Thank you for trying Sticky AMP!!

আইসোলেশনে থাকা মাকে ছুঁতে চাইতো মেয়ে

প্রায় এক মাস ভোগার পরে করোনা টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর তৌহিদুল ইসলামের পরিবার একত্র হয়ে এই ছবিটিই তোলে। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের চার সদস্যের তিনজনই সংক্রমিত হন করোনাভাইরাসে। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া জাহরা রাব্বী ইসলামের করোনা হয়নি। মা, বাবা, বড় বোন সংক্রমিত হয়ে আলাদা ঘরে চলে যায়। একা জাহরা খুব করে ছুঁতে চাইতো মাকে। কিন্তু এ যে এমনই এক ভাইরাস, সংক্রমিত হলে প্রিয়জনের সুরক্ষার জন্য শারীরিক দূরত্ব না রেখে উপায় নেই। তৌহিদুল ইসলাম ও নাঈমা ইসলাম দম্পতির পরিবার করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে প্রায় এক মাস ভুগেছেন। এখন তারা সবাই সুস্থ আছেন।

তৌহিদুল ইসলামের রোজার ঈদের দিন থেকেই শরীরটা ভালো লাগছিল না। করোনা টেস্ট করিয়ে নেন। জুনের ১ তারিখ জানতে পারেন তিনি সংক্রমিত। এরপর পরিবারের বাকিদের টেস্টও করান। তাতে স্ত্রী নাঈমা ইসলাম, বড় মেয়ে তানজিলা রাব্বী ইসলামেরও করোনা ধরা পড়ে। ছোট মেয়ে জাহরা রাব্বী ইসলাম এবং বাসার সহকারী মেয়ের নেগেটিভ আসে।

পেশায় ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শারীরিক সমস্যা খুব বেশি না থাকায় তাঁরা সবাই বাসাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তাঁর হালকা জ্বর ও পায়ে ব্যথা ছিল। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যাবোধ করেননি।

নাঈমা ইসলাম শোনান তাঁদের করোনাভাইরাসকে জয় করার গল্প। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় এক মাসের মতো সবাই সবার থেকে দূরে ছিলাম। আমরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা রুমে ছিলাম।

আমার ছোট মেয়ে ও আমাদের বাসার যে সহকারী আমাদের সঙ্গেই থাকে ওদের নেগেটিভ এসেছিল। তাই আমরা বাকি তিনজন আরও বেশি সতর্ক থেকেছি যাতে ওদের না হয়। সকালে পিপিই পরে দূরত্ব বজায় রেখে সহকারী মেয়েটাকে বলে দিতাম কী কী করতে হবে। প্রত্যেকের রুমের সামনে একটা টুল রাখা ছিল। সেখানে আমাদের খাবার রাখা হতো। প্রত্যেকে আলাদা টয়লেট ব্যবহার করেছি। যার যার কাপড়, ঘর নিজেদের পরিষ্কার করতে হয়েছে। দেখা সাক্ষাৎ বলতে দূর থেকে বা ভিডিও কলে হয়েছে। বাসায় দুজনের যেহেতু হয়নি তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল কোনোভাবেই যেন ওরা সংক্রমিত না হয়।

এই দম্পতি শারীরিকভাবে খুব বেশি কষ্ট না পেলেও একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মরত বড় মেয়ে তানজিলা রাব্বী ইসলামের শরীরটা খারাপ হতো। নাঈমা ইসলাম বলেন, ‘বড় মেয়ের মাঝে মাঝে রক্তচাপ কমে যেত। বুকে ব্যথা করত। আমরা বাইরে থেকেই চেষ্টা করতাম ওর পাশাপাশি থাকার। ওর রুমে ঢুকলেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছি। ওর পাশে যে আমরা আছি এটা ওকে বোঝাতে চাইতাম। তাঁর মানসিক শক্তি জোগানোর জন্য। আমরা বাবা-মা তো।’

করোনায় আলাদা থাকতে গেলে পরিবারের অন্য সদস্যরাও যে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সেটা বেশ ভালোই বুঝেছেন নাঈমা ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েটা খুব একা হয়ে গিয়েছিল। আমরা আইসোলেশন মেইনটেইন করতে গিয়ে নিজেরাই ব্যস্ত ছিলাম। ও খুব একা হয়ে পড়েছিল। আমরা যখন ভালোর দিকে তখন বুঝতে পারি যে আমার ওই মেয়েটা ভীষণ একাকিত্বে ভুগেছে। একদিন আমাকে বলল, আম্মু তোমাকে আমার খুব ছুঁতে ইচ্ছে করছে। সন্তান তো। দূরত্বটা যে কতটা কষ্টকর, ওর ওই কথাটায় আমি বুঝতে পেরেছি। ও একসময় বলেছে, তোমাকে ছুঁতে ইচ্ছে করছে, আমি কোনো কিছু মানব না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু রোগেই ভুগিনি, মানসিক চাপও নিয়েছি। খুব বাজে সময় গেছে।’

তৌহিদুল ইসলাম ১৭ দিন পরেই করোনা নেগেটিভ হন। কিন্তু নাঈমা ইসলাম ও তানজিলা রাব্বীর ১৪ দিন পরে আবারও পজিটিভ আসে। এরপরে আবার ১৪ দিনের জন্য মা-মেয়ে আইসোলেশনে থাকেন।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও এই সময়টায় খাবারের ব্যাপারে খুব মনোযোগী ছিল এই পরিবার। নাঈমা বলেন, ‘আমরা খাবারের ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলাম। স্যুপ, প্রচুর ফল খেয়েছি। কারণ অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা তেমন না হলেও ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। দেখা যেত বসে থাকলেও দুর্বলতায় ঘুম চলে আসত।’ তিনি বলেন, করোনা তাঁদের অনেক কিছুই শিখিয়েছে।