Thank you for trying Sticky AMP!!

টেকসই ফ্যাশন নিয়ে প্রশংসনীয় প্রয়াস

বাংলাদেশ থ্রিফট। টেকসই ফ্যাশন নিয়ে এক সপ্তদশীর স্বপ্ন-উদ্যোগ। মাত্র ৩০০ টাকা সম্বল নিয়ে শুরু গেল ডিসেম্বরে। চার মাসের মধ্যে তরুণদের মধ্যে অভাবনীয় সাড়া ফেলতে পেরেছে।

তারুণ্যের ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থ্রিফট-এর শুরু ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর। এর উদ্যোক্তা এক সপ্তদশী শিক্ষার্থী; সুনায়রা সুভা। বরাবরই তাঁর নিজের কিছু করার ইচ্ছা ছিল। দুর্দান্ত কিছু আইডিয়া আর প্ল্যান থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সহায়তার অভাবে সেগুলোর কোনোটাই আলোর মুখ দেখেনি।

সত্যি কথা বলতে, ওই বয়সে কারও পক্ষে এই দেশে চাকরি পাওয়া খুব কঠিন, তাই নিজের কিছু শুরু করার জন্য অর্থ জোগাড় করা মুশকিল। একদিন হেঁটে হেঁটে ছাত্র পড়াতে যাওয়ার সময় একজনকে সেকেন্ড হ্যান্ড জামাকাপড় বিক্রি করতে দেখে ভীষণ মোটিভেটেড হয় সুভা; সেই উৎসাহেই শুরু করে ফেলে থ্রিফট।

‘শুরুর সম্বল ছিল মাত্র ৩০০ টাকা। আর এই সামান্য পুঁজি নিয়েই আমার স্টোর শুরু করি,’ বলল সে। আরও বলল, ‘প্রথম দুই সপ্তাহে কোনো বিক্রি হয়নি। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত নতুন নতুন প্রডাক্টের ছবি পোস্ট করার পর অর্ডার আসতে থাকে।’

মার্কেটে সর্বোত্তম মানের পোশাক কম দামে বিক্রি করার চল তখনো ছিল না খুব একটা; সেই সুযোগটাই সুভা লুফে নেয়। এরপর বিক্রি বাড়তে থাকে। এমনকি প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭০টা করে প্রডাক্ট বিক্রি হওয়া শুরু হয়।

সুভা বলছিল, ‘আমি এককভাবে আমার গ্রাহকদের জন্য এমন একটি অনলাইন অভিজ্ঞতা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যা তখন পর্যন্ত অন্যরা করেনি।’

বাংলাদেশের অনলাইন ফ্যাশন মার্কেটে ফাস্ট ফ্যাশনের ট্রেন্ড রয়েছে এবং এখানেই এই প্রজন্ম থ্রিফট ফ্যাশনের এক নতুন যুগ সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনো প্রকার পরিবর্তনে সাহায্য করার একমাত্র উপায়ই হচ্ছে সাসটেইনেবিলিটি।

সাসটেইনেবল ফ্যাশন বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এবং কাঙ্ক্ষিত এক বিষয়। পরিবেশ ও আর্থসামাজিক—উভয় দিক বিবেচনা করে পোশাক, জুতা এবং অনুষঙ্গ—সবকিছু সবচেয়ে বেশি টেকসই পদ্ধতিতে উত্পাদন, বিপণন ও ব্যবহার করাটাই হলো সাসটেইনেবেল বা টেকসই ফ্যাশন। বিশ্বজুড়ে এই ধারণা কেবল প্রচলিতই নয়, বরং এ নিয়ে কাজও হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেভাবে বিষয়টা লক্ষ করা যাচ্ছে না। কারণ হলো, এত দিক বিবেচনা করে কাপড় উৎপাদনে যে ব্যয় হবে, তা সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী না–ও হতে পারে।

পরিবেশের ক্ষতি করে যে কাপড় তৈরি করা হয়, তা আমরা খুব একটা যত্নসহকারে বছরের পর বছর এমনিতেও পরি না। ফলে উন্নত মানের পোশাক আপসাইকেল করার ট্রেন্ডটাই থ্রিফট ফ্যাশনের মূল লক্ষ্য। তাতে কিছুটা হলেও পরিবেশকে বাঁচানোর পাশাপাশি মানুষের ক্রয়সাধ্যের দিকটাও বিবেচনা করতে সাহায্য করে।

গ্রাহকসেবা উন্নত করতে, মাইক্রো-মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করা থেকে শুরু করে থ্রিফট মানুষকে ফ্যাশনের সঙ্গে পরিচিত করে নিজের জন্য আলাদা একটা মার্কেট তৈরি করেছে। থ্রিফটের বিক্রির প্ল্যাটফর্মই হচ্ছে ইনস্টাগ্রাম। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এরই মধ্যে শতাধিক ইতিবাচক রিভিউ পেয়েছে থ্রিফট।

বাংলাদেশ থ্রিফটের স্বপ্নদ্রষ্টা সুনায়রা সুভা

স্টোরের জন্য থ্রিফট ভবিষ্যতের মুড বোর্ড কী হবে, সেটার সিদ্ধান্ত হয়েছে, জানাল সুভা, ‘আমাদের গ্রাহকদের আরও সঠিক দামে আরও উন্নত মানের থ্রিফট পণ্যের সঙ্গে গ্রাহকদের পরিচিত করানো এবং তাদের স্বচ্ছন্দ করে তোলা। আশা করছি, থ্রিফটিং ব্যাপারটাকে একটা পজিটিভ শপিং হ্যাবিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।’
‘আমাদের ইচ্ছা আছে বাংলাদেশের প্রথম থ্রিফট আউটলেট উদ্বোধন করার; তবে একটু সময় হয়তো লাগবে; কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ আমরা নিতে প্রস্তুত।’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল সুভা।

সুনায়রা সুভা পণ্য পেতে এর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল (https://instagram.com/bangladeshthrift?igshid=1wgalky36yfkq) ও
ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/BangladeshThriftofficial) যোগযোগ করা যেতে পারে।

লেখক: ফ্যাশন ডিজাইনার

ছবি: সুনায়রা সুভা ও বাংলাদেশ থ্রিফটের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল