Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন বছর নতুন ঘর

বেতের আসবাব ও দেশি উপকরণ দিয়ে সাজানো ঘর দেখতেও ভালো লাগবে। ছবি: নকশা

সারা দিন শেষে মন যেখানে শান্তি খুঁজে পায়, স্বস্তি খুঁজে পায়—আমাদের সাজানো–গোছানো আবাসস্থল। হতে পারে সেটা একটি বিশাল বাড়ি, হতে পারে সেটা একটি বড় ফ্ল্যাট অথবা ৮০০ থেকে এক হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ছোট ফ্ল্যাট। সামর্থ্য ও রুচি অনুযায়ী বাড়িকে সাজাই আমরা। বসবাসের জায়গাটা ছোট হোক অথবা বড়, সেটা যদি হয় ছিমছাম আর পরিপাটি, বাড়িতে ঢুকলেই মন ভালো হয়ে যাবে।
কেউ যদি দেশীয় পণ্য দিয়ে ঘর সাজাতে চান, তবে সে ক্ষেত্রে ডিজাইনার বাঁশ, বেত, পাট, মাটির পটারি, নকশিকাঁথা, শতরঞ্চি, শীতলপাটি, গ্রামীণ চেকের কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করেও ঘর সাজাতে পারেন। যেমন একটা ফ্ল্যাটে ঢোকার মুখে, দরজার বাইরের দেয়ালে একটু গাঢ় রং ব্যবহার করতে পারেন। বেতের বা কাঠের ফ্রেমের আয়না ঝোলাতে পারেন। অতিথি বা বাড়ির সদস্যরা বাসায় ঢোকার আগে নিজেকে একটু দেখে নিতে পারেন। আয়নার পাশে দেয়ালে টেরাকোটা দেয়াল শো–পিস লাগতে পারে। আবার কাঠের বা বড় আয়রনের র‌্যাক ঝুলিয়ে, তাতে ছোট ছোট পটে মানিপ্ল্যান্ট, ক্যাকটাস বা অন্য কোনো গাছ লাগাতে পারেন।

স্বাগতমে দেশীয় ছোঁয়া
বসার ঘরে আমরা বেতের বা বাঁশের সোফা ব্যবহার করতে পারি। সোফার কভার হিসেবে আমরা এক রঙের হ্যান্ডলুমের কভার ব্যবহার করতে পারি। সঙ্গে রং মিলিয়ে জানালায় গ্রামীণ চেক পর্দা মানিয়ে যাবে। সোফা ব্যাক, সেন্টার টেবিল ও পাশ টেবিলে কুশ কাটার তৈরি কভার ভিন্নতা আনবে। পর্দা, সোফার কভার ইত্যাদির সঙ্গে মিলিয়ে শতরঞ্চি বিছিয়ে দিন। বসার ঘর সাজাতে নানা আকারের পটারি সুন্দর লাগবে। ঋতু অনুযায়ী নানা রঙের তাজা ফুলে সাজাতে পারেন। বসার ঘরের একদিকে আরেকটা শতরঞ্চি বিছিয়ে তাতে ছোট–বড় কুশন রাখা যেতে পারে। এতে বসার জায়গা বাড়বে। একসঙ্গে অনেক মানুষ বসতে পারবে। খাবার ঘর সাজাতে প্রয়োজন হবে খাবার টেবিল ও চেয়ার। এটা কাঠের, বেতের, রট আয়রন বা কাচের টপ দেওয়া হতে পারে। চেয়ারগুলোও টেবিলের সঙ্গে মানানসই হবে। চেয়ারের কভার ব্যবহার করলে দেখতে ভালো লাগবে, সে ক্ষেত্রে জানালার পর্দা ও টেবিলক্লথ হিসেবে দেশীয় কাপড়ে ব্লক বা ছাপা নকশার হতে পারে। টি ট্রলি হিসেবেও কাঠের বা বেতের ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঘরের এক পাশে রাখতে পারেন এমন শোপিস

শোয়ার ঘর সাজাতে
শোয়ার ঘরের আসবাবপত্র বাঁশ, বেত বা কাঠের হবে। ঘরের এক কোণে ল্যাম্পশেড ব্যবহার করা যাবে, শেডটি বাটিক কাপড়ের ব্লকের বা বেতের হতে পারে। তিন উচ্চতার তিনটি ল্যাম্পশেড থাকতে পারে। এর নিচে মাটির চাঁড়িতে ভাসমান ফুল অথবা মোমবাতি থাকতে পারে। দেয়ালে পেইন্টিং ঝোলালে ভালো লাগবে। এ ঘরেও পর্দা ও বিছানার চাদর হিসেবে দেশীয় কাপড় ব্যবহার করলে ভালো লাগবে। শোয়ার ঘরে নীল, সাদা রঙের পর্দা ও বিছানার চাদর ভালো লাগবে। বাচ্চাদের ঘরে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার করা ভালো। এতে তারা উৎফুল্ল থাকে। এ ছাড়া দেয়াল, পর্দা, চাদর ইত্যাদি সহজে ময়লা হয় না। শিশুদের ঘরে বেশি আসবাবপত্র না থাকাই ভালো। ঘরটি খোলামেলা থাকলে তাদের খেলাধুলা করতে সুবিধা হবে।

রান্নাঘরের জন্য
রান্নাঘর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে চুলার ওপরে কিচেন হুড ব্যবহার করতে হবে। দেয়ালে অ্যাডজাস্ট ফ্যান লাগান। এ দুটো ব্যবহার করলে রান্নাঘরের তেল চিটচিটে ভাব এবং ভাজা-পোড়ার গন্ধ থাকবে না। যাঁরা দেশীয় স্টাইলে ঘরবাড়ি সাজান, তাঁরা টেরাকোটা, চায়না ক্লে, কাঠের, বেতের বা হোগলাপাতার তৈরি বাসনকোসন, তৈজসপত্র ব্যবহার করেন। এই বাড়িতে ফলস শিলিং তৈরিতেও বাঁশ বা বেতের ব্যবহার করা যেতে পারে। কেউ যদি বেশি খরচে বাড়ি সাজাতে চান, তবে সেটাও সম্ভব। তবে একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে আমি মনে করি, ফ্ল্যাট ছোট বা বড় যেটাই হোক না কেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে, গুছিয়ে রাখলে, গাছপালার বা ফুলের টব থাকলে বাড়িটিকে সুন্দর লাগবে। নতুন বছরে বাড়িতে পরিবর্তন আনবে আসবাবপত্রের একটু জায়গা বদল। জানালার পর্দাগুলোও কিন্তু ঘরের চেহারা পরিবর্তন করতে পারে। শেষ করতে এসে আবারও বলি, ‘সুন্দর মনের’ প্রতিচ্ছবিই হলো ‘সুন্দর ঘর’। দিনের শেষে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের নিয়ে শান্তিতে, আনন্দে ও নিশ্চিন্তে থাকতে চাই ঘরেই। ঘরটিকে এ কারণে সাজানো উচিত মনের মতো করেই।
লেখক: চেয়ারম্যান, রেডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন