Thank you for trying Sticky AMP!!

ভিনদেশির কেশসজ্জায়

চুলের সাজে এমন বিশেষ নকশা দেখা যাবে এ বছর। মডেল: মাহেলেকা জাবিন। নকশার আয়োজনে কেশসজ্জা করেছেন শ্রীলঙ্কার রূপ ও কেশসজ্জা বিশেষজ্ঞ নয়না করুনারত্নে। কৃতজ্ঞতা: ল্যাভিস বিউটি পারলার, ছবি: কবির হোসেন
>মৌসুমে মৌসুমে পোশাকের নকশা যেমন বদলায়, তেমনি বদলে যায় চুলের সাজের ধারাও। চলতি ধারার চল শুরু হয়ে যায়। কেশবিশেষজ্ঞরা নানা নিরীক্ষায় চুলের সাজে আনেন নতুন মাত্রা, যা এখন রীতিমতো শিল্প। দিন কয়েক আগে ঢাকায় ঘুরে গেলেন শ্রীলঙ্কার রূপ ও কেশসজ্জা বিশেষজ্ঞ নয়না করুনারত্নে। এ বছর জনপ্রিয়তা পাবে, এমন কয়েকটি কেশসজ্জা নকশার আয়োজনে পাঠকদের জন্য দেখালেন তিনি।

বিনোদ বেণি বাঁধার দিন শেষ হয়ে যায়নি। তেমনি খোঁপায় তারার ফুল দেওয়ারও। এখন আর সখীরা যে বেঁধে দেয় না বিনোদ বেণি। বরং রয়েছে কেশসজ্জার জন্য বিশেষজ্ঞ। কেশ সাজিয়ে তাতে অলংকার বসিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। বাতলে দিচ্ছেন কোনটি চলছে এখন, আর কোনটি নয়। এমনকি কেশসজ্জার সঙ্গে মানানসই করে হবে পোশাক, নাকি পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে কেশসজ্জা, সে নিদানও দিচ্ছেন তাঁরা।

পুরোনো সজ্জারীতিকে ভেঙেচুরে নতুন রূপ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন সজ্জাও উদ্ভাবন করছেন েকশসজ্জাকার। এমনকি পশ্চিম আর পুব যেমন নিজেদের মতো করে চলছে সমান্তরালে, তেমনি উভয়ে মিলেও যাচ্ছে সৃজনের প্রয়োজনে। প্রতি বছর দুবার চার ফ্যাশন রাজধানীর (নিউইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস, মিলান) ফ্যাশন উইকে মেলে নতুন চলতি ধারা (ট্রেন্ড)। সেসব আবার অনুসৃত হয় বিশ্বজুড়ে। এ বছর চুলের বেশ কিছু নতুন চলতি ধারা অনুসৃত হচ্ছে। এ রকম কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বেণি ট্রান্ড্রিলস। বেণি করা হবে বটে, তবে অলকচূর্ণ ঠিকই কপোলে কাতুকুতু দেবে, অর্থাৎ লতাগাছের আকর্ষকের মতো মুখের দুপাশে অবাধ্য হয়ে থাকবে। 

 এবার আরও একটা ধারার ট্রেন্ড বেশ চলছে। ফেস ফ্রেমিং লেয়ারের সঙ্গে মেসি বান। মুখের আদলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে চুলকে সেভাবে সেট করা। পেছনে চুল নিয়ে অনেকটা হাতখোঁপার মতো করে অবিন্যস্ত করা খোঁপা। এর সঙ্গে সাটিনের হেয়ার ব্যান্ড আর পাথর বসানো হেয়ারক্লিপ হবে সোনায় সোহাগা।

এরপর ধরা যাক, টপনট। চূড়া করে বাঁধা। এটা সব সময়ই ছিল। এবার ইন ট্রেন্ড। তবে বাঁধার ধরনে এসেছে নতুনত্ব। এ বছর অবশ্য আশি আর নব্বই দশক বেশ প্রাধান্য পাচ্ছে। পাশ সিঁথি করে দুই কানের পাশে হেয়ারপিন লাগিয়ে স্টাইল করা হচ্ছে। ব্লান্ট আর লেয়ারড ববও এবারের চাহিদাপত্রে রয়েছে। আছে নব্বইয়ের ‘দ্য ফ্রেন্ডস’ প্রাণিত র​্যাচেল হেয়ারস্টাইল। ভারী লেয়ারের সঙ্গে ফ্রিঞ্চের যৎসামান্য স্টাইলিং। এ বছর আরও আছে নানা ধরনের ব্যাংস।

তবে ভারতীয় উপমহাদেশের বিষয়টি একটু আলাদা। বলিউড ছায়াছবির কারণে অনেক কিছুই আসে সেখান থেকে। এ ছাড়া উপমহাদেশের দেশগুলোর কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে। এখানকার আবহাওয়া, সংস্কৃতি, পোশাক, কেশ আর ত্বকের রঙের কারণে। ফলে এই অঞ্চলের কেশসজ্জায়ও তাই মিল পাওয়া অনেকাংশে।

এই যেমন শ্রীলঙ্কার শীর্ষ সারির কেশবিশেষজ্ঞ নয়না নকশার জন্য যে চারটি কেশসজ্জা করে দিয়েছেন, তার প্রতিটিই পশ্চিমপ্রাণিত। এসব স্টাইলে ঐতিহ্যের সঙ্গে যেমন আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটেছে, তেমনি পশ্চিমকে পুবের আবহে খাপ খাইয়ে নিজের মতো স্টাইলে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। এসব স্টাইল গাউন বা সান্ধ্যকালীন পোশাকের সঙ্গে যায়। পাশাপাশি অনায়াসে মানিয়ে যাবে শাড়ি বা লেহেঙ্গার সঙ্গেও। কেশসজ্জায় ফ্রেঞ্চ টুইস্টের আধুনিক উপস্থাপনা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে নব্বই দশকের ব্রেইডেড বান বা বেণি করে খোঁপা করা। ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’ রূপকথার রাজকুমারী বেলের বলরুম হেয়ারস্টাইলের মতো চুড়ো করে বাঁধা খোঁপা করে সামনের চুল ছেড়ে দিয়েছেন ঢেউখেলানো জলপ্রপাতের মতো। কিংবা বিভাইভ স্টাইল তিনি তাঁর মতো করেই সাজিয়েছেন। মানিয়ে যাবে যেকোনো পরিবেশ, সংস্কৃতি আর উপলক্ষে।

ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানিজ ছবিতে অড্রে হেপবার্নের বিহাইভ স্টাইল আজও সমকালীন। ফ্রেঞ্চ টুইস্ট, হাই চিন অন এবং খাটো ব্যাংসের সমন্বয়ে মাত্রা পায় এই কেশসজ্জা। অড্রের সেই চুলের সাজের অনুসরণে যোগ করা হয়েছে পাথর বসানো কেশ–অনুষঙ্গ। এসবই ফ্যাশনপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। বিয়ের কনের চুলের সাজ হিসেবেও মানানসই। সাদা গাউন আর স্বচ্ছ সাদা ওড়নায় তাই চমৎকার মানাবে। তবে প্রাচ্যের কনের পোশাকও যে মানাবে না, তা নয়। এ ক্ষেত্রে এই কনে দীর্ঘাঙ্গী হলে দেখতে ভালো লাগবে।

ডিজনির বিখ্যাত বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট রূপকথার রাজকুমারী বেলের বলরুম চুলের সজ্জা এই আভা গার্ড কেশসজ্জা। অর্ধেক চুল থাকবে ওঠানো, অর্ধেক চুল নিচু করে নামানো, এই স্টাইল এ বছর পাবে জনপ্রিয়তা। চূড়া করে বাঁধা খোঁপার সঙ্গে জলপ্রপাতের মতো ঢেউখেলানো চুল সামনে আলগোছে ছেড়ে দেওয়া। এই স্টাইল কিছুটা ভারসাম্যহীন, তবে জমকালো। এই স্টাইলের সঙ্গে অফ শোল্ডার পোশাক হবে আদর্শ। আবার অফ শোল্ডার ব্লাউজ দিয়ে পরিপাটি করে শাড়িও পরা যেতে পারে।

বেণি করা বান ছিল নব্বই দশকের বিভিন্ন উৎসবের সবচেয়ে প্রিয় কেশসজ্জা। এই স্টাইলে চুল অনেকভাবেই বাঁধা যায়। এ বছর এই স্টাইল ঘুরে এসেছে অন্যভাবে। এবারের চুলে দেওয়া হয়েছে ডাবল ব্রেইডেড বান। মাথার মাঝবরাবর সিঁথি করে দুইপাশে ডাচ স্টাইলে বেণি করে পেছনে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটাকে টু স্ট্রান্ড ব্রেইডসও বলে। বাকি চুল নিচু করে ফুলের আদলে খোঁপা করা। সেই খোঁপায় দেওয়া হয়েছে ছোট ছোট ফুলের নকশা করা পিন। যা আপনাকে মনে করিয়ে দেবে নজরুলের সেই গান: মোর প্রিয়া হবে এস রাণী/ দেব খোঁপায় তারার ফুল। ঐতিহ্যবাহী এই কেশসজ্জার পুরোটায় আছে আধুনিকতার নিটোল পরত। এই কেশ কনেকেও মানাবে।