Thank you for trying Sticky AMP!!

গুনে গুনে ১২৭টি স্বপ্ন পূরণের অভিযানে নেমেছিলেন তিনি

জন গডার্ড

ছোটবেলায় আমাদের অদ্ভুত সব স্বপ্ন থাকে। কিন্তু বড় হয়ে সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কে? পাগল!

জন গডার্ডকে পাগলই বলতে পারেন। ছোটবেলায় দেখা স্বপ্নগুলো সব পইপই করে লিখে রেখেছেন তিনি। বড় হয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করতে। ১৯৪০ সালের কথা, ১৫ বছরের বালক গডার্ড। এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরে তিনি বসে ছিলেন রান্নাঘরে। হলদে রঙের একটি খাতার ওপরে তিনটি শব্দ লিখলেন তিনি, ‘মাই লাইফ লিস্ট’। সময়ের তালে তালে এই শিরোনামের নিচে তিনি লিখেছেন ১২৭টি স্বপ্ন, যা তিনি পূরণ করতে চান। কী ছিল না এই তালিকায়? পৃথিবীর প্রধান প্রধান পাহাড়-পর্বতে চড়া, দীর্ঘতম নদী সাঁতরে পার হওয়া, সবচেয়ে দ্রুততম বিমান চালনা, ৫ মিনিটে এক মাইল পথ দৌড়ানো ইত্যাদি।

Also Read: ১৮ বছর পর্যন্ত লিখতে-পড়তে পারতেন না, এখন কেমব্রিজের অধ্যাপক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে ছিলেন গডার্ড। এরপরেই মূলত স্বপ্নপূরণে আদা-জল খেয়ে লাগেন তিনি। ১৯৫১ সালে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নীলের ৪ হাজার ১৬০ মাইল পথ তিনি অতিক্রম করেন। যদিও স্থানীয় অভিজ্ঞজনেরা তাঁকে নিষেধ করেছিল এমন ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা না করার জন্য। কিন্তু জন গডার্ড তো আর কথা শুনে ঘরে বসে থাকার মানুষ নন। ৯ মাস অতিবাহিত হয় তাঁর এই ভ্রমণে। গডার্ডের নিকটতম গ্রামটি ছিল ১০০ মাইলের বেশি দূরে। ভ্রমণের সময় তাঁকে কুমির, ঝড়, বন্য জলদস্যুসহ নানা কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই যাত্রার সময় সবাই ভেবেছিল, তিনি হয়তো আর ফিরে আসতে পারবেন না। কিন্তু গডার্ড সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন। কয়েক বছর পর এর চেয়েও বিপজ্জনক ভ্রমণে যান তিনি। কঙ্গো নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর নৌচালনা করেন, আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট ও মার্কো পোলোর যাত্রাপথ পুনরায় শনাক্ত করেন তিনি।

জন গডার্ডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে তাঁর ১২৭টি লক্ষ্যের তালিকা পাওয়া যাবে। যার মধ্যে তিনি ১০৯টি পূরণ করতে পেরেছিলেন। এ সময় তিনি কুমির ও জলহস্তীর আক্রমণের শিকার হয়েছেন, বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়েছেন, হাতি ও গন্ডার দলের তাড়া খেয়েছেন, মিসরীয় জলদস্যুর গুলি খেয়েছেন, মরুভূমির ১৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা সহ্য করেছেন, চোরাবালিতে আটকা পড়েছেন। এ ছাড়া গডার্ড একটি বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন, চারবার পানিতে ডুবতে ডুবতে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন।

১৯২৪ সালের ২৯ জুলাই জন্ম নেওয়া জন গডার্ড শুধু যে ভ্রমণকারী ছিলেন তা–ই নয়, লেখক ও প্রভাষক হিসেবেও সুখ্যাতি ছিল তাঁর। গডার্ডের যেসব স্বপ্ন পূরণ হয়নি, সেগুলোর মধ্যে আছে মাউন্ট এভারেস্ট জয়, চাঁদে ভ্রমণ, টারজানের কোনো সিনেমায় অভিনয় করা ইত্যাদি। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো বাকিগুলোও পূরণ করে ফেলতেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ২০১৩ সালের ১৭ মে।