Thank you for trying Sticky AMP!!

যেভাবে ২৪ কেজি ওজন কমালেন এই নতুন মা

যমজ সন্তান ঈণাক্ষী ও নির্বাণকে নিয়ে প্রায়ই হাঁটতে বের হন রায়হান সুলতানা

‘যমজ সন্তান হওয়ার পর ওজন ৪৬ থেকে বেড়ে ৭০ কেজি হয়ে যায়। চলাফেরা করতে সমস্যা হতে থাকে,’ বলছিলেন রায়হান সুলতানা। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস ঢাকা ডেলিগেশনের তিনি জনসংযোগ বিভাগের প্রধান। যমজ সন্তান ঈণাক্ষী ও নির্বাণকে সামলাতে গিয়ে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন রায়হান। একটা সময় বুঝতে পারলেন, এই ক্লান্তির পেছনে অতিরিক্ত ওজনই দায়ী। সন্তানদের বয়স যখন তিন মাস পেরোল, তখন নিজের ওজন কমানোর দিকে মনোযোগ দিলেন। যেহেতু সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে মা হয়েছেন, তাই খুব বেশি ভারী ব্যায়ামের দিকে না গিয়ে হাঁটা দিয়ে শুরু করলেন। দুই সন্তানকে রেখে বাইরে গিয়ে হাঁটার সুযোগ ছিল না। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে ট্রেডমিলে ৩০ মিনিট হাঁটতেন।

রায়হান সুলতানা বলছিলেন, ‘মা হওয়ার পর খুব তাড়াতাড়ি ওজন না কমিয়ে ধীরে ধীরে কমানো ভালো। এতে করে শরীরে বাড়তি চাপ পড়ে না। বিশেষ করে সিজারিয়ান ডেলিভারির পর যেসব মা বাড়তি ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য এটা আমার পরামর্শ।’

খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বরাবরই সচেতন রায়হান। এড়িয়ে চলেন ফাস্টফুড। সবজি খেতে খুব একটা ভালোবাসতেন না। তারপরও খাবারের অনেকটা জুড়ে রাখতেন সবজি। চেষ্টা করেন দুধ, ডিম আর বাদামের মতো খাবার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে।

মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকতেই ওজন কমানোর মিশন শুরু করেন। সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে বাচ্চারা যখন ঘুম থেকে উঠত, তখন সুলতানারও ঘুম ভাঙত। ৮টা থেকে ৯টার দিকে খেয়ে নিতেন সকালের খাবার। তাতে থাকত লাল আটার দুইটা রুটি, একবাটি সবজি আর একটা ডিম। ডিম কখনো সেদ্ধ, কখনো পোচ। এই খাবার একঘেয়ে লাগলে ব্রাউন ব্রেডের সঙ্গে কখনো পিনাট বাটার মেখে খেয়ে নিতেন।

ওজন কমিয়ে এখন ঝরঝরে রায়হান সুলতানা

এরপর ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এক কাপ কফি বা চা। রায়হান বলেন, ‘চিনি ছাড়া চা খেতে পারি না। তাই একটু লাল চিনি মিশিয়ে নিতাম।’ বেলা ১১টার দিকে কোনো একটা ফল খেয়েছেন। বেশির ভাগ সময়ই ফলটা হতো কলা। দুপুরের দিকে এক কাপ ভাতের সঙ্গে পর্যাপ্ত সবজি। সঙ্গে কখনো মাছ বা মাংস। কোরাল থেকে কাচকি—সব ধরনের মাছই খেয়েছেন। মাংসের মধ্যে শুধু মুরগি। বিকেলে খিদে পেলে কখনো কলা, না হলে একমুঠো বাদাম, কিশমিশ বা খেজুর খেয়ে নিতেন। দুপুরের খাবারের মতো একই ধরনের পদ থাকত রাতের খাবারে। রাতের খাবার সাড়ে সাতটার মধ্যে খেয়ে নিতে চেষ্টা করেছেন। রায়হান বলেন, ‘রাতে আধঘণ্টা ট্রেডমিলে হাঁটতাম। এরপর এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমাতে যেতাম। এর বাইরে প্রচুর পানি খেতাম সারা দিন।’

এই জুনে কাজে যোগ দিয়েছেন রায়হান

অনেকেই মনে করেন, বাচ্চা যখন বুকের দুধ খায়, তখন মাকেও প্রচুর ভাত খেতে হবে। এই ধারণা একেবারেই ভুল। দুই বাচ্চাকেই বুকের দুধ খাওয়াতেন রায়হান। যেহেতু যমজ, তাই মাঝেমধ্যে ফর্মুলাও দিতে হতো। রায়হান বলেন, ‘ডায়েট মেনে যেসব খাবার খেতাম, সেসবই ছিল পুষ্টিকর। ফলে বাচ্চাদের দুধ পেতে সমস্যা হতো না।’

এই জুনে কাজে যোগ দিয়েছেন রায়হান। বলেন, ‘সবকিছু সামলে ফিট থাকা আসলে খুব কঠিন কিছু নয়। এ জন্য প্রয়োজন একাগ্রতা ও ইচ্ছাশক্তি। যেমন আমি মনে করি, আমার যমজ সন্তান, সারা দিন কাজ করে এসে ওদের সময় দিতে হবে, দেখাশোনা করতে হবে, এটাই আমার স্বাভাবিক কাজ। তখন আর কোনো কিছুই আমার কাছে কঠিন লাগে না।’

ওজন কমানোকে অনেকেই শুধু সৌন্দর্যের বিষয় মনে করেন। কিন্তু শারীরিকভাবে সুস্থ ও মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্যও ওজন কমানো জরুরি। ওজন কমে এলে খুব দ্রুত স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করা যায়। একসঙ্গে অনেক কাজ করলেও ক্লান্তি লাগে না।