Thank you for trying Sticky AMP!!

ডায়াবেটিসের রোগীদের কেন পিপাসা পায় বেশি

কেন ডায়াবেটিসের রোগীদের পিপাসা বেশি লাগে? (প্রতীকী ছবি)

গলা শুকিয়ে যাওয়া ও প্রচণ্ড পিপাসা লাগা—এই দুটিকে আমরা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হিসেবে জানি। কারও যদি বারবার গলা শুকায় আর বারবার পানি খেতে হয়, তখন আশপাশের লোকেরা বলেন, তুমি ডায়াবেটিসটা পরীক্ষা করে নাও। কিন্তু কেন ডায়াবেটিসের রোগীদের পিপাসা বেশি লাগে?

ডায়াবেটিস হলো মূলত বিপাকজনিত একটি সমস্যা। শরীরে যথাযথ ইনসুলিনের মাত্রা বা কার্যকারিতা না থাকলে রক্তের শর্করা বিপাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে রক্তে স্বাভাবিকের তুলনায় শর্করা বেড়ে যায়। রক্তের এই বাড়তি শর্করা শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কিডনি তখন বেশি করে প্রস্রাবের মাধ্যমে শর্করা ছেড়ে দিতে থাকে। একে বলে অসমোটিক ডাইউরেসিস। মানে প্রস্রাবের সময় গ্লুকোজের সঙ্গে তখন অনেকটা পানিও বের হতে থাকে।

এ কারণে প্রায়ই শুনে থাকবেন, ডায়াবেটিসের রোগীর বারবার টয়লেটে যেতে হয়। এমনকি রাতে ঘুম ভেঙে প্রস্রাব করতে যেতে হয় কয়েকবার। এটাও ডায়াবেটিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। তো বারবার প্রস্রাব হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে অবস্থিত পিপাসা কেন্দ্র সব সময় উজ্জীবিত হয়ে থাকে। ফলে বারবার পানির পিপাসা পায়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগী যত পানি পান করেন, তত বেশি প্রস্রাব হতে থাকে। আবার শরীর পানিশূন্য হয়, পিপাসা পায়। এই চক্র চলতেই থাকে।

এই অতিরিক্ত পিপাসা থেকে মুক্তির উপায় কী

এক. যদি কারও রক্তের সুগার সুনিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে এসব উপসর্গ কমে যায়। সাধারণত রক্তের সুগার একটি বিশেষ মাত্রার ওপর গেলে তারপর কিডনি দিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে গ্লুকোজ নির্গত হয়। এর আগে নয়। তাই চেষ্টা করতে হবে সব সময় রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ভালো নিয়ন্ত্রণ মানে হলো, খালি পেটে ৬ মিলিমোল বা এর কম, খাবার ২ ঘণ্টা পর ৮ মিলিমোল বা তার কম এবং তিন মাসের গড় এইচবিএওয়ানসি ৭ শতাংশের কম থাকা।


দুই. সব সময় হাইড্রেটেড থাকবেন। যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করবেন। দিনে অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস। কারণ, ডায়াবেটিসের রোগীর শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে।


তিন. পানির বিকল্প হিসেবে চিনিবিহীন বাড়িতে তৈরি ফলের রস, লেবু পানি ইত্যাদি পান করতে পারেন। চা–কফি অতিরিক্ত পান করবেন না। এগুলো শরীরকে আরও পানিশূন্য করে। অ্যালকোহলও এড়িয়ে চলা ভালো।


চার. ডায়াবেটিসের রোগীরা নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করে থাকেন। খুব গরমের সময় বাইরে রোদে না হেঁটে ঘরে এক্সারসাইজ করতে পারেন। অথবা ভোর বা সন্ধ্যা এমন শীতল সময় বেছে নিন। ব্যায়ামে যাওয়ার সময় সঙ্গে পানির বোতল নেওয়া ভালো। একটু একটু করে পানি পান করবেন। অনেক ঘাম হলে লবণ পানি পান করতে পারেন।


পাঁচ. চিনিযুক্ত পানীয়, কোলা খাবেন না। মিষ্টি বা ডেজার্টও না। এগুলো আকস্মিকভাবে রক্তের গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়। কিডনি দিয়ে গ্লুকোজ নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। এতে করে পিপাসা বাড়বে।


ডা. তানজিনা হোসেন: সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

Photo by Polina Tankilevitch from Pexels