Thank you for trying Sticky AMP!!

বহুমুখী অসুখ পিসিওএস

বর্তমান বিশ্বের নারীরা যে সমস্যাগুলোতে বেশি ভুগে থাকেন, তার অন্যতম হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস)। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতি ১০ জন নারীর ভেতর অন্তত ১ জন এ রোগে আক্রান্ত। এ নিয়ে আলোচনা হলো ‘ডিজিটাল হসপিটাল লাইভ: হ্যালো ডক্টর’-এর অষ্টম পর্বে।

ডা. শ্রাবন্য তৌহিদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন কুমুদিনী উইমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেলী নার্গিস

এবারের বিষয় ছিল—পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস): সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণে গর্ভধারণ।

ডা. শ্রাবন্য তৌহিদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন কুমুদিনী উইমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেলী নার্গিস। অনুষ্ঠানটি ২৮ জানুয়ারি প্রথম আলো ও ডিজিটাল হসপিটালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

প্রথমেই ডা. সোহেলী নার্গিস পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কী এবং কেন হয়, তা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি বহুমুখী অসুখ। মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বড় হয়ে ডিম বের হওয়ার কথা, তাতে বাধা সৃষ্টি হয় এবং একসময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।’

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের ফলে মেয়েরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা যায়, সেটি হলো অনিয়মিত পিরিয়ড। সাধারণত ২১–৩৫ দিনের মধ্যে পিরিয়ডের স্বাভাবিক সময়। কিন্তু পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হলে দুই মাস বা তিন মাস পরপর পিরিয়ড হয়। যাঁরা এই সমস্যার সম্মুখীন, তাঁদের ভেতর ৫০ শতাংশ মেয়েই ওবিস। অর্থাৎ তাঁদের ওজন ও বিএমআই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। বিএমআই ২৫–৩০ হলে ওভারওয়েট এবং ৩০–এর বেশি হলে ওবিস বলা হয়। এদের ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে ওষুধ না খেলে পিরিয়ড হয় না। এ ছাড়া পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হলে অতিমাত্রায় ব্রণ, অবাঞ্চিত লোম, ঘাড়ের পেছনে, হাতের নিচে পিগমেন্টেশন, বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে বলে জানান ডা. সোহেলী নার্গিস।

পিসিওএসের সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেসব ওবিস রোগী পিসিওএসে আক্রান্ত, তাঁরা যদি নিজেদের ওজন পাঁচ শতাংশ কমাতে পারেন, তাহলে তাঁদের পিরিয়ড নিয়মিত হতে শুরু করবে। আর ওজন ১০ শতাংশ কমাতে পারলে ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে এবং বন্ধ্যাত্বের সমস্যা পুরোপুরি দূর হবে। পিসিওএসের রোগীদের অবশ্য ওজন কমানো অনেক কঠিন। ডা. সোহেলী নার্গিস বলেন, ‘ওজন কমাতে হলে সপ্তাহে অন্তত এ উদ্দেশ্যেই ১৫০ মিনিট শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে হবে। সেই সঙ্গে দুই দিন রোজা রাখতে হবে, লো কার্ব ডায়েট করা যেতে পারে, রাতের খাবার যতটুকু সম্ভব আগে খেতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে, ফলমূল ও শাকসবজি খেতে বেশি করে খেতে হবে’।

তিনি বলেন, ওজন কমতে থাকলে কিছু পরীক্ষা করা হয়। এর ভেতর এলএইচ হরমোন পরীক্ষার পর এর পরিমাণ বেশি পাওয়া গেলে ওষুধ দেওয়া হয়। আর সবকিছুর পরও যদি গর্ভধারণ না হয়, তখন ওভ্যুলেশন ইনডুসিং ড্রাগ প্রেসক্রাইব করা হয় বলে জানান ডা.সোহেলী নার্গিস। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘৯০–৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রোগীরা জীবনযাপন পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করে গর্ভধারণ করতে পারছেন।’

এই রোগ লক্ষণ দেখে এবং কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। এর ভেতর তলপেটের আলট্রাসাউন্ড এবং পিরিয়ডের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে এলএইচ আর এফএসএইচ হরমোন পরীক্ষা করা লাগে। পিসিওএস হলে এলএইচ, এফএসএইচ হরমোনের সমান বা বেশি থাকে।

পিসিওএস সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে এবং রোগী যদি মোটা হতে থাকেন, তাহলে দীর্ঘকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন টাইপ টু ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার, ডিপ্রেশন ইত্যাদি। এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার নিয়ে ডা. সোহেলী নার্গিস বলেন, দীর্ঘদিন পিরিয়ড না হলে এন্ডোমেট্রিয়ামের ঘনত্ব বেড়ে যায়। খুব ছোটবেলা থেকে এমন হতে থাকলে শরীরে যে প্রোজেস্টোজেন আসার কথা, তা না এসে শুধু এস্ট্রোজেন আসে। এভাবে আস্তে আস্তে ৪০ বা ৪৫ বছর বয়সে যেয়ে এন্ডোমেট্রিয়াম ক্যানসার হতে পারে।’

এ রোগের চিকিৎসা করার আগে ওজন কমানোটা খুব জরুরি। এর বিকল্প নেই। এরপর লক্ষণ বুঝে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। অবিবাহিত মেয়েদের অনিয়মিত পিরিয়ড হলে উইথড্রয়াল ব্লিডিংয়ের জন্য দেড় মাস পরপর ওষুধ দেওয়া হয়। বিবাহিত মেয়েদের বেলায় বন্ধ্যাত্বের সমস্যা হলে মেটফরমিং বা ওভ্যুলেশন ইনডুসিং ড্রাগ দেওয়া হয়। এর ভেতর ওজন কম থাকলে দীর্ঘকালীন জটিল সমস্যাগুলো এড়ানো যায়। এ জন্য ডা. সোহেলী নার্গিস বারবার ওজন কমানোর ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চর্চাটি ছোটবেলা থেকেই করতে হবে।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ডা. সোহেলী নার্গিস দর্শকদের পিসিওএস–সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেন।