Thank you for trying Sticky AMP!!

সন্তান পালনে আপনি অতিরিক্ত কঠোর কি না, যেভাবে বুঝবেন

সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করে বিপদ ডেকে আনছেন না তো? মডেল: ভুবন ও বর্ণ

সন্তানকে সুশিক্ষায় বড় করে তুলতে কিছুটা শাসন তো করতেই হয়, কিছু ক্ষেত্রে আচরণেও হতে হয় দৃঢ়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সেটি যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়ে যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ বলেন, অতিরিক্ত কড়া শাসনের বেড়াজালে বেড়ে ওঠা শিশু জেদি হয়ে ওঠে। তার মধ্যে রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। পরে তার আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিও হতে পারে। দুশ্চিন্তা কিংবা হতাশার মতো মানসিক সমস্যায়ও সে ভুগতে পারে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে তারা মা-বাবা, ভাই-বোন বা বন্ধুদের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্কও তৈরি করতে পারে না। এমনকি একপর্যায়ে নেশাগ্রস্তও হয়ে পড়তে পারে। তাই সন্তান পালনের ক্ষেত্রে আদরের সঙ্গে শাসনের ভারসাম্য রাখাটা খুবই জরুরি।

অভিভাবক হিসেবে আপনি অতিরিক্ত কঠোর কি না, সন্তানের মধ্যে নিচের পাঁচটি লক্ষণ দেখে তা বুঝতে পারবেন—

১. সহজভাবে কথা না বলা

স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে থাকা একটি শিশু যেকোনো বিষয় নিয়ে তার অভিভাবকের সঙ্গে সহজভাবে কথা বলবে। কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত কঠোর অভিভাবক হন, তাহলে শিশু নিজের মনের কথা মনেই চেপে রাখবে। তার হাসি-আনন্দের কথা, এমনকি তার কষ্টের কথাও মন খুলে আপনাকে বলতে পারবে না। কোনো কোনো বিষয়ে কথা বলার সময় তার ভঙ্গি এবং চাহনির পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন। এমনো হতে পারে, আপনি হঠাৎ এমন কোনো ঘটনা সম্পর্কে জানলেন, যা স্বাভাবিকভাবে তার আপনাকে বলার কথা ছিল, কিন্তু বিষয়টি সে গোপন করেছে কিংবা আংশিক বলেছে।

২. সিদ্ধান্ত নিতে না পারা

নিজের মতামত প্রকাশ করতে না পারলে দীর্ঘ মেয়াদে শিশুর ক্ষতি হয়

অনেক অভিভাবক শিশুর খাবার, পোশাক, পড়ার সময়, খেলাধুলার ধরন প্রভৃতির ওপর নিজের মতামত চাপিয়ে দেন। নিজের স্বপ্নের বোঝাও অনেকে চাপিয়ে দেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিজের মতামত প্রকাশ করতে না পারার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে শিশুর ওপর। তাই যদি দেখেন, কোনো বিষয়ে শিশু সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বা তার আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে বলে মনে হচ্ছে, তাহলে একবার ভেবে দেখুন তো তার এই পরিস্থিতির জন্য আপনিই দায়ী কি না।

Also Read: যে কারণে আপনার সন্তানকে অভাব কী, তা বোঝাবেন

৩. মানসিক চাপে থাকা

প্রত্যাশার চাপের কারণে শিশুর মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ভুল হলেই যদি থাকে বকুনি বা ধমকের দেন, তাহলে হয়তো সে তার কাজটুকু করতেই পারবে না। নিতান্ত সহজ কোনো কাজ করতে গিয়েও গলদঘর্ম হয়ে পড়বে। শিশুর মধ্যে ঘুমের সমস্যা, খাবারে অনীহা বা দুশ্চিন্তায় ভোগার মতো লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে, সে মানসিক চাপে আছে। মানসিক চাপের কারণে অনেক শিশু মাথাব্যথা বা পেটব্যথার মতো সমস্যায়ও ভোগে।

৪. সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া

যে বয়সে শিশুর খেলার কথা, সেই বয়সে যেন শিশু খেলাধুলা করে। মডেল: রাসিন ও রাজন

আপনার কড়া শাসন শিশুকে সামাজিকভাবে পিছিয়ে দিতে পারে। যদি আপনার শিশু তার বন্ধুদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় না কাটায় কিংবা তার বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে অংশ না নেয়, তাহলে বুঝতে হবে, কোনো একটি সমস্যা নিশ্চয়ই আছে। আপনার কোনো নেতিবাচক আচরণও এ জন্য দায়ী হতে পারে।

৫. বিদ্রোহের মনোভাব

বুঝতে শেখার বয়সে এসেও শিশু কোনো বিষয় নিয়ে ভীষণ জেদ কিংবা অবাধ্য আচরণ করলে বুঝতে হবে, তার মনের মধ্যে যা চলছে, সেটি তার জন্য একেবারেই ভালো না। আবার এমনও হতে পারে, শিশু হয়তো আপনার সামনে নিরীহভাবে সব কথা মেনে নিচ্ছে; কিন্তু আপনার চোখের আড়ালে গিয়ে সে তার খেয়ালখুশি মতো কাজ করছে। এগুলো সবই খারাপ লক্ষণ। তবে আপনার সঙ্গে মতের অমিল হলে শিশু আপনার সঙ্গে যুক্তিতর্কে যেতেই পারে। সেটি অস্বাভাবিক নয়।

Also Read: যে ৮টি কাজ আপনার ছেলেসন্তানকে ছোটবেলা থেকেই শেখাবেন

কী করবেন

শিশুর সঙ্গে মিশতে হবে সহজভাবে। মডেল: ললনা, ভুবন ও নেয়ামত

বুঝতেই পারছেন কড়া শাসন কেন ভালো নয়। তাই যেকোনো শিশুর প্রতি সহনশীল আচরণ করুন। সন্তানকে মানুষ করা নিশ্চয়ই আপনার দায়িত্ব। কিন্তু অবশ্যই তা তার মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে দিয়ে নয়। তাই সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ-আলোচনার জায়গা রাখুন সব সময়। মতামত প্রকাশের সুযোগ দিন। তার মতামতকে যতটা সম্ভব মূল্য দিন। ছোটবেলা থেকেই ছোটখাটো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাকে দিন। মনে রাখতে হবে, মানুষমাত্রই ভুল করে। আপনার সন্তানও ভুল করবে। পড়ালেখা, বন্ধুত্ব, ব্যক্তিগত সম্পর্ক—নানান ক্ষেত্রেই ভুল হবে। এগুলো নিয়ে উত্তেজিত হবেন না। তাকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। অন্য কেউ আপনার সন্তানের সামনে তার ফলাফল বা ক্রীতকর্মের জন্য তিরস্কার করে কথা বললে তাঁকেও চুপ করিয়ে দিন। সন্তানের অনুপস্থিতিতে কেউ এসব নিয়ে নেতিবাচক কথা বললে সেই কথায় প্রভাবিত হবেন না। জীবনটাকে সহজভাবে নিন। সন্তানের সামনেও জীবনকে সহজভাবে উপস্থাপন করুন। কথার তীক্ষ্ণতায় তার মনে দাগ না কেটে, প্রতিনিয়ত ভালোবাসা আর স্নেহ দিয়ে তাকে বড় করুন। ভবিষ্যতে সে অবশ্যই ‘মানুষ’ হবে, পরিবারের মূল্যবোধ বজায় রেখেই পথ চলবে। আর উল্লিখিত পাঁচ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই নিজের আচরণ শোধরানোর চেষ্টা করুন। আপনার প্রতি শিশুর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনুন।

সূত্র: ফেমিনা

Also Read: সন্তানকে শেখান এই আট বিষয়