডপুলের ফিরে আসা!

এখন জায়গাটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে