Thank you for trying Sticky AMP!!

‘আগুন লাগলে সবাই ঘর থেকে বের হয়, আর আমরা ওই ঘরে যাই’

বিমান চালনা ও ফায়ার ফাইটিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় এখনো নারীদের উপস্থিতি কম। পরিসংখ্যান বলে, এসব ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা বেশি, তা–ও ৮ থেকে ১০ শতাংশ৷ সেদিক থেকে নাসরিন সুলতানা দারুণ ব্যতিক্রম। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রথম নারী ফায়ার ফাইটারদের মধ্যে একজন তিনি। বর্তমানে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের পরিদর্শক। দীর্ঘ সময় ধরে সাহসিকতামূলক এ কাজের জন্য তিনি ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সম্মাননা পদক নেন।

প্রশ্ন

কেন ফায়ার ফাইটিংকে পেশা হিসেবে নিলেন

গল্পটা একটু বড়, ৩০ বছর আগের। আমাদের পরিবার খুব রক্ষণশীল। আমরা ছয় বোন। রক্ষণশীল পরিবারে থেকেও আমার মা চেয়েছিলেন, আমরা সব বোন যেন পড়াশোনা শেষে চাকরি করি। তারপর নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করি। তখন কিন্তু খুব কম নারী এসএসসি পাসের পর পড়াশোনার সুযোগ পেত। সেখান থেকে আমরা পড়াশোনা শেষ করেছি। ছোটবেলায় একবার পাশের বাড়িতে আগুন লাগতে দেখি। তখন দেখেছি, ফায়ার ব্রিগেড সাইরেন বাজিয়ে এসে আগুন নেভাচ্ছে। তখন থেকেই ওরা আমার হিরো। আর আমি এ পেশায় আসতে চেয়েছি। আমার বড় বোনও ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন। বিজ্ঞপ্তি দিলে তিনি আমাকে আবেদন করতে উৎসাহ দেন। সেখান থেকেই আজ এখানে। আমার জীবনসঙ্গী, দুই সন্তান, সবাই আমাকে এ পেশায় সমর্থন জোগায়। ওরা আমাকে নিয়ে গর্বিত। আমার ছেলেরা তো অফিসে আসার সময় চাবি, চশমা, এগুলো এগিয়ে দেয়। এটা আসলে খুবই জরুরি। পরিবারের এমন সমর্থন খুব অল্প নারীই পায়। না পেলেও এ রকম পেশায় নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। পরিবার ও সমাজ সমর্থন করবে না কত দিন?    

ফায়ার ফাইটার নাসরিন সুলতানা
প্রশ্ন

প্রথম অপারেশনের অভিজ্ঞতা বলেন

২০০৯ সালে আমি টেলিফোন অপারেটর হিসেবে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দিই। তারপর পদোন্নতি পেয়ে লালবাগ ফায়ার স্টেশনে যোগ দিলাম। স্টেশনের পাশেই একদিন বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগে। ফায়ার সাইরেন বাজল, সবাই ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বের হয়ে গাড়িতে উঠল। আমিও সবার সঙ্গে গাড়িতে উঠি। কী হবে বা আমি গিয়ে কী করব—এসব ভেবে আমার বুক ধড়ফড় করছিল। আয়াতুল কুরসি পড়ে নিজেকে সাহস দিলাম। কিন্তু স্পটে গিয়ে দেখি, ততক্ষণে আগুন নেভানো হয়ে গেছে। ওই দিন আমাদের আর কিছু করতে হয়নি, কিছু তথ্য সংগ্রহ করে ফিরে আসি।


কোথাও বড় আকারে আগুন লাগলে আমাদের সব স্টেশন থেকে সেখানে যেতে হয়। এমনই এক দিন মোহাম্মদপুর বউবাজার বস্তিতে দিবাগত রাত দুইটায় বড় আকারে আগুন লাগে। স্পটে যাওয়ার পর লোকজন চারদিক থেকে আমাকে ঘিরে ধরেছিল, আর আর্তনাদ করছিল। সবাই তার ঘর বাঁচাতে বলছিল। তারা বুঝতে পারেনি যে আমি নারী।


ইউনিফর্ম পরলে তেমন একটা বোঝার উপায়ও থাকে না যে আমাদের মধ্যে কে নারী, কে পুরুষ। তখন আমি তাদের আশ্বাস দিলাম যে আমরা যেহেতু এসেছি, একটা ব্যবস্থা হবেই। তখন তারা আমার কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসে নারীও আছে! ওই দিন সফলভাবে আমরা আগুন নিভিয়ে ফিরে আসি। সেদিন তাদের চোখে আমার প্রতি আস্থা দেখে নিজেরই নিজের প্রতি আস্থা ও সাহস বেড়ে গিয়েছিল।


আগে ফায়ার ফাইটারদের নাম ছিল ফায়ারম্যান। নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এর নাম করা হয়েছে ফায়ার ফাইটার। আমি চাই, আমার মতো আরও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ুক। ওই দিন আমার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা দেখেই আসলে ভয়টা কেটে গিয়েছিল। ভয়কে জয় করা যাকে বলে আরকি। এরপর অনেক অপারেশনে অংশ নিয়েছি। সেই সাহসিকতার জন্য ২০১৫ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সাহসিকতার প্রেসিডেন্ট সেবামূলক পদকও পাই।  

নাসরিন সুলতানা
প্রশ্ন

অন্যান্য পেশার তুলনায় নারীরা এই পেশায় এখনো কিছুটা বিমুখ। এর কারণ কী?

বর্তমানে প্রায় সব পেশায়ই নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারীরা এখন অনেক বেশি ক্যারিয়ার–সচেতন। কিন্তু এখনো নারীরা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কম আগ্রহী। এর পেছনে অনেক কারণ আছে, পারিবারিক ও সামাজিক বাধা আছে। ফায়ার ফাইটারদের কাজ একই সঙ্গে দুঃসাহসিক, কিছুটা ঝুঁকির আর অনেকটা উত্তেজনার। কোথাও আগুন লাগলে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আর আগুন নেভাতে আমরা ওই ঘরে যাই। কিছুটা ঝুঁকি তো রয়েছেই। তবু আমরা এটা উপভোগ করি। কাজ শেষে যখন মানুষগুলোর মুখে হাসি দেখি, তাদের দোয়া পাই, নিজেকে মনে হয় হিরো! সাহস, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আমরা ঝুঁকি ও ভয়কে জয় করে আসি। আমি চাই, নারীরা আরও বেশি করে ফায়ার ফাইটিং ও এ–জাতীয় পেশায় আসুক। কেননা, নারীরা সবকিছু পারে। জল, আগুন, স্থল, আকাশ—এখন কোথায় নেই নারীরা? তার মানে আমরা পারি। এই অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

ফায়ার ফাইটার নাসরিন সুলতানা

Also Read: যেদিন পৃথিবীতে নেমে এসেছিল চন্দ্র

Also Read: চমকে দিন বিয়ের উপহারে