Thank you for trying Sticky AMP!!

চোখের সাজে জ্যামিতির টান

চোখের পাতার ভাঁজে অাঁকতে পারেন চোখের আকৃতি

বাঙালি মেয়ের চোখের সাজের প্রধান উপকরণ কী? কাজল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লাইনার ও মাসকারা। চটজলদি সেজে উঠতে এর বিকল্প এখনো নেই বোধ হয়। কিন্তু একই সরল রেখা আর কত দিন? চোখের ওপরে কালোয় আঁকুন নতুন নকশা। রূপ বিশেষজ্ঞরা এই নতুন সরলীকরণের নাম দিয়েছেন গ্রাফিক লাইনার। একটু ভিন্ন ধাঁচে কাজলরেখা টেনেই দেখা যাক এবার।

.

রূপ বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান বলেন, ‘চোখের পাতার বাইরে একটু টেনে আঁকার চল আমাদেরও ছিল ষাটের দশকে। চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতার সেই মোটা করে টেনে আঁকা কাজল, কিংবা সব সময়ের জনপ্রিয় সাজ চোখের নিচের পাতায় গাঢ় রেখার টান এখনো চলছে। ক্লিওপেট্রার কথাও বলা যায়। তাঁর সেই টেনে আঁকা চোখ ভুলতে পেরেছে কজনা? কখনো সরু, কখনো বা মোটা করে টানা রেখা চোখের পাতার অর্ধেকটা জুড়ে। আর এসব টানকেই একটু জ্যামিতিক আকৃতি দিয়ে ভিন্ন রঙে আঁকাটাই হলো গ্রাফিক লাইনার।’
কাজলের মাধ্যমে কোনো মতে একটি টান নয় মোটেই। গ্রাফিক লাইনারে আপনার চোখই হয়ে ওঠে আপনার ক্যানভাস। যেখানে কাজল ও লাইনারে চোখের কোণে ও বাইরে চতুর্ভুজ, ত্রিভুজের আকৃতিতে থাকতে পারে কাজল। সেটা একদম নিখুঁত ও পরিপাটি হতে হবে তাও নয়। শ্যাডোর শেষ প্রান্ত রেখা টেনে কিংবা চোখের ভাঁজগুলোও এঁকে স্পষ্ট করা যায় এই স্টাইলে। এই সময়ের গ্রাফিক লাইনারের ধারণাটি মূলত আন্তর্জাতিক ফ্যাশন সপ্তাহগুলোর। প্যারিস, লন্ডন, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লাস ভেগাস কিংবা বার্লিনের ফ্যাশন সপ্তাহগুলোতে ২০১৪ থেকে শুরু হয়েছিল গ্রাফিক লাইনারের এই চল। ক্রমেই তা বাড়ছে। এ বছরও জয়জয়কার এই ধারার। অনেকেই শুধু কালোতে সীমাবদ্ধ না থেকে রঙিন কাজল আর শ্যাডোতেও আঁকছেন নতুন সব রেখা।

গ্রাফিক লাইনার, এ সময়ের চোখ সাজানোর নতুন ধারা মডেল: মিথিলা ও মাশিয়াত। সাজ: পারসোনা, শাড়ি: দোয়েল সিল্ক, ছবি: কবির হোসেন


সাজ বলতে কাজলই যাঁর সম্বল, তার জন্যেই গ্রাফিক লাইনার। বন্ধুদের সঙ্গে নতুন ধারার খেলা বলুন কিংবা চোখে ভাব ফোটাতে নতুন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গ্রাফিক লাইনার হতে পারে আপনার সবচে সহজ উপায়। কীভাবে করবেন এই লাইনারের সাজ? এ জন্য সবার আগে চোখের বেস ঠিক করে নেওয়া ভালো। গ্রাফিক লাইনারের জন্য আপনার প্রয়োজন হতে পারে কাজল, চার কোনা বা তিন কোনা অ্যাঙ্গেল ব্রাশ, লাইনার, কালো বা অন্য যেকোনো রঙের শ্যাডো এবং কনসিলার ও প্রাইমার। প্রথমেই কনসিলার দিয়ে চোখের নিচের কালো দাগ ও আশপাশের কালো ছোপ ঢেকে নিন। চারপাশে কালো ছোপ থাকলে গ্রাফিক লাইনারের নকশা ভালো দেখাবে না। তাই দাগ থাকলে প্রথমেই প্রাইমার, ফাউন্ডেশন বা হালকা বেস কালারের শ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। যাঁদের চোখে কাজল থেবড়ে যায়, তাঁরা ভালো কোনো ফেস পাউডারে চোখের তেলতেলে ভাব শুকিয়ে নিন। এবার শুরু হোক লাইনারের অন্যরকম টানের খেলা।

.
.

কেমন হতে পারে গ্রাফিক লাইনারের নকশা? খুব সাধারণ। চোখের ওপরে একটু মোটা করে বা চোখের পাতার বাইরেও টেনে কাজল আঁকাটাও গ্রাফিক লাইনারের একটা ধরন। একটার বদলে লাইনারের দুটা সমান্তরাল টান, তাও একরকম গ্রাফিক লাইনার। আপনি বাইরের টানের শেষটা আরও নিখুঁত করতে পারেন। চোখের পাতার অর্ধেকটা জুড়ে চতুর্ভুজ আকৃতিতে কাজল বা লাইনার টানুন। এবার তা শ্যাডো বা কাজলেই পূর্ণ করুন। আবার চোখের পাতার মাঝের ভাঁজের ওপরেই লাইনার দিয়ে পুরো একটি চোখের আকৃতি আঁকতে পারেন। পুরো লাইনার টেনে নিচের পাতায় ছোট্ট একটি ফোঁটা। কেউ কেউ পালকের আকৃতিতে চোখের ওপরে ও নিচের পাতায় কিছু সরল দাগ টেনে দেন। কিংবা কাজলের মতো করেই শ্যাডো দিয়ে তার চারপাশে লাইনার টেনে তা স্পষ্ট করে নেন।

শাড়ি: স্টুডিও এমদাদ ও মো. রাকিব খান

মোদ্দা কথা, গ্রাফিক লাইনার মানেই—আপনার কল্পনার সবকটি নকশা কালো রেখায় ফুটিয়ে তোলা। মনে করিয়ে দিই, গ্রাফিক লাইনারে আপনার সাজের মূল অংশ যেহেতু চোখ, তাই ব্লাশ বা লিপস্টিকের রং ফিকে হওয়াই ভালো। বেজটা সাধারণ থাকবে, শুধু একটু পাফ হলেই যথেষ্ট। লিপস্টিক হিসেবে রুবি লাল, র‍্যাসবেরি, ভিভিড ফুশিয়া, পেটাল পিংক (ফুলের পাপড়ির গোলাপি রং) বা হালকা
চেরি রংগুলো ভালো মানাবে। যেকোনো ব্র্যান্ডের লিপস্টিকেই এই রংগুলোর সম্ভার পাবেন আপনি।
সবকিছুর পরেও একটা কথা থেকেই যায়, যোগ করলেন কানিজ আলমাস খান। সব লুক যে সবাইকে নিতেই হবে, এমনটাও নয়। নতুন ফ্যাশন ও সাজ গ্রহণ করতে যাঁরা একটুও ভয় পান না কিংবা ফুটিয়ে তুলতে পারেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, তাদের যেকোনো সাজই ভালো মানায়। আর যাঁরা একটু আধুনিক বা পশ্চিমা পোশাক পছন্দ করেন, সঙ্গে একটু ভিন্ন ধরনের সাজ, তাঁদের জন্যই মূলত গ্রাফিক লাইনার। শাড়ি ও দেশি পোশাকের সঙ্গে পরতে চাইলে গ্রাফিক লাইনারে রঙিন শ্যাডোর মিশেল ঘটালে ভালো দেখাবে। আর যদি মানানসই নকশাটি একবার ফুটিয়ে তুলতে পারেন, যেকোনো পরিবেশে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে জুড়ি মিলবে না এর। কাজলের ক্ষমতা অগ্রাহ্য করতে পেরেছে কে কবে?