Thank you for trying Sticky AMP!!

পত্রপ্রেরকের কথা ভেবে এই ৭১ বছর বয়সেও আমার অনুতাপের অন্ত নেই

পাঠকই প্রথম আলোর প্রাণ। আর পাঠকের আপন আঙিনা ‘ছুটির দিনে’। প্রথম আলোর রজতজয়ন্তীতে তাই আমরা পাঠকের লেখা নিয়েই হাজির হয়েছি। তাঁদের কেউ জানিয়েছেন ‘ছুটির দিনে’তে পড়া হৃদয়ছোঁয়া কোনো লেখার কথা। কেউ স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছেন স্বনামে প্রকাশিত লেখা নিয়ে, জানিয়েছেন প্রিয় ক্রোড়পত্র নিয়ে নিজের ভালো লাগার কথাও। পড়ুন এমন একটি লেখা।

‘ছুটির দিনে’র ৫৮তম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর। আমার একটি লেখা ছাপা হয় সেই সংখ্যায়। শিরোনাম ছিল ‘আমার দিদির গল্প’। এই দিদি ছিলেন আমাদের পাশের গ্রাম ফুলহরির মানুষ। ফুলহরি গ্রামটি হিন্দুপ্রধান। গ্রামের দুপ্রান্তে দুটি বাজার। পাশে কুমার নদ। কুণ্ডুবাড়ির বধূ হয়ে গ্রামে এসেছিলেন দিদি। আমাকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। দুর্গাপূজার সময় নবমীর দিন দিদির বাড়িতে যেতাম। থালাভর্তি মিষ্টি খেতে দিতেন দিদি। পেটভরে মিষ্টি খেয়ে বাড়িতে ফিরতাম। বিজয়া দশমীর দিন কুমার নদে নৌকায় ঘুরতাম, নদীপাড়ে যেতাম বিসর্জন দেখতে। লেখায় ছিল কুমার নদ নিয়ে আরও নানা স্মৃতিকথা।

আমার সেই দিদি ১৯৭১ সালের এপ্রিলে ভারতে চলে যান। তাঁর সঙ্গে আমার আর কোনো দিন দেখা হয়নি। দিদির স্মৃতি নিয়েই ‘ছুটির দিনে’তে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল। আমি তখন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কর্মরত। আমার কর্মস্থলের ঠিকানা লেখার সঙ্গে ছাপা হয়েছিল। লেখাটি প্রকাশের দুই সপ্তাহ পর এই ঠিকানায় একখানা চিঠি পাই। চিঠিখানা পড়ে আমি একটু অবাক হই। চিঠিতে লেখা ছিল:

‘“ছুটির দিনে”তে আপনার লেখাটা পড়ে আমার মনে হলো—আপনি আমার অনেক দিনের চেনা। হয়তো আমরা একই গ্রামের মানুষ। প্রতিদিন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সকালে সূর্যোদয় এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখি। একই কুমারের জলে স্নান করি। একই কুমারের জলে সাঁতার কাটি। পূজা-পার্বণে একই জায়গায় আড়ং দেখি। বিসর্জন দেখি। একই মেলায় বাচ্চাদের খেলনা কিনি। অথচ আমরা কেউ কাউকে কখনো চোখে দেখিনি। এই না দেখার দূরত্বটুকু ঘোচাতে চাই। সে জন্য আপনার গ্রামের ঠিকানাটা দরকার। দয়া করে আপনার ঠিকানাটা আমাকে দেবেন।’

কিন্তু নিতান্ত অবহেলায় তখন ঠিকানাটা আমি পাঠাইনি। পত্রপ্রেরক হয়তো অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁর বাড়ি হয়তো কুমার নদের পাড়ের কোনো গ্রামে। তখন ঠিকানা না পাঠানোর কারণে এই ৭১ বছর বয়সেও আমার অনুতাপের অন্ত নেই।