সমসময়ের নকশা এবং সজ্জাভাবনায় প্রাধান্য পাচ্ছে সবকিছুর পরিমিত ব্যবহার। ‘অতি’ শব্দটিকে নকশাবিদরা সযত্নে পরিহার করছেন। অন্দরসজ্জায়ও তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে সহজতর সৌন্দর্যের উদ্ভাস।
সমসাময়িক সময়ে নকশার ক্ষেত্রে জনপ্রিয় একটি ধারণা ‘মিনিমালিজম’। মিনিমালিজম হলো নকশা এবং সজ্জার এমন এক শৈলী, যা আচরণগত ভাবে দারুণভাবে স্বল্পতা, সরলতা ও সীমাবদ্ধতার প্রকাশ ঘটায়। ইংরেজি প্রবাদ ‘লেস ইজ মোর’ আসলে মিনিমালিজমের মূলতত্ত্ব হিসেবে বিবেচিত।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রেও মিনিমালিজম এখন জনপ্রিয় ধারণা। বাড়ির সাজসজ্জায় জিনিসপত্রের স্বল্পতার প্রাধান্য, জ্যামিতিক আকৃতি ও রঙের সীমাবদ্ধতা ধীরে মানুষের কাছে হয়ে উঠছে আরামদায়ক। স্থপতিদের কাছেও মিনিমালিজম বর্তমানকালের আলোচিত ধারণা বলা যায়। মিনিমালিস্ট নকশার মৌলিকত্ব বিবেচনা করলে যেসব উত্তর পাওয়া যায় সেগুলো হলো:
রঙের সীমাবদ্ধতা
মিনিমালিজম মূলত নকশার সব উপাদানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শুধু এক রংনির্ভর ইন্টেরিয়র কিংবা দুটি রঙের মিশ্রণ একটি জনপ্রিয় ধারণা। মূলত রঙের ব্যবহার হতে হবে নিরপেক্ষ এবং সরল; যা চোখের জন্য আরামদায়ক এবং নান্দনিকও বটে। মিনিমালিজমের ক্ষেত্রে রঙের সীমাবদ্ধতা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক বৈশিষ্ট্য। রঙের একঘেয়েমি দূর করার জন্য কখনো ভিন্ন রঙের এক-দুটো আসবাবের সংযোজন করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ।
সহজ জ্যামিতিক আকৃতি
মিনিমালিজম মূলত সরলরেখা, মসৃণ বাঁক, সমতল ও সহজ আকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই মিনিমালিস্টিক ইন্টেরিয়রে মূলত জটিল আকৃতির আসবাবের ব্যবহার নেই বললেই চলে। বরং মিনিমালিজম মূলত সমতল রেখা ও সহজ জ্যামিতিক আকৃতিকেই প্রাধান্য দেয়।
অলংকরণে বিবেচনা
মিনিমাল ইন্টেরিয়রে সঠিক সজ্জা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি। মিনিমালিস্ট ইন্টেরিয়রকে পূর্ণতা দিতে আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে প্রকৃতির। একই আকারের কিংবা ভিন্ন আকারের ছোট-বড় পাত্রে গাছের চারা রেখে সাজানো যেতে পারে ঘরের এক প্রান্ত।
পরিমাণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণমান
কোয়ালিটি ইজ বেটার দ্যান কোয়ানটিটি—ইংরেজি প্রবাদটিকেই যেন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে মিনিমালিজম। ঘরের অন্দরসজ্জায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছুই না রেখে বরং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঠিক স্থান নির্ণয়ই বেশি জরুরি। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই যথেষ্ট বলে মনে করা হয় মিনিমালিজমে। সাজসজ্জায় এই কৃচ্ছ্র এবং স্বল্পতাই যেন অন্য রকম স্বাচ্ছন্দ্যের বোধ তৈরি করে ঘরে যারা বাস করে তাদের কাছে।
ঘরে প্রাকৃতিক আলোর প্রবেশ
প্রাকৃতিক আলো বাড়ির পরিবেশকে করে তোলে প্রফুল্ল। সূর্যের আলোয় দেয়ালের রং সত্যিকার রূপে ফুটে ওঠে। আসবাব এবং অন্য সবকিছুতেই প্রকাশ পায় সত্যিকারের সৌন্দর্য। প্রাকৃতিক আলোকে মিনিমালিজমের মৌলিক উপাদানও বলা যায়। আলোছায়ার খেলায় বাড়িতে প্রফুল্ল, আরামদায়ক ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ তৈরিতেই মিনিমালিজমের সার্থকতা।