Thank you for trying Sticky AMP!!

সিজিপিএ ৪-এ ৪, এখন কে কোথায় আছেন

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক। ২০০৫ সাল থেকে এই পদক দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত ৩০ এপ্রিল ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৯’–এর জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করেছে ইউজিসি। তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন করে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জনসহ মোট ১৭৮ জনের নাম আছে। যাঁদের মধ্যে তিনজনের সিজিপিএ ৪.০। তাঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের শায়ান শাহরিয়ার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের জাকিয়া ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শারমিন আক্তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে চারে চার সিজিপিএ ধরে রাখা তো চাট্টিখানি কথা নয়। কীভাবে প্রতিটি সেমিস্টারেই তাঁরা ভালো ফল ধরে রেখেছিলেন, এখন কে কোথায় আছেন, জানতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম আমরা।

যুক্তরাষ্ট্রের বেইলর কলেজ অব মেডিসিনে ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বিষয়ে এখন পিএইচডি করছেন শায়ান

গবেষণাই শায়ানের শক্তি
শুধু পড়াশোনাতেই ভালো ফল করতে হবে—এমনটা কখনোই ভাবেননি শায়ান শাহরিয়ার। নানা সহশিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণায়ও নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন তিনি। শায়ান বলেন, ‘কখনোই নিজেকে শুধু বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনায় আবদ্ধ রাখতে চাইনি। বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডগুলোয় নিয়মিত অংশ নিয়েছি। পাশাপাশি গবেষণা নিয়েও ছিল খুব আগ্রহ। বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতায় স্নাতক পর্যায়েই আমি গবেষণায় যুক্ত হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মানবশরীরে কৃত্রিম চিনির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলাম। এ ছাড়া হৃদ্‌রোগ উপশমে বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও কাজ করেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের বেইলর কলেজ অব মেডিসিনে ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বিষয়ে এখন পিএইচডি করছেন শায়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সময় গবেষণায় যুক্ত থাকাই তাঁকে এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করেন তিনি। শায়ান বলেন, ‘ভালো সিজিপিএর একটা অবদান ছিল। তবে গবেষণায় অভিজ্ঞতার কারণে স্নাতকোত্তর চলাকালেই আমি পূর্ণ তহবিলসহ পিএইচডির সুযোগ পেয়ে যাই।’

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে কাজ করছেন জাকিয়া ইসলাম



জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে জেদ চেপেছিল জাকিয়ার
দৃঢ় মানসিকশক্তিই তাঁকে চারে চার ধরে রাখতে সাহায্য করেছে, মনে করেন জাকিয়া ইসলাম। ২ জুন মুঠোফোনে জাকিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিনই জন্ডিসে আক্রান্ত হই। সুস্থ হয়ে যখন ফিরলাম, বুঝতে পারলাম অনেকগুলো থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস মিস করে ফেলেছি। এই ঘাটতি পূরণ করার একমাত্র উপায় ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পড়াশোনা করা। সেটাই করেছি। প্রথম সেমিস্টারে যখন ৪.০ পেয়ে গেলাম, তখন মনে একরকম আত্মবিশ্বাস এসে পড়ল। এই বিশ্বাস আর ধারাবাহিক পরিশ্রমই আমাকে ৪.০ ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।’ জাকিয়া জানালেন, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—দুই পর্যায়েই তাঁর সিজিপিএ–৪.০।
বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে কাজ করছেন জাকিয়া ইসলাম। তিনি জানালেন, ‘স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করব। যেহেতু ভালো রেজাল্ট ছিল, শিক্ষকতাটাই হয়তো আমার জন্য সহজ হতো। কিন্তু বাকি সবার মতো চাকরির প্রতিযোগিতায় নেমেই আমাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো বলে মৌখিক পরীক্ষায় হয়তো কিছুটা অগ্রাধিকার পেয়েছি। বাকি সব ক্ষেত্রে কিন্তু আমি আর সবার কাতারেই ছিলাম।’

এখনো কোনো চাকরিতে ঢোকেননি শারমিন

শারমিনের লড়াইটা অন্য রকম
শারমিন আক্তারের চ্যালেঞ্জটা ছিল একবারেই অন্য রকম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই তাঁকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। সংসার আর একাডেমিক জীবনের চাপ—দুটোই সমানভাবে সামলেছেন তিনি। তারপরও কীভাবে এত ভালো ফল ধরে রাখলেন? শারমিনের ভাষ্য, ‘অবশ্যই কঠিন ছিল। কখনো ভাবিনি আমার পক্ষে এত ভালো ফল করা সম্ভব। কিন্তু প্রথম সেমিস্টারে যখন রেজাল্টটা হয়ে গেল, তখন আমার মধ্যে বিশ্বাস আসতে শুরু করে। পরে শুধু রেজাল্টটা ধরে রাখার চেষ্টা করে গেছি। আর এই পুরো যাত্রায় আমার স্বামী ভীষণ রকম সহযোগিতা করেছে। বিভাগের শিক্ষকদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।’
এখনো কোনো চাকরিতে ঢোকেননি শারমিন। একাডেমিক জীবনের মতো পেশাজীবনেও সাফল্য পাওয়ার আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শারমিন বলেন, ‘একাডেমিক ফলাফল আসলে চাকরির জন্য খুব বাড়তি সুবিধা দেয়, সেটা বলা যাবে না। আমি আমার মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’