Thank you for trying Sticky AMP!!

ভালোবাসার গল্পের আইডিয়া চেয়ে আম্মু আর আপুর কাছে যা শুনতে হলো

‘ছুটির দিনে’র আহ্বানে ভালোবাসার টক–ঝাল–মিষ্টি গল্প লিখে পাঠিয়েছেন পাঠক। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগেই পড়ুন বাছাই এমনই একটি লেখা।

আম্মু, ভালোবাসার গল্প লিখব, একটা আইডিয়া দাও তো।

‘আম্মুর নিজেরই তো নীরস অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। নানা খুঁজে আনছে, ব্যস, চলছে তাদের সংসার,’ আম্মুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাশ থেকে আপু বলে উঠল। ‘আমার কাছে শোন ভালোবাসার পরম সমাপ্তি। যখন তোর দুলাভাই রাশেদের সঙ্গে ফেসবুকে কথা বলার পর প্রথম দেখা করব, যে একটা উৎকণ্ঠা কাজ করেছে...’

‘তখন আমার মেট্রিক পরীক্ষা শেষের দিকে,’ আপুর কথার মধ্যেই বলে উঠল আম্মু। ‘একদিন সন্ধ্যায় বাবা এসে বলল, পরের শুক্রবার আমার বিয়ে। গ্রামের ছেলে, ঢাকায় ভালো ব্যবসা করে। যাকে জীবনসঙ্গী বানাব, তাকে ভালোবাসা তো দূর, একনজর না দেখেই কবুল বলার যে সাহস, তোদের তা নাই।’

আমি একমত বলে আমার হাজিরা দিলাম।

আমার ভোট হারিয়ে আপুর যেন ইগোতে লাগল। মুখ বাঁকিয়ে বলল, ‘ওই তো শেষ। তারপর কবুল বললা আর সেই সুখে শান্তির সংসার। আমার হয়েছে কি শোন, প্রেম চলছে ভালোই, হঠাৎ রাশেদ গায়েব। ওর কয়েকজন ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞাসা করলাম, তারাও কিছু জানে না। মুঠোফোনও অফ। ওর বাসায়ও যেতে পারছি না। কি যে টেনশন। তারপর গাধাটা এক সপ্তাহ পর দেখা করে আর অনেক গিফট দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল, উনার স্কুল ফ্রেন্ডরা তাকে একপ্রকার জোর করে কক্সবাজার নিয়ে গিয়েছিল!’

: বিয়েটা হয়েছে মাত্র দুদিন, লাজ-শরমে তেমন কথাই হয় নাই। সকালে দেখলাম তোর বাবা কোথায় চলে গেল। কিছু বলেও গেল না আর বাড়ির ছোট বউ দেখে কাউকে জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলাম না। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছি না। সবাই খুব নরমাল, যেন এমন সব সময় হয়। তিন মাস পর তোদের বাবা ফিরল। জানতে পারলাম, ব্যবসার কাজে উনি নাকি এমন মাসের পর মাস ঢাকায় থাকেন।

‘তবে বাবা কিন্তু কিপ্টুস আছে। দেখো, রাশেদ বিয়ের পরও কত জায়গায় নিয়ে যায়। এই বছর আমরা মালদ্বীপ ঘুরে এলাম। কিন্তু বাবা তোমাকে কই নিয়ে গেছে ওই গ্রামের বাড়ি ছাড়া। মনে পড়েছে, একবার শুধু আমরা কক্সবাজার গিয়েছিলাম।’

: সেইটাও যেতাম নারে মা, তোরা দুইটা খুব করে ধরলি, তাই গেলাম। মধ্যবিত্ত রোজগারের সংসার আমাদের, দুদিনের আনন্দে যাতে দুই সপ্তাহের কষ্টে না পড়তে হয়, তা আমাদের দেখতে হতো। কিন্তু দেখ, তোর ভার্সিটির ট্যুর কিংবা তোর ছোট ভাইয়ের প্রথম পাসপোর্টে কলকাতা ভ্রমণ—সবকিছুই কিন্তু হয়েছে তোর কিপ্টুস বাবার টাকায়।

‘ওই যে মা, তুমি সব সময় বাবার পক্ষ নিয়েই কথা বলো।’

: এইটাই তো ভালোবাসারে মা!

‘তো, বাবাকে নিয়ে কোনো আক্ষেপ নাই?’

: থাকবে না কেন, অবশ্যই আছে। কিন্তু যখন তুই একটা মানুষকে ভালোবাসবি, তখন তার শতটা ভালোর মধ্যে দুই একটা আক্ষেপ নিয়ে তোর কোনো ভ্রুক্ষেপ করতে মন চাইবে না।

‘তোমাদের ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে বাবা ৩০ বার ভালোবাসি বলেছে?’

: ৩০ বার না মাত্র তিনবার বলেছে, যা এখনো মনে আছে।

‘এইটা আবার কীভাবে ভালোবাসার প্রকাশ হলো? রাশেদ যদি বিয়ের আগের মতো প্রতিদিন ‘ভালোবাসি’ বলে মেসেজ না করে, মনের মধ্যে খুঁতখুঁত করে, ও আমাকে আগের মতো ভালোবাসে তো! তোমার মধ্যে এমন খুঁতখুঁত কাজ করে না?

আম্মু হেসে বলল, ‘বিয়ের আগে তো প্রেমই ছিল না! ওই যে বললি আমাদের ছিল নীরস অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। তবে একটা কথা সব সময় মনে রাখবি, যখন আচরণে ভালোবাসা প্রকাশ পায়, তখন তা মুখে বলতে হয় না...আর যদি মুখে ভালোবাসি বলেই ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হয়, তখনই মনের ভালোবাসার অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে।’

‘তো কার ভালোবাসা জিতল?’

আমি প্রায় চিৎকার করে বললাম, মা-বাবা!