Thank you for trying Sticky AMP!!

আদি নকশার জামদানি

ঢাকার বেঙ্গল শিল্পালয়ে ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জামদানি উৎসব। ‘ঐতিহ্যের বিনির্মাণ’ শিরোনামে এই উৎসবে আদি জামদানির অনুকরণে এই যুগের বয়নশিল্পীরা তৈরি করেছেন অসাধারণ সব জামদানি। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া প্রতিটি জামদানির নকশা ও বুনন তাই অনন্য। বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ প্রদর্শনী শেষ হবে আগামী ১২ অক্টোবর। রোববার ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। এ আয়োজনে সহযোগী হিসেবে আছে ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফটস কাউন্সিল।

প্রদর্শনীর কিউরেটর চন্দ্রশেখর সাহার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাণিতিক সমীকরণের বয়নকৌশল ও সুতার প্রায়োগিক বিকাশ প্রতিটি জামদানিকে দিয়েছে এক নান্দনিক সৌন্দর্য। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বয়নশিল্পীরা যে এই ধরনের নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, তা এককথায় অনবদ্য। এখানে প্রদর্শিত প্রতিটি জামদানি তাই এক–একটি ‘মাস্টারপিস’। চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, ‘প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শা

শাড়িগুলো তুলে ধরেছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে। বয়নশিল্পের যে সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে আমাদের, তার কিছুটা ফিরিয়ে আনার ক্ষুদ্র প্রয়াস এই আয়োজন।’

প্রদর্শনীতে এক্সিকিউটিং পার্টনার হিসেবে যুক্ত রয়েছে টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, আড়ং, অরণ্য ও কুমুদিনী। তাদের মাধ্যমেই জামদানি শাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে।

উদ্বোধনী দিনে পাঁচজন বয়নশিল্পী ও তাঁদের সহকারীকে ‘শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার’ দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত বয়নশিল্পীদের হাতে বোনা শাড়ির কথা থাকছে এই প্রতিবেদন।

টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির

টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির
সাদা জমিনে তেছড়ি নকশা, বড় আঁচলের এই শাড়িটি তৈরির প্রধান বয়নশিল্পী জামাল হোসেন। সহকারী ছিলেন বয়নশিল্পী শাকিল। এই শাড়ি তৈরিতে সময় লেগেছে ৩২ সপ্তাহ। ১০০ কাউন্টের মেশিন সুতা ^ ২০০ কাউন্টের অম্বর খাদি সুতা (তুলার মতো খুব নরম), ২৪০০ শানায় তৈরি এই শাড়ি। আঁচলে মুখোমুখি কলকা ঘিরে থাকা লতাপাতার নকশা এই শাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। পাড়ে আছে মাদুলির নকশা। আঁচলের শেষ প্রান্তে যেন একটু নিশ্বাস নেওয়ার আভাস। অর্থাৎ আঁচলের নকশাটা এমনভাবে শেষ হয়েছে, যা চোখে হিজিবিজি লাগবে না বরং এনে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া।

অরণ্য
২০০ কাউন্টের সুতি ^ ২০০ কাউন্টের অম্বর খাদি সুতা, ২২০০ শানায় তৈরি এই শাড়ির প্রধান বয়নশিল্পী মনির, সহকারী বয়নশিল্পী আবু বকর। কানের দুল, সুরমাদানির আদলের নকশা এর জমিনজুড়ে। ডবল পাড়ে ফুল ও পাতার নকশা। পুরো শাড়িতে হাজার বুটির প্রাধান্য।

আড়ং

আড়ং
উৎসবের একমাত্র এই শাড়িই ইউরোপীয় নকশার মোটিফে তৈরি। আঁচলে আঙুরলতার নকশা। প্রধান বয়নশিল্পী মোতালেব, সহকারী বয়নশিল্পী নুর আলম। শাড়িটি তাঁতে বুনতে সময় লেগেছে ১২ সপ্তাহ। ২০০ কাউন্টের সুতি ^ ২০০ কাউন্টের অম্বর খাদি সুতা, ২৩০০ শানায় তৈরি।

কুমুদিনী

কুমুদিনী
জমিনজুড়ে ঐতিহ্যবাহী কানের দুলের নকশা, পাড়ে গোলাপ ফুলের নকশা, পুরো শাড়ির জমিনে ছোট বুটির ছড়াছড়ি। মিহি কাউন্টের সুতায় বোনা শাড়িটির মোটিফে চোখ বোলালে দেখা যাবে একই ছন্দে গাঁথা নকশার আদল। এই শাড়িটির প্রধান বয়নশিল্পী মো. সিদ্দিক, সহকারী বয়নশিল্পী মাকসুদা। শাড়িটি বুনতে সময় লেগেছে ২০ সপ্তাহ। ২০০ কাউন্টের সুতি ^ ২০০ অম্বর খাদি সুতা, শানা ২২০০।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ
১৮ সপ্তাহে এই শাড়ির কাজ শেষ করেছেন প্রধান বয়নশিল্পী মো. সজীব হোসেন ও সহকারী বয়নশিল্পী মো. আনোয়ার হোসেন। ২০০ কাউন্টের সুতি ^ ২০০ অম্বর খাদি সুতা, ২১০০ শানায় তৈরি এই শাড়িটির নকশায় ‘ট্রি অফ লাইফ’ বিষয়ের প্রাধান্য। অর্থাৎ কলকি নকশাকে ঘিরে বেড়ে উঠেছে গাছের জীবন। এখানেও জমিনজুড়ে তেছড়ি পাড়ের নকশা।