Thank you for trying Sticky AMP!!

শরীরে লবণ কমে গেলে কী হয়

শরীরের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবণ। আমাদের রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি খনিজ লবণ নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রেখে চলে। এসব লবণের মধ্যে সোডিয়াম আমাদের স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য সবচেয়ে জরুরি।

কোনো কারণে সোডিয়াম কমে যাওয়া একটি জরুরি মেডিকেল পরিস্থিতি। তাই সোডিয়াম কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে অতিসত্বর নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়া আবশ্যক। আর সোডিয়াম যাতে না কমে, তেমন ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত। কারও বারবার সোডিয়াম কমার ঘটনা ঘটলে কারণ অনুসন্ধান করাও জরুরি।

লবণ–পানি কখন কতটা গ্রহণ করতে হবে, তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে

কেন কমে সোডিয়াম

বমি, পাতলা পায়খানা কিংবা অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে সোডিয়াম। তা ছাড়া যেহেতু আমরা খাবারের মাধ্যমেই লবণ গ্রহণ করি, তাই অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণের কারণেও কমে যেতে পারে সোডিয়ামের মাত্রা। আবার দীর্ঘমেয়াদি নানা সমস্যার কারণে, যেমন কিডনি, লিভার বা হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদির কারণে সোডিয়াম কমে যেতে পারে। কিডনি যেহেতু লবণপানির ভারসাম্য বজায় রাখে, তাই কিডনি রোগীদের এটি একটি পরিচিত সমস্যা।

বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে সোডিয়াম কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে মাত্র ১ থেকে ২ বার বমি বা পাতলা-পায়খানার কারণেই শরীরের লবণের মাত্রার তারতম্য হয়ে যায়। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও এমনটা হতে পারে, বিশেষ করে যেসব ওষুধ প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, যেমন ডাইউরেটিকস। হরমোনজনিত কিছু সমস্যা যেমন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা লবণ বারবার কমে যাওয়ার জন্য দায়ী।

কীভাবে বুঝবেন

সোডিয়াম কমে গেলে প্রধানতম যে লক্ষণ বোঝা যায়, তা হলো জ্ঞানের মাত্রার তারতম্য হওয়া। অসংলগ্ন আচরণ, আপনজনদের চিনতে না পারা, এলোমেলো কথা বা উত্তেজনা ইত্যাদি। বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ করেন বা কথা কমে যায়, নির্জীব হয়ে পড়েন বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম মিথস্ক্রিয়া করেন—তবে সতর্ক হন। কারও কারও খিঁচুনিও হতে পারে। কেউ অচেতন হয়ে পড়তে পারেন।

কী করবেন

সোডিয়াম কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে রোগীকে। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ওরস্যালাইন খাইয়ে নিতে পারেন। বিশেষত যাদের শরীর থেকে সোডিয়াম বেরিয়ে যাওয়ার মতো কোনো কারণ লক্ষণীয় (যেমন বমি, পাতলা পায়খানা কিংবা অতিরিক্ত ঘাম হয়েছে) অথবা এর আগে সোডিয়াম কমে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ স্যালাইন বা লবণপানি খাইয়ে দেওয়া উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগীদের ধারণা, স্যালাইন খেলে রক্তচাপ ও সুগার বাড়ে, তাই খাওয়া যাবে না। কিন্তু মনে রাখবেন, যেকোনো মানুষেরই বমি বা ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত স্যালাইন খেতে হবে। এতে সিদ্ধান্তহীনতার কিছু নেই। প্রাথমিক ও জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবার জন্য একই নিয়ম।

প্রাথমিক চিকিৎসা বাড়িতে হলেও এরপর চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। কারও ক্ষেত্রে মুখে খাবার লবণ, বড়ি আবার কারও ক্ষেত্রে ভর্তি করে শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে। আবার লবণ কমে যাওয়ার লক্ষণ অনেক সময় স্ট্রোক, মস্তিষ্কের রোগের সঙ্গে মিলে যায়। তাই নিশ্চিত হতে পরীক্ষা করা দরকার।

বারবার কমে যাচ্ছে?

বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ কিংবা প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে বারবার সোডিয়াম কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কীভাবে এই বারবার লবণের ঘাটতি এড়ানো যায়। কারণ, দূর করা গেলে চিকিৎসা সহজ।

সোডিয়াম কমার চিকিৎসা নিজে নিজে করা যায় না। সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণের চিকিৎসা নির্ভর করে সোডিয়ামের মাত্রা, রোগীর শরীরে পানির মাত্রা এবং কতটুকু সময়ের মধ্যে ঘাটতি হয়েছে প্রভৃতির ওপর। দ্রুত সোডিয়ামের মাত্রা বাড়াতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই এগুলো সঠিকভাবে না জেনে চিকিৎসা করানো বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে।

জটিলতা

রক্তে লবণ কমে যাওয়ার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা একেবারে থেমে যেতে পারে। অর্থাৎ যেসব স্নায়বিক সমস্যা সৃষ্টি হয়, সেগুলো আর কখনোই স্বাভাবিক অবস্থায় আর ফিরে না–ও আসতে পারে। রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন।

লবণের ঘাটতি প্রতিরোধে করণীয়

  • অত্যধিক উষ্ণ তাপমাত্রার স্থানে গেলে বা রোদে কাজ করলে, খুব ঘাম হলে ওরস্যালাইন মেশানো পানি পান করুন।

  • জ্বর হলে বা অসুস্থতার জন্য কিছু না খেতে পারলে অন্তত ওরস্যালাইন মেশানো পানি পান করবেন।

  • বমি, পাতলা পায়খানা হলে অবশ্যই প্রতিবার ওরস্যালাইন খাবেন। বমির জন্য স্যালাইন রাখতে না পারলে ভর্তি হয়ে শিরায় স্যালাইন নিতে হবে।

  • দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলে চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন আপনার জন্য দৈনিক কতটা পানি ও লবণ গ্রহণ করা আবশ্যক এবং কোনো পরিস্থিতিতে আপনি স্যালাইন সেবন করতে পারবেন কিংবা পারবেন না।

  • বয়স্ক ব্যক্তিরা যাঁরা খুব কম খাদ্য গ্রহণ করেন বা নাকে নল দিয়ে বা তরল খাদ্য ছাড়া কিছু খেতে পারেন না, তাঁদের দৈনিক চাহিদা পূরণে তরল খাবারে লবণ দিতে হবে।

  • বারবার লবণ কমলে কিডনি রোগ, কোনো ওষুধের প্রভাব, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি আছে কি না জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

অনুলিখন: ডা. রাফিয়া আলম