Thank you for trying Sticky AMP!!

এমআইটিতে পড়ার স্বপ্ন যাদের

এমআইটির ক্যাম্পাস

উচ্চমাধ্যমিক পাস করার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেছে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিস উল সিফাত। এ ঘটনা আরেকবার প্রমাণ করল, মেধা, দক্ষতা ও বিষয়ভিত্তিক গভীর জ্ঞান প্রমাণ করতে পারলেই কেবল এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায়, পরীক্ষার ফলাফল এখানে মুখ্য নয়।

এক যুগ ধরে এমআইটি বিশ্বের ১ নম্বর প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে চলছে। এখানে ভর্তি হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক ভালো ফলের পাশাপাশি ইংরেজি দক্ষতা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমেও উল্লেখযোগ্য অর্জন থাকতে হয়। আমার জানামতে, স্নাতক শ্রেণিতে যে পাঁচ বাংলাদেশি এখানে পড়ছে, তারা প্রত্যেকেই গণিত, পদার্থ কিংবা জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে কিছু না কিছু পেয়ে এসেছে। নাফিস যেমন আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। অপর দিকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বর্তমানে এমআইটিতে পড়ছে মাত্র ১৩ জন। বেশির ভাগই বুয়েট থেকে পাস করা শিক্ষার্থী-শিক্ষক।

এমআইটি একটি ভর্তি কমিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে। একক কোনো শিক্ষক তার পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষার্থী নিতে পারে না। কমিটি প্রথমে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আবেদন যাচাই-বাছাই করে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হলে প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সুযোগ পেয়ে গেলে একটা না একটা বৃত্তির ব্যবস্থা হয়েই যায়।

এমআইটিতে কিন্তু প্রকৌশল ও প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা কিংবা মানবিক বিজ্ঞানেও পড়ার সুযোগ আছে। তবে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা মানুষের দোরগোড়ায় নিতে যেসব অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা দরকার, সেগুলোকেই এখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সে জন্যই এমআইটিতে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা অনেক।

একবার স্নাতকে ভর্তি হতে পারলেই যে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডিতে ভর্তির সুযোগ মিলবে, তা কিন্তু নয়। অনেকেই ঝরে পড়ে। যারা টিকতে পারে, তারা পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেই কেবল পরবর্তী কোর্সে ভর্তি হতে পারে।

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির জন্য গবেষণা তত্ত্বাবধায়কসহ তিনজন শিক্ষকের সুপারিশপত্র দরকার হয়। গতানুগতিক সুপারিশপত্র দিলে হবে না। শিক্ষার্থী ক্লাসে কতটুকু মেধার পরিচয় দিয়েছে, জটিল সমস্যা সমাধান ও নেতৃত্বদানের সক্ষমতা তার আছে কি না, সহশিক্ষা কার্যক্রমে সে কতটুকু যুক্ত, এসব কথা সুপারিশপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা জরুরি। তিনজনের সুপারিশপত্র অনেকটা একই রকম বা দায়সারা গোছের হলেও ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

Also Read: বৃত্তি দিচ্ছে সৌদি আরব, সুযোগ পাবেন ২৫৬ জন বাংলাদেশি

এমআইটিতে পড়া ও গবেষণার বিষয়ে আমার উপলব্ধি হলো—জ্ঞানের গভীরতার সঙ্গে প্রায়োগিক সম্পর্কটা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়োগিক ধারণা তৈরি করার জন্য প্রচুর অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়। অ্যাসাইনমেন্টগুলো সমাধান করতে হলে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি নিজের দর্শন, স্বকীয়তা ও যুক্তিসম্পন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে উপস্থাপন করতে হয়। শিক্ষানবিশির মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বাস্তব সমস্যার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।

এখানে শিক্ষার মূলনীতিই হচ্ছে শিক্ষার্থীকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন শিক্ষাজীবন শেষে সে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে পারে। গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল থেকে শুরু করে গাড়ি নির্মাতা, বায়োটেক ও মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে—সবার সঙ্গেই এমআইটি নিবিড় সম্পর্ক রেখে কাজ করে। তাই এমআইটিতে পড়ার লক্ষ্য যদি থাকে, তরুণদের আমি বলব—হৃদয়ে বিশ্বাস রেখে প্রস্তুতি চালিয়ে যাও।

লেখক: অতিথি অধ্যাপক ও ফুলব্রাইট স্কলার, নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, এমআইটি, যুক্তরাষ্ট্র