Thank you for trying Sticky AMP!!

জোড়াতালির নকশায়

পোশাকে জোড়াতালির নকশা নিয়ে আসে ভিন্নতা। মডেল: মাহি, পোশাক: খুঁত, ছবি: সুমন ইউসুফ

জোড়াতালি কাজের কদর সব সময়ই কম। তবে ফ্যাশনে ব্যবহৃত এই জোড়াতালির বেশ নামডাক এখন। প্যাচওয়ার্ক। নানা নকশার টুকরা কাপড় জুড়ে তৈরি করা হচ্ছে কাপড়। এবার সেটা দিয়ে ডিজাইনাররা বানাচ্ছেন পোশাক বা অন্যান্য অনুষঙ্গ। এটাই প্যাচওয়ার্কের বৈশিষ্ট্য। টপ, স্কার্ট, প্যান্ট, স্কার্ফ, জ্যাকেট, শাল আর শ্রাগ তো বটেই, প্যাচওয়ার্কের গৃহস্থালি সামগ্রীর খোঁজও মিলল। শাড়িতেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই জোড়াতালির কাজ। জনপ্রিয়তাও কম নয় এ ধরনের কাজের। এর ব্যবহার একেবারে আনকোরাও নয়। ইতিহাস বলে, প্রায় ৫০০০ বছর আগে নাকি এ ধরনের কাজ হতো কাপড়ে। মধ্যযুগে যোদ্ধাদের বর্মে উষ্ণতা ও সুর পাওয়ার জন্য দেওয়া হতো জোড়াতালির কাপড়। বিশ শতকের চরম অর্থনৈতিক মন্দার সময় ব্যবহৃত পুরোনো কাপড় জোড়া দিয়ে প্যাচওয়ার্কের সহায়তায় আরামদায়ক উষ্ণতার কুইল্ট তৈরি হতো আমেরিকায় (সূত্র: উইকিপিডিয়া)। আর আজকের দিনে প্যাচওয়ার্ক উঠে এসেছে ফ্যাশনে।

রঙে আর নকশায়

অনলাইন ফ্যাশন হাউস খুঁতের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার ফারহানা হামিদ বলেন, শহুরে জীবনে রঙের স্থান খুব কম। যান্ত্রিকতার ভিড়ে মনে ফুরফুরে ভাব আনতে পারে রং। প্যাচওয়ার্ক বেশ রঙিন হয়ে থাকে। তবে প্রতিটি প্যাচওয়ার্কই স্বতন্ত্র, একটির সঙ্গে অন্যটি মেলে না। ফারহানা হামিদের সঙ্গে খুঁতে রয়েছেন আরেকজন স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার ঊর্মিলা শুক্লা। আপাতত অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করলেও আগামী মাস থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোডে একটি দোকান চালু করার কথা আছে তাঁদের। প্যাচওয়ার্কের পোশাক ও নানা আনুষঙ্গিক রয়েছে তাঁদের কাছে।

সাধারণত ব্যবহৃত পুরোনো সুতি কাপড় দিয়েই হয়ে থাকে প্যাচওয়ার্ক। একরঙা কাপড়ও ব্যবহৃত হয়, প্রিন্টের কাপড়ও। প্যাচওয়ার্কের কাপড়ে নানা রঙের সমাহার থাকে। কাপড় আর সুতার কাজে বৈচিত্র্যময় নকশা ফুটে ওঠে প্যাচওয়ার্কের কাপড়ে। তবে হাতে করা সেলাই ছাড়াও ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, মোম বাটিক থাকতে পারে প্যাচওয়ার্কের কাপড়ে। সুতায় করা আলপনা থাকতে পারে। কোনোটার নকশায় হয়তো ফুটে উঠেছে মানুষের মুখ, মাছ কিংবা পাখি, কোনোটাতে পাতা কিংবা ভিন্ন ধাঁচের নকশা।

ব্লাউজের সঙ্গে মিলিয়ে শাড়ির পাড়েও জোড়াতালির নকশা। সাজ: মিউনিজ ব্রাইডাল

পোশাকে যেমন

পোশাকের পুরোটাতেও প্যাচওয়ার্ক থাকতে পারে, থাকতে পারে খানিকটা অংশে। যেমন মেয়েদের পোশাকে কাঁধে, হাতায়, কলারে বা পোশাকের অর্ধেকটাতে প্যাচওয়ার্ক থাকতে পারে। হয়তো আপনি প্যাচওয়ার্কের টপ বেছে নিলেন, সঙ্গে পরলেন একরঙা প্যান্ট। কিংবা উল্টোও হতে পারে সমন্বয়টা। কামিজের সঙ্গে পরার মতো কটিতেও পাবেন প্যাচওয়ার্ক। মেয়েদের হুডি শার্টও হয়। শাড়ির পুরো অংশে প্যাচওয়ার্ক করা হলে বেশ ভারী হয়ে যায়, তাই পাড়ে ও আঁচলেই থাকে এর ব্যবহার। প্যাচওয়ার্কের ব্লাউজও বেছে নিতে পারেন। একরঙা শাড়ির সঙ্গে প্যাচওয়ার্কের ব্লাউজ মানানসই বলে জানালেন ফারহানা হামিদ। প্যাচওয়ার্কের জামায় ফুলঝুড়ি কাজও পেতে পারেন। হাফসিল্ক, কাতান বা লিনেন কাপড় জুড়ে তৈরি জামাও পেতে পারেন বাজারে। ফ্লোরাল মোটিফ আর চেক কাপড়ের সমন্বয়ও হতে পারে। জ্যাকেট পাবেন ছেলেদের জন্য, মেয়েদের জন্যও। এ ছাড়া ছেলেদের জামা, পাঞ্জাবি-পায়জামা, শিশুদের জামা-পায়জামা ও স্কার্ট পাওয়া যায় খুঁতে, বড়দের স্কার্টও পাবেন।

আনুষঙ্গিকে প্যাচওয়ার্ক

ফ্যাশন হাউস যাত্রা ও খুঁতে পাবেন প্যাচওয়ার্কের কাজ করা অনুষঙ্গ। ব্যাগ (ব্যাকপ্যাক এবং ভ্যানিটি ব্যাগ), কুশন কাভার, পর্দা, রানার, ফ্লোরম্যাটে পাবেন প্যাচওয়ার্ক। পোশাকের মতোই এসবের কোনোটির পুরোটাই প্যাচওয়ার্কের, কোনোটিতে হয়তো ক্যানভাস কাপড়ের কিছু অংশে আছে প্যাচওয়ার্ক। যাত্রার দোকান ব্যবস্থাপক এমিলি বড়ুয়া জানালেন, বিভিন্ন স্থান থেকে পুরোনো সুতি কাপড় সংগ্রহ করে তা জুড়ে দিয়ে প্যাচওয়ার্ক করেন তাঁরা। আধুনিক জীবনধারায় নতুনত্ব ও শৈল্পিক ছোঁয়া আনতে বেছে নিতে পারেন প্যাচওয়ার্কের কাজ।