Thank you for trying Sticky AMP!!

যুক্তরাষ্ট্রের মোট রপ্তানি পণ্যের ২ দশমিক ৬৯ শতাংশই হলো রক্ত

রক্ত যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম

যুক্তরাষ্ট্রে আদমশুমারি ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির মোট রপ্তানি পণ্যের ২ দশমিক ৬৯ শতাংশই হলো রক্ত। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে যখন রক্ত কেনাবেচা অবৈধ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এটা কীভাবে সম্ভব?

যুক্তরাষ্ট্রে রক্তের বাণিজ্য অনেক বড়। গ্লোবাল মার্কেট ইনসাইটস ইনকরপোরেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে উত্তর আমেরিকায় রক্তের বাজারের মোট মূল্য ছিল ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির মোট রপ্তানি পণ্যের ২ দশমিক ৬৯ শতাংশই হলো রক্ত।

গ্রিফলস, সিএসএল প্লাজমা, ট্যাকেডা বায়োলাইফ ও অক্টাফার্মা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির রক্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে প্লাজমা সরবরাহের ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানই সবচেয়ে এগিয়ে। এসব প্রতিষ্ঠান রক্ত ও প্লাজমার বিনিময়ে দাতাদের পারিশ্রমিক দেয়, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে রক্ত কেনাবেচা বৈধ। এখানে বলে রাখা ভালো, দুনিয়ায় মাত্র পাঁচটি দেশে রক্তের বিনিময়ে টাকা দেওয়ার নিয়ম আছে। যুক্তরাষ্ট্র বাদে বাকি চারটি দেশ হলো অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি ও হাঙ্গেরি।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডক্টরাল শিক্ষার্থী অ্যানালাইডিস ওচোয়া সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্লাজমাদান সেন্টারগুলো বিজ্ঞাপন দিচ্ছে যে তারা প্লাজমা দান করার প্রথম মাসে দাতাকে ৯০০ ডলার দেবে। প্রথম মাসের পর এই অর্থের পরিমাণ কমতে থাকে। সাধারণত প্রতিবার প্লাজমা দেওয়ার পর একজন দাতা ৩০-৫০ ডলার আয় করতে পারেন।’

যুক্তরাষ্ট্রে প্লাজমা দান করার প্রথম মাসে দাতাকে ৯০০ ডলার করেও দেয়

আগেই বলেছি, দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশেই রক্তদানের বিনিময়ে অর্থগ্রহণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নির্দলীয়, সমাজ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান নিস্কানেন সেন্টারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্লাজমার বিনিময়ে অর্থ গ্রহণে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকার কারণেই পৃথিবীর ৭০ শতাংশ প্লাজমার সরবরাহ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

অ্যানালাইডিস ওচোয়া আরও বলেন, ‘আমি ও আমার সহকর্মীরা প্রথমে প্লাজমা সেন্টারগুলো চিহ্নিত করি। তারপর লক্ষ করি, প্লাজমা সেন্টারগুলো যেসব এলাকায় অবস্থিত, সেসব এলাকার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে কি না। আমরা দেখতে পাই, যেসব এলাকায় বসবাসকারী জনগণ বেশি দরিদ্র, সেসব এলাকায় প্লাজমা সেন্টারের সংখ্যা অনেক বেশি।’

ওচোয়ার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অর্থের বিনিময়ে প্লাজমা দান করা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার একটি প্রক্রিয়া। মার্কিন মুলুকের রক্ত বাণিজ্য নিয়ে ২০২৩ সালে একটি বই প্রকাশ করেছেন মার্কিন সাংবাদিক ক্যাথলিন ম্যাকলাফলিন। বইটির নাম ব্লাড মানি: দ্য স্টোরি অব লাইফ, ডেথ, অ্যান্ড প্রফিট ইনসাইড আমেরিকাস ব্লাড ইন্ডাস্ট্রি। অর্থের বিনিময়ে রক্ত দিয়েছে, এমন শতাধিক মার্কিনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর ভাষ্যে, আনুমানিক ২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনের প্রায় ৮ শতাংশ কোনো না কোনো সময় রক্তের প্লাজমা বিক্রি করছে।

২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনের প্রায় ৮ শতাংশ কোনো না কোনো সময় রক্তের প্লাজমা বিক্রি করছে

তেরেসা পার্কার নামের এক প্লাজমাদানকারী সিএনবিসিকে বলেন, ‘রক্তদানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাচ্ছি বলেই আমি রক্তদান অব্যাহত রাখতে পেরেছি। তা না হলে কাজটা চালিয়ে যেতে পারতাম না। আমি গ্যাস কিনতে পারতাম না, গাড়ির বিমার টাকা পরিশোধ করতে পারতাম না। মাসে সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ ডলার পর্যন্ত আয় করি রক্ত দিয়ে। এ রকম স্থায়ী একটা আয়ের পথ থাকলে জীবনধারণ অনেক সহজ হয়ে যায়।’

সূত্র: সিএনবিসি ও টুডে ডটকম

Also Read: যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের খরচ ইতিহাসের সর্বনিম্ন, কেন, কীভাবে?